আজ শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

বান্দরবান ভ্রমণের সকল তথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ২৬ জানুয়ারী ২০২৩ ০৪:১৮:০০ অপরাহ্ন | পার্বত্য চট্টগ্রাম

নীলাচল বাংলাদেশের একটি পর্যটন কেন্দ্র বান্দরবান শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় দুই হাজার ফুট উচ্চতায় টাইগার পাড়ায় পাহাড়ের উপর অবস্থিত। নীলাচল থেকে পুরো বান্দরবান শহরকে দেখা যায়। মেঘমুক্ত আকাশ থাকলে দূরের কক্সবাজার সাগর সৈকত হাতছানী দেয় পর্যটকদের। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা রাস্তা সমানভাবে বিমোহিত করে পর্যটকদের। নীলাচলে বর্ষা, শরৎ আর হেমন্তকালে হাতের কাছে মেঘ খেলা করে।

ভ্রমণকাল : পর্যটকদের নীলাচলের রূপ অবলোকন করার সুবিধার জন্য এখানে রয়েছে কয়েকটি বিশ্রামাগার ও রিসোর্ট। নীলাচলে পর্যটকরা সাধারণত সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত থাকতে পারেন। পরবর্তীতে শুধুমাত্র যারা রিসোর্টে রাত্রি যাপন করেন তাদেরই থাকার অনুমতি মিলে। মেঘের দেখা পেতে চান তবে খুব সকালে যেতে হবে নীলাচল।

যাতায়াত :  ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে করে বান্দরবান যাওয়া যায়। ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে শ্যামলি, সৌদিয়া, এস. আলম, ইউনিক, সেন্ট মার্টিন পরিবহন ও হানিফ ইত্যাদি পরিবহনের বাস বান্দারবানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। জনপ্রতি এসব বাসের ভাড়া যথাক্রমে নন এসি ৫৫০ টাকা ও এসি ৯৫০ টাকা। রাত ৯-১০টায় রওনা দিলে সকাল ৭টার মধ্যে পৌঁছানো যাবে বান্দরবান। এছাড়া ট্রেন বা এয়ারে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম গিয়ে সেখান থেকে বান্দরবান যাওয়া যাবে। চট্টগ্রামের বদ্দারহাট থেকে পুবালি ও পূর্বানী নামের দুটি বাস বান্দারবানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এ দুটি বাসে জনপ্রতি ২২০ টাকা ভাড়া লাগে।

বান্দরবান শহর থেকে নীলাচল যাওয়ার জন্য সিএনজি, চাঁদের গাড়ি ও জীপ পাওয়া যায়। নীলাচলে অবস্থানের সময় অনুযায়ী অটো রিকশায় যাওয়া আসার জন্য ভাড়া লাগে ৫০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা আর, জীপ ৮০০-১২০০ টাকা আর চাঁদের গাড়ি ভাড়া করতে ১০০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা লাগে।

রাত্রিযাপন : নীলাচলে থাকতে চাইলে নীলাচল স্কেপ রিসোর্টের তিনটি কটেজে থাকা যাবে। প্রতিটি কটেজে দুইটি করে রুম আছে, প্রতি রুমের ভাড়া পড়বে ৩০০০ টাকা। নীলাচলে থাকতে চাইলে আগে থেকেই যোগাযোগ করে বুকিং দিয়ে রাখা ভালো। এছাড়া নীলাচল বান্দরবান শহরের কাছে বলেই বান্দরবান শহরের হোটেল ও রিসোর্ট গুলোতে থাকা যাবে। বান্দরবান থাকার জন্যে যে সকল হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে তার মধ্যে:

হোটেল হিল ভিউ বান্দরবান শহরের বাস স্ট্যান্ড এর পাশেই। ভাড়া ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা। হোটেল হিলটন বান্দরবান শহরের বাস স্ট্যান্ড এর কাছেই। ভাড়া ১২০০ থেকে ৩০০০ টাকা। হোটেল প্লাজা বাস স্ট্যান্ড থেকে ৫মিনিট হাঁটা দূরত্বে। ভাড়া ১০০০ থেকে ৩০০০ টাকা। রিভার ভিউ শহরের সাঙ্গু নদীর তীর ঘেষে হোটেলটির অবস্থান। ভাড়া ১০০০ থেকে ২০০০ টাকা। পর্যটন মোটেল পাহাড় ও লেকের পাশেই অবস্থিত। শহর থেকে ৪ কি:মি: দুরে মেঘলায় অবস্থিত। ভাড়া ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা।

ভোজন : নীলাচল স্কেপ রিসোর্টে রাত্রি যাপন করলে কর্তৃপক্ষ খাবারের ব্যবস্থা করে। ফরেস্ট হিল নামে শুধুমাত্র একটি রেস্তোরাঁ রয়েছে, এছাড়া খাবারের তেমন ভাল ব্যবস্থা নেই। বান্দরবান শহরে খাওয়ার জন্যে রয়েছে বেশি কিছু রেস্তোরা, তার মধ্যে তাজিং ডং ক্যাফে, মেঘদূত ক্যাফে, ফুড প্লেস রেস্তোরাঁ, রুপসী বাংলা রেস্তোরাঁ, রী সং সং, কলাপাতা রেস্তোরাঁ ইত্যাদি।

 

বান্দরবান থেকে জাদিপাই ঝর্ণা : বান্দরবান থেকে চান্দের গাড়ি, সিএনজি অটো রিক্সা বা বাসে করে করে রুমা যেতে হবে। রুমা বাজারে অবশ্যই বিকেল ৪ টার আগে পৌঁছাতে হবে। ৪ টার পরে সেনাবাহিনী আর কোন গাড়ি বগা লেকের উদ্দেশ্যে ছাড়তে দেয় না। রুমা থেকে চান্দের গাড়িতে করে বগালেক বা কেওক্রাডং পর্যন্ত যেতে পারবেন। কেওক্রাডং পর্বতের পূর্ব দিকের ঢাল বেয়ে ১০-১৫ মিনিট হাঁটলেই পাওয়া যাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত গ্রাম পাসিং পাড়া, যা প্রায় ৩০৬৫ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। পাসিং পাড়া থেকে যেতে হবে জলদিপাই পাড়া, এ পথটি বেশ খাঁড়া। সাথে লাঠি থাকলে পথ চলতে সুবিধা হবে। ৩০-৪০ মিনিট হাঁটার পরে জলদিপাই পাড়া পৌঁছানো যাবে। জলদিপাই পাড়া থেকে আরও প্রায় ৩০ মিনিট হাঁটার পরে পাওয়া যাবে জলদিপাই ঝর্ণা। প্রায় ২৫০ ফুট উঁচু এই ঝর্ণা। বান্দরবান থেকে রুমা পর্যন্ত বাস ভাড়া ১০০ টাকা এবং রুমা থেকে রুমা বাজার পর্যন্ত চান্দের গাড়ির ভাড়া জন প্রতি ৩০ টাকা। রুমা বাজার থেকে এরপরে চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করে যেতে হবে। এছাড়া বান্দরবান থেকে চাইলে গাড়ি রিজার্ভ করে নেওয়া যায়। চান্দের গাড়ির ভাড়া মৌসুম ভেদে কমবেশি হয়। উল্লেখ্য রুমা বাজার থেকে অবশ্যই একজন গাইড নিতে হবে। বাজারে গাইড সমিতি আছে সেখান গেলেই গাইড পাওয়া যাবে। দিন প্রতি তাদের সার্ভিস চার্জ ৫০০ টাকা। গাইড ছাড়া সেনাবাহিনী যাওয়ার অনুমতি দেয় না।

 

স্বর্ণ মন্দির : বুদ্ধ ধাতু জাদি যা বান্দরবন স্বর্ণ মন্দির নামে সুপরিচিত, বাংলাদেশের বান্দরবন শহরের বালাঘাটা এলাকায় অবস্থিত। ধাতু বলতে কোন পবিত্র ব্যক্তির ব্যবহৃত বস্তুকে বোঝায়। এই বৌদ্ধ মন্দিরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বুদ্ধ মূর্তি রয়েছে এবং এটি বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষা বড় হীনযান বৌদ্ধ মন্দির। ২০০০ সালে দক্ষিণ পূর্ব এশীয় ধাঁচে বার্মার স্থাপত্যবিদের তত্ত্বাবধানে মন্দিরটি নির্মিত হয়। এই পাহাড়ে একটি পুকুর আছে, নাম দেবতা পুকুর। দেবতা পুকুরটি সাড়ে ৩শত ফুট উচুতে হলে ও সব মৌসুমেই পানি থাকে। বৌদ্ধ ভানে-দের মতে, এটা দেবতার পুকুর তাই এখানে সব সময় পানি থাকে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি বান্দরবানের পর্যটন কেন্দ্র গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হল বুদ্ধ ধাতু জাদি ক্যাং। এই জাদিটি এখন শুধুমাত্র বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের তীর্থস্থানই নয় দেশি বিদেশি পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষনীয় স্পটে পরিণত হয়েছে। এটি স্বর্ণমন্দির নামে পরিচিত হলেও এটি স্বর্ণ নির্মিত নয়। মূলত সোনালী রঙের জন্যেই এটির নাম হয়েছে স্বর্ণমন্দির।

বান্দরবান থেকে শৈলপ্রপাত : বান্দরবান থেকে সিএনজি/জীপ/চান্দের গাড়ি করে শৈলপ্রপাত যাওয়া যাবে। শুধু শৈলপ্রপাত দেখতে গেলে যাওয়া আসা সহ খরচ পরবে ৫০০-৮০০ টাকা। তাছাড়া বান্দরবন থেকে রুমা বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত অটোতে গিয়ে বাসে করে শৈলপ্রপাত যাওয়া যাবে (ভাড়া ২০ টাকা)। এছাড়া চিম্বুক বা নীলগিরি গেলে যাওয়ার পথেই দেখতে পারবেন। সেভাবেই ভ্রমণ পরিকল্পনা করে নিতে পারেন। বান্দরবানে থাকার জন্যে বেশ কিছু হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে। বান্দরবান শহর ও তার আশেপাশেই হোটেল ও রিসোর্ট গুলোর অবস্থান। বান্দরবান থাকার জন্যে যে সকল হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে তার মধ্যে:

হোটেল হিল ভিউ: বান্দরবান শহরের বাস স্ট্যান্ড এর পাশেই। ভাড়া ৮০০ থেকে ২৫০০ টাকা।

হোটেল হিলটন: বান্দরবান শহরের বাস স্ট্যান্ড এর কাছেই। ভাড়া ৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা।

হোটেল প্লাজা: বাস স্ট্যান্ড থেকে ৫ মিনিট হাঁটা দূরত্বে। ভাড়া ৬০০ থেকে ৩০০০ টাকা।

রিভার ভিউ: শহরের সাঙ্গু নদীর তীর ঘেষে হোটেলটির অবস্থান। ভাড়া ৬০০ থেকে ২০০০ টাকা।

পর্যটন মোটেল: পাহাড় ও হ্রদের পাশেই অবস্থিত। শহর থেকে ৪ কি:মি: দুরে মেঘলায় অবস্থিত। ভাড়া ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা।