বান্দরবানের লামায় ১১ জুন (শনিবার) সরই ইউনিয়নের কোয়ান্টামম মসজিদ কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ তাহফিজুল কোরআন সংস্থা কর্তৃক আয়োজিত ২০২২-এর হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় শাহ ইমাম গাজ্জালী (রহ.) হেফজখানা পুটিবিলা’র দুজন পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দেয়া হয়।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক ইসলামিক স্কলার ও গ্লোবাল ফিল্যানথ্রপিক প্ল্যানেট (জিপিপি) ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ মুহিউদ্দিন (মাহি)। মাহফিলে সরই ইউনিয়নের স্থানীয়রা ছাড়াও শাহ ইমাম গাজ্জালী (রহ.) হেফজখানা পুটিবিলা’র শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
ড. মুহিউদ্দিন তার বক্তব্যে বলেন, ‘আল্লাহ মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত—সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। তাকে ভাষাগত জ্ঞান দিয়েছেন। আরো দিয়েছেন ভালো-মন্দ বিচার করার সক্ষমতা। আমরা জানি, সকল জ্ঞানের উৎস হচ্ছে ঐশীগ্রন্থ কোরআন। তাই শুধু কোরআন তেলাওয়াতের মধ্যে থাকলে হবে না, কোরআনকে অনুধাবন করতে হবে আমাদের। তাহলে আমরা বুঝতে পারব, একজন মানুষ সঠিক পথ তখন পাবেন যখন তিনি আত্মশুদ্ধি এবং বুদ্ধিবৃত্তিক উভয় চর্চার মধ্য দিয়ে যাবেন। কোয়ান্টামে এসে আমি এই সঠিক চর্চার প্রতিফলন লক্ষ্য করছি। কোয়ান্টামের প্রতিষ্ঠাতা গুরুজী শহীদ আল বোখারী মহাজাতক ধ্যানের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি এবং সামাজিক সেবামূলক কাজের মাধ্যমে সৃষ্টির সেবা করে যাচ্ছেন। এই দুটির সমন্বয় এখানে আছে বলে এখানে শান্তি বিরাজ করছে। আর আলেমদের সম্মানার্থে এমন সুন্দর আয়োজন করার জন্যে আমি কোয়ান্টামকে ধন্যবাদ জানাই।’
দেশব্যাপী আয়োজিত আন্তর্জাতিক মানের এই হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় শাহ ইমাম গাজ্জালী রহ. হেফজখানা পুটিবিলার শিক্ষার্থী হাফেজ রাশেদুল ইসলাম প্রথম গ্রুপে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হওয়ায় সম্মাননা পুরস্কার হিসেবে ৫ হাজার টাকা এবং হাফেজ মুহাম্মদ রাকীব হোছেনকে দ্বিতীয় গ্রুপে তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হওয়ায় ৩ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। এই সম্মান অর্জন করার জন্যে তাদের নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক হাফেজ মাওলানা নাজিম উদ্দিনকে ১০ হাজার টাকা প্রদান করে কোয়ান্টামম মসজিদ কমপ্লেক্সের কর্তৃপক্ষ।
উক্ত মাহফিলে আলোচক ছিলেন আধুনগর ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবু মুসা মুহাম্মদ খালেদ জমীল। তিনি ‘তোমাদের মধ্যে সে-ই উত্তম যে পবিত্র কোরআনের শিক্ষা নিজে গ্রহণ করে এবং অন্যকে শিক্ষা দান করে’ এই বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন। লোহাগাড়ার পুটিবিলার চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন মানিক এবং লামার সরই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইদ্রিছ কোং হাফেজ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন কোয়ান্টাম কসমো কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এস এম সাজ্জাদ হোসেন। মসজিদের পরিচালনা পর্ষদের সহ-সভাপতি মাওলানা মুসতাফা মুনীরুদ্দীন অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত সুধী ও আগত মেহমানদের নিয়ে শিক্ষার্থীদের সার্বিক কল্যাণ কামনায় দোয়া পরিচালনা করেন। আগত অতিথিদের প্রত্যেককে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন কোয়ান্টামম মসজিদ কমপ্লেক্সের সভাপতি আবদুল্লাহ জুবাইর।
উল্লেখ্য, শাহ ইমাম গাজ্জালী রহ. হেফজখানা পুটিবিলা সরই ইউনিয়নের কোয়ান্টামম মসজিদ কমপ্লেক্স নিকটবর্তী এলাকায় অবস্থিত। গত ৬ বছর ধরে কোয়ান্টামম মসজিদ কমপ্লেক্স এই হেফজখানার খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করছে। এবছর ১৫ ফেব্রুয়ারি ৪২ তম হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় আন্তর্জাতিক মানের বিচারকমন্ডলীর উপস্থিতিতে সারাদেশ থেকে ১৫০০ প্রতিষ্ঠানের আড়াই হাজারের বেশি প্রতিযোগীর মধ্যে প্রত্যন্ত এলাকার এই দুই শিক্ষার্থী বিরল সম্মান অর্জন করেন। তাদের সম্মানার্থে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।