আজ শনিবার ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০ই ফাল্গুন ১৪৩১

ফিরে আসা ১৫ বম পরিবারের মাঝে সেনাবাহিনীর মানবিক সহায়তা

থানচি (বান্দরবান) প্রতিনিধি: | প্রকাশের সময় : শনিবার ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ০২:১৫:০০ অপরাহ্ন | পার্বত্য চট্টগ্রাম

সেনা সহায়তায় বান্দরবানের থানচিতে বাকলাই পাড়ায় ফিরে আসা ১৫টি বম পরিবারের মাঝে খাদ্য, মেডিকেল ও শিক্ষা মানবিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

দীর্ঘ ২৩ মাস পর সেনা সহায়তায় থানচি উপজেলার বাকলাই পাড়ার ১৫টি বম পরিবারের ৮১ জন সদস্য নিজেদের বাড়িতে ফিরেছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও রিজিয়ন কমান্ডার বান্দরবান রিজিয়ন এর সুচিন্তিত পদক্ষেপ এর মাধ্যমে তারা থানচি উপজেলা সদর ইউনিয়নের বাকলাই পাড়ায় পুনরায় স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য ফেরত আসেন।

ফেরত আশা এই পরিবারগুলোর মানবেতর জীবন যাপনের কথা মাথায় রেখে ৬৯ পদাতিক ব্রিগেড ও বান্দরবান রিজিয়নের অন্তর্গত ১৬ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট পাড়াবাসীদের নিজেদের পক্ষ হতে রেশন সহায়তার পাশাপাশি, প্রতি পরিবারকে ১০ কেজি চাল, ২ কেজি তেল, ২ কেজি ডাল, ১ কেজি লবণ, ২ কেজি আটা, এবং ২ কেজি চিনি প্রদান করেন। এছাড়া, পাড়ার বাসিন্দাদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী একটি মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করে, যেখানে সাধারণ চিকিৎসা, প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং ওষুধ বিতরণ করা হয়। 

অস্বাভাবিক পরিস্থিতির দরুন ভেঙে যাওয়ার শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুনরায় চালু করার জন্য কোমলমতি শিশুদের মাঝে শিক্ষা সহায়তাও প্রদান করা হয়েছে। সেনাবাহিনী শিক্ষাব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য পাড়ার শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপকরণ ও টিউশন সুবিধা প্রদান করেছে, যাতে তারা তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে। 

পরবর্তীতে সকল গ্রামবাসীর জন্য ক্যাম্পের পক্ষ থেকে মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করা হয়।

বিগত ২৩ সালে ৬ মার্চ, পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ কেএনএফ (কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট) এর নির্যাতন ও নিপীড়নের কারণে বাকলাই পাড়ার ২৮টি পরিবার বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে যায়। সেনা সহায়তায়, ২৮টি পরিবারের মধ্যে ১৫টি পরিবার তাদের নিজ বাড়িতে ফিরে এসেছে।

বাকলাই পাড়ার বর্তমান কারবারি লাল চম থাং বম (৬৮) বলেন, গত বছর কেএনএফ বাহিনীর নির্যাতন, হুমকি ও লুটপাটের দরুন আমরা দীর্ঘ ২৩ মাস বন ও জঙ্গলে ছিলাম। বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয়েছে। সেনাবাহিনী আমাদের বাসস্থান ফিরিয়ে দিয়েছে আমাদেরকে নতুন জীবন দিয়েছে। সেনাবাহিনীর সহায়তায় আমরা এবার স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সহায়তা পাচ্ছি, যা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

আরেক নারী বাসিন্দা সুমহেপন বম (৫০) জানান, দীর্ঘ সময় বনজঙ্গলে পালিয়ে খুব কষ্টে জীবন কাটাতে হয়েছে। বাড়িতে ফিরে এবং সেনাবাহিনীর সহায়তা পেয়ে আমাদের মনে শান্তি ফিরে এসেছে। এখন আমরা আশা করি আমাদের সন্তানরা শিক্ষার সুযোগ পাবে এবং স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান হবে।

১৬ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক এর পক্ষে বাকলাই সেনা সাব জোনের অধিনায়ক খাদ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসা সামগ্রী বিতরণ সময়ে জানান, বাকলাই পাড়া পাহাড়ি ও দুর্গম এলাকাতে অবস্থিত। তাই আমরা স্থানীয়দের নিরাপত্তা ও সহায়তার জন্য গোয়েন্দা নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছি এবং তাদের জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করছি। বর্তমানে আমরা শুধু রেশন, মেডিকেল সহায়তা ও শিক্ষা উপকরণই নয়, আরও অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজেও সাহায্য প্রদান করে যাচ্ছি।

এতদিন পর নিজেদের পাড়ায় ফিরে এসে এই পরিবারগুলোর জীবনে এক নতুন সূচনা হয়েছে, যেখানে তারা নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষা সহায়তা পেয়ে আরও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যেতে পারবেন।