পবিত্র রমজান মাস ঘিরে বিপুল পরিমাণ চিনি আমদানি করেছিল এস আলম সুপার রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। পরিশোধিত ও অপরিশোধিত এক লাখ মেট্রিক টন চিনি রাখা ছিল চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানা এলাকার এস আলম সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ চিনিকলে। সোমবার (৪ মার্চ) বিকালে এই চিনিকলে আগুন লাগে, যা চার ঘণ্টা ধরে জ্বলছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি স্টেশনের ১৫ ইউনিট। হিমশিম খাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এখনও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি তারা।
সোমবার (৪ মার্চ) রাত ৮টা পর্যন্ত আগুন জ্বলছিল। এর আগে বিকাল ৩টা ৫৩ মিনিটে কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্যারটেক এলাকায় অবস্থিত এই চিনিকলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
ইতোমধ্যে কী পরিমাণ চিনি পুড়ে গেছে, তা নিশ্চিতভাবে জানা যাবে আগুন নেভানোর পর। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনে লেগেছে বলে ধারণা করছেন চিনিকলটির কর্মকর্তারা।
পরিশোধিত ও অপরিশোধিত এক লাখ মেট্রিক টন চিনি মজুত ছিল চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানা এলাকার এস আলম সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ চিনিকলে
প্রতিষ্ঠানের এক নম্বর ইউনিটে আগুন লেগেছে জানিয়ে এস আলম গ্রুপের মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, ‘সেখানে এক লাখ মেট্রিক টনের মতো অপরিশোধিত চিনি ছিল। এর বাইরে আরও পরিশোধিত চিনি ছিল। এগুলো রমজানের জন্য ব্রাজিল থেকে আমদানি করা হয়েছিল। এখানে পরিশোধিত হয়ে মার্কেটে যাওয়ার কথা ছিল। সব মিলিয়ে কী পরিমাণ চিনি ছিল, তা এই মুহূর্তে নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। কারণ, চার লাখ মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার ইউনিট এটি। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি আমরা। তবে বিষয়টি আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে। আপাতত আর কিছু বলা যাচ্ছে না।’
সেখানে কী পরিমাণ চিনি ছিল জানতে চাইলে এস আলম গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার আকতার হোসেন বলেন, ‘সেখানে আমাদের প্রতিষ্ঠানের দুটি ইউনিট আছে। দুটি ইউনিটে পরিশোধিত এবং অপরিশোধিত দুই ধরনের চিনি থাকে। খাতাপত্র দেখে এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে জানাতে পারবো। কী পরিমাণ চিনি ছিল তখন জানা যাবে। সেইসঙ্গে এটিও নিশ্চিত হওয়া যাবে কী পরিমাণ পুড়ে গেছে। মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবো আমরা।’
চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক এমডি আবদুল মালেক বলেন, ‘বিকাল ৩টা ৫৩ মিনিটে এস আলম গ্রুপের চিনিকলের গোডাউনে আগুন লাগার খবর পাই আমরা। খবর পেয়ে আগ্রাবাদ, লামার বাজার, চন্দনপুরা, কর্ণফুলী ও কালুরঘাট স্টেশনের ১০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয় ফায়ার সার্ভিসের আরও পাঁচ ইউনিট। পুরো গোডাউনে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় এখনও নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। ১৫ ইউনিটকে আগুন নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। পাশাপাশি উদ্ধারকাজে যোগ দিয়েছে নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও কোস্টগার্ড। সবাই মিলে যৌথভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত হতাহতের কোনও ঘটনা ঘটেনি। কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে তাও জানা যায়নি।’
এদিকে, আগুন লাগা গোডাউনের পাশেই কর্ণফুলী নদী, সেখানে নোঙর করা আছে অনেক লাইটারেজ জাহাজ। কর্ণফুলী নদীতে অবস্থান নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের দুটি টাগবোট উদ্ধারকাজে অংশ নেয়। ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো কর্ণফুলী নদী থেকে পাইপের মাধ্যমে পানি নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘আগুন যাতে কর্ণফুলী নদীতে নোঙর করা জাহাজে ছড়াতে না পারে এবং নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করা যায়, সেজন্য ঘটনাস্থলে দুটি টাগবোট রয়েছে। বর্তমানে বন্দরের টাগবোট কান্ডারি-৪ ও কান্ডারি-১২ দুর্ঘটনাস্থলে থেকে ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করছে। এসব টাগবোট আগুন নেভানোর পাশাপাশি ঝুঁকিতে থাকা জাহাজ উদ্ধারেও সক্ষম।’