চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নামকরণ করা হয়েছিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। পুরোপুরি যানচলাচলে সক্ষম না হলেও তড়িঘড়ি করে গত বছরের ১৪ নভেম্বর প্রকল্পটির উদ্বোধন করেছিলেন অভ্যুত্থানে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উদ্বোধনের পর এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো অফিসিয়ালি যানচলাচল শুরু হয়নি। এমনকি উড়ালসড়কটি দিয়ে যানচলাচলে টোলহারও নির্ধারণ করতে পারেনি প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অনেকটা তাক লাগাতে তড়িঘড়ি করে সড়কটিসহ বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
এর আগে গত বছরের ২৪ আগস্ট সিডিএর ৪৫৮তম বোর্ড সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটির নামকরণ হয় এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে।
ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন হয়। এরপর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হয়। তবে এটির নাম পরিবর্তনের বিষয়ে এখনো উদাসীন সিডিএ।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, উড়ালসড়কটি এখনো অফিসিয়ালি চালু হয়নি। এটি টোলহারও নির্ধারণ হয়নি। তবে এটির নাম পরিবর্তনের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যদিও বিষয়টি দেখে সিডিএর প্রশাসন বিভাগ।
এদিকে, অফিসিয়ালি শুরু না হলে উড়ালসড়কটির দুই লেনেই বর্তমানে যানচলাচল করছে। দিনের পাশাপাশি রাতেও চালু থাকে উড়ালসড়কটি। তবে রাতে গাড়ি কম থাকায় ভীতিকর রেসে মেতে উঠেন কিছু মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারচালক। পাশাপাশি রাতে এক্সপ্রেসওয়েটির যে অংশে চট্টগ্রাম বন্দর দেখা যায় সেটিতে ফটোসেশন করতে দাঁড়ান বেশিরভাগই। যদিও এক্সপ্রেসওয়েটিতে আইনশৃঙ্খলা কিংবা ট্রাফিকের বিষয় দেখতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশকে (সিএমপি) অবহিত করা হয়নি।
তবে শিগগিরই বিষয়টি চিঠি দিয়ে সিএমপিকে অবহিত করা হবে বলে জানিয়ে চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুয়েকদিনের মধ্যেই চিঠি দেওয়া হবে। টোলহার নির্ধারণ না হলেও এটি দিয়ে যানচলাচল শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম মূল শহর থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাতায়াত নির্বিঘ্ন করা, শহরের যানজট কমিয়ে আনার পাশাপাশি যাত্রাপথের দূরত্ব কমাতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিডিএ। ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। তবে ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি এর নির্মাণকাজের উদ্বোধন হয়। প্রথমে ২০২০ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য ধরা হয়।
এরপর বিভিন্ন সময় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে তা ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। তবে সবশেষ সিডিএর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কাজের সময় আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এছাড়া ১ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৪ হাজার ৩৬৯ কোটি সাত লাখ ১০ হাজার ৮১৯ টাকা।