পার্বত্য বান্দরবানে এই বর্ষা মৌসুমে বাজার গুলোতে পাহাড়ি সবজি বিক্রেতাদের বিভিন্ন সবজির মধ্যে প্রধান সবজি হিসেবে বিক্রি করছেন বাঁশ কোড়ল।
বাঁশ কুড়াল নাম তিন পার্বত্য জেলা ১২ টি জনগোষ্ঠির কাছে ভিন্ন রকমের নামের প্রচলিত রয়েছে। তার মধ্যে মারমা ভাষায় এটি বলে "মহ্ই ", চাকমা ভাষায় "বাচ্ছুরি", ত্রিপুরা ভাষায় "মেওয়া", বম ভাষায় “সানত্তাল” খুমি ভাষায় “আন্তৈ” ও বাংলা ভাষায় "বাঁশ কোড়ল"।
মূলত বাঁশ গাছের গোড়ার কচি অংশকে বাঁশ কোড়ল বলে পরিচিত সবার কাছে,যা মূলত পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের সবজির তালিকায় পছন্দের একটি সবজি হিসেবে খাওয়া হয়।
বাশঁ কোড়ল পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী নানা সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে একেক নামে পরিচিত, মারমাদের কাছে ‘মহ্ই’ আবার চাকমাদের কাছে ‘বাচ্ছুরি’, আর ত্রিপুরাদের কাছে ‘মেওয়া’ নামে ডাকা হয়। পার্বত্য অঞ্চলে বিশেষ করে বর্ষাকালে এই সবজিটি বাজারে বেশি পরিমাণে দেখা যায়।
বান্দরবান বাজারের পাহাড়ি সবজি বিক্রেতাদের হ্লা অং মার্মা"র সাথে কথা বলে যানা যায়, সব বাঁশের কোড়ল খাওয়া যায় না। যেগুলো খাওয়া যায়, তার মধ্যে মুলি বাঁশ, ডলু বাঁশ, মিতিংগ্যা বাঁশ, ফারুয়া বাঁশ, বাজ্জে বাঁশ, ও কালিছুরি জাতের বাঁশের কোড়ল খেতে বেশ সুস্বাদু।
পার্বত্য বান্দরবান জেলাসহ তিন পার্বত্য জেলার পাহাড়ীজন-গোষ্ঠি সম্প্রদায়ের অন্যতম জনপ্রিয় সুস্বাদু খাবার ‘বাঁশ কোড়ল’। পাহাড়ের গহিনে প্রায় সব স্থানেই মেলে এ সবজি। বর্তমানে পাহাড়ী জন-গোষ্ঠিদের পাশাপাশি অনেক বাঙ্গালিদেরও জনপ্রিয় একটি খাবারে পরিণত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে জেলার পাহাড়ি এলাকার গহিনে প্রাকৃতিক ভাবে জন্ম নেওয়া বাঁশ ও ব্যক্তিগত বাগানে বাঁশ জন্ম নেয়। এসব বাঁশ পরিণত হওয়ার আগেই স্থানীয় পাহাড়িরা বাঁশ গাছের গোড়ার কচি অংশ সংগ্রহ করে তা প্রতিদিন স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে আসে।
জানা গেছে, বছরের মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এ সবজির ভরা মৌসুম থাকে। মুলি বাঁশ, ডলু বাঁশ, মিতিঙ্গ্যা বাঁশ, ফারুয়া বাঁশ, বাজ্জে বাঁশ, কালিছুরি বাঁশসহ বেশ কয়েক প্রজাতির বাঁশ কোড়ল পাওয়া যায় স্থানীয় বাজার গুলোতে। প্রত্যন্ত এলাকার দরিদ্র কিছু মানুষ এই বাঁশ করুল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
বর্ষার শুরুতে বৃষ্টির পানিতে মাটি নরম হলে এটি বাড়তে শুরু করে। মাটি হতে ৪-৫ ইঞ্চি গজিয়ে উঠলে এটি খাওয়ার উপযোগী হয়। জাতের ভিন্নতার সাথে সাথে বাঁশ কোড়লের স্বাদেও ভিন্নতা আছে বলে জানা যায়। বান্দরবান মগ বাজার এলাকায় সবজি বিক্রেতা মং মং মার্মা জানান, মুলি বাঁশ কোড়ল সবচেয়ে সুস্বাদু হওয়ায় সবার কাছে এটি জনপ্রিয়তা বেশি তবে দামের ক্ষেত্রে সব গুলো একই রাখা হয়।
বর্ষা মৌসুমে প্রতিদিন সকাল বিকেল জেলা ও উপজেলা শহরের মগ বাজার, বালাঘাটা বাজার, কালাঘাটা বাজারসহ বিভিন্ন স্থানীয় হাটবাজারে বাঁশ কোড়ল নিয়ে যান স্থানীয় পাহাড়ীরা। বাঁশ কোড়ল বিক্রেতা চিংম্রা সাং মার্মা(৪৭) তিনি বলেন, প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে বাঁশ কোড়ল আহরণ করে বিকালে বাজারে বিক্রি করতে আসেন কখনো ৪শত কখনো ৫-৬শত টাকার বাঁশ কোড়ল বিক্রি করেন সেই টাকা দিয়ে পরিবারের জন্য চাউলসহ প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে নিয়ে যান। প্রতিবছর মে মাস থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৬ জনের পরিবার বাঁশ কোড়ল বিক্রির আয়ের টাকায় পরিবার চলে বলে জানান তিনি।
প্রতি ভাগ এক ভাগে ৮-১০টি বাঁশ কোড়ল বিক্রি করা হয় প্রথম যখন বাজারে উঠে বাঁশ কোড়ল প্রতিভাগ ৮০-১০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়, তারপর ধীরে ধীরে কমতে থাকে দাম এখন প্রতিভাগে ৮-১০টি বাঁশ কোড়ল ৩০টাকায় বিক্রি হচ্ছে । তবে চাহিদা অনুযায়ী এর দাম কম-বেশি হতে পারে। এছাড়াও পাহাড়ি স্থানীয় হোটেল ও রেস্টুরেন্ট গুলোতেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে এ সবজি।
পার্বত্যাঞ্চলে ঘুরতে আসা অনেক পর্যটকদেরও এখন অন্যতম আকর্ষণ পাহাড়ি এই সবজির প্রতি। এই বাঁশ কোড়ল সবজি প্রথমে সিদ্ধ করে ভাজি, ভুনা, ডাল এর সাথে মিশিয়ে, মুরগী মাংসের সাথে মিশিয়ে নানাভাবে সুস্বাদু তরকারি তৈরি করে খাওয়া যায়। পাহাড়ি সবজি বিক্রতা মং মং জানান, এ সবজি বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন অনেক পাহাড়ি যা তাদের পরিবারের আর্থিক অসুবিধা লাঘবে সাহায্য করে।
প্রতিদিন বিকেল বেলা সরেজমিনে দেখা মিলবে জেলা সদরের বালাঘাটা বাজার, কালাঘাটা বাজার ও মগ বাজার এলাকায় এই বর্ষা মৌসুমে রাস্তার পাশেই বসে পাহাড়ি নারী ও পুরুষ সবজি বিক্রেতাদের সামনে সারি সারি ভাবে সাজানো আছে পাহাড়ি বাঁশ কোড়ল।