আজ শুক্রবার ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩রা কার্তিক ১৪৩১

আলীকদম সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে চুরি হওয়া গাছ উদ্ধারে র‍্যাব ও বন বিভাগের অভিযান: বিপুল পরিমান কাঠ উদ্ধার

এইচ এম সম্রাট, বান্দরবান : | প্রকাশের সময় : সোমবার ২০ মে ২০২৪ ০১:৪৬:০০ অপরাহ্ন | পার্বত্য চট্টগ্রাম

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার সরকারী সংরক্ষিত মাতামুহুরী বনাঞ্চল থেকে চুরি হওয়া মুল্যবান সেগুন কাঠ উদ্ধারে চকরিয়া অভিযান চালিয়েছে র‍্যাব ও বন বিভাগের একটি অভিযানিক দল। এসময় চুরি হওয়া বিপুল পরিমান মুল্যবান সেগুন কাঠ উদ্ধার করা হয়। তবে এসময় কাউকে আটক করতে পারেনি।

গতকাল রবিবার (১৯মে)দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মেহরাজ উদ্দিনের নেতৃত্বে  র‍্যাব ও বন বিভাগের লোকজন চকরিয়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডস্থ মগবাজার সংলগ্ন সালাম কাউন্সিলরের মালিকানাধীন একটি স'মিলে এই অভিযান পরিচালনা করে। এসময় স'মিল থেকে  ৮শ ঘনফুট মুল্যবান সেগুন কাঠ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত গাছ সাম্প্রতিক সময়ে আলিকদম তৈন রেঞ্জের আওতায় মাতামুহুরী সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে চুরি হওয়া কাঠ বলে শনাক্ত করেছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা। উদ্ধারকৃত কাঠ গুলো পাঁচটি ট্রাক যোগে লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। এখনো বিপুল পরিমান চুরি হওয়া কাঠ চোরাই কারবারীদের কাছে রয়েছে।

তবে চোরাই কাঠ উদ্ধার হলেও কোন এক অদৃশ্য শক্তির ইশারায় এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে লামা  আলিকদম মাতামুহুরী এবং সাঙ্গু সরকারী সংরক্ষিত বনাঞ্চল উজাড় করার মুল হোতা চকরিয়ার কুতুব উদ্দীন সওদাগর ও তার সিন্ডিকেট।

জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে আলিকদমের তৈন রেঞ্জ কর্মকর্তা জুলফিকার আলীর প্রত্যক্ষ যোগ সাজশে মাতামুহুরী সরকারী সংরক্ষিত বনাঞ্চলের আওতায় চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের  কাঁকড়ারঝিরি ও দপ্রুঝিরি এলাকা থেকে প্রায় অর্ধশত বয়সী প্রায় তিন কোটি টাকার সেগুন গাছ কেটে নিয়ে যায় চকরিয়ার হাজিয়াল এলাকার বাসিন্দা কুতুব উদ্দীন সওদাগর ও তার সিন্ডিকেট। 

সরকারী সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে চুরি করে গাছ বিক্রির ঘটনা জানাজানি হলে লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয় হতে তিন সদস্যসের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সিনিয়র বন কর্মকর্তা হাবিব উল্লাকে আহ্বায়ক, লামার সদর রেঞ্জ কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব এবং ডলুছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তাকে সদস্য করা হয়। এই কমিটিকে সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।

এদিকে বান্দরবানের আলীকদমে তৈন রেঞ্জ এর আওতাধীন সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা কর্তৃক তিন শতাধিক সেগুন গাছ অবৈধ উপায়ে বিক্রি করে তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। গত বৃহস্পতিবার (১৬ মে) বেলা ১১টায় বন বিভাগের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-বন সংরক্ষক মোহাম্মদ হোছাইন এর নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের তদন্ত টিম আলীকদম উপজেলার চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের তৈন রেঞ্জের কাঁকড়ারঝিরি ও দপ্রুঝিরির আশপাশের বনাঞ্চল ঘুরে দেখেন এবং গাছ চুরির প্রমাণও পেয়েছে। তদন্তকালে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় তৎক্ষনিক তৈন রেঞ্জ কর্মকর্তা জুলফিকার আলী এবং বিট কর্মকর্তা মোজাম্মেল হককে ক্লোজড এবং বাগান মালি অলক বাবুকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছে,চকরিয়ার হাজিয়াল এলাকার বাসিন্দা কুতুব উদ্দীন সওদাগরের নেতৃেত্বে রয়েছে সাঙ্গু ও মাতামুহুরী সরকারী সংরক্ষিত বনাঞ্চাল থেকে গাছ চোরাকারবারীর বিশাল এক সিন্ডিকেট। বন বিভাগের কথিপয় অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় এই সিন্ডিকেটের কালো থাবায় সাঙ্গু ও মাতামুহুরী সরকারী সংরক্ষিত বনাঞ্চল আজ বিরান ভুমিতে পরিনত হয়েছে। তাদের দাবী কুতুব উদ্দীন সওদাগরসহ বন খেকোদের আইনের আওতায় আনতে না পারলে আরো উজাড় হবে সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং বিপন্ন হবে জীব বৈচিত্র।

এব্যপারে লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আরিফুল হক বেলাল বলেন, সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে গাছ চুরি ও পাচারের ঘটনা জানতে পেরে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। এই চুরির ঘটনায় ৫টি মামলা প্রক্রিয়াধীন। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পরই জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।