বর্ষার ভারী বৃষ্টির সময় কর্ণফূলী ও হালদার জোয়ারের পানির স্রোতে ছয়মাস মাস আগে এলজিইডির তালিকাভুক্ত সড়কের একটি স্থানে প্রায় ৪০০ মিটার অংশ ভেঙ্গে জমির সঙ্গে মিশে গিয়ে যায়। সড়কটির স্থানে স্থানে আরও অন্তত ২০০ মিটার অংশেও একই অবস্থা হয়। এ অবস্থায় সড়কটি দিয়ে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। এমনি হেঁটে চলাচল করতেও পারছিলেন না এলাকার বাসিন্দারা। গত ছয়মাস গাছের গুড়ি এবং বাঁশের সাঁকো বানিয়ে সাত গ্রামের ১০ হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগে চলাচল করলেও সড়ক সংস্কার করে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে কোন পদক্ষেপ নেয়নি স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) বা স্থানীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ। ফলে ¯কুল, কলেজ, মাদ্রাসা শিক্ষার্থী, নারী শিশুরা ঝুঁকি নিয়ে গ্রামে আসা যাওয়া করছে এ বাঁশের সাঁকো দিয়েই।
সড়কটি অবস্থিত চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সামমাহালদারপাড়া-মোকামীপাড়া-ছামিদর কোয়াং সংযোগ সড়ক। গত এপ্রিলের শুরুর দিকে টানা বৃষ্টি ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নদীর পানির স্রোতে সড়কের একাধিক অংশ ধসে পড়েছিল। পরে বন্যায় আরও অন্তত চার পাঁচ স্থানে ভেঙে খাদ হয়ে যায়। ফলে সাঁকো তৈরী বাসিন্দারা নিজ উদ্যোগে গাড়ির বদলে হেঁটে চলাচল করছে ঝুঁকিতে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতিবছর বর্ষা এলেই পাঁচ থেকে সাতবার ভাঙ্গে দুই কিলোমিটার সড়কটি। যাতায়াতের সুবিধার্থে প্রতিবছরই এলাকার কিছুু তরুণ স্বেচ্ছাশ্রমে সড়কটি সংস্কার করেন। অন্তত ১০ বছর ধরে এভাবে চলে আসছে গ্রামবাসির উদ্যোগে সড়ক সংস্কার।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, সড়কটির যে ৪০০ মিটার মোকামীপাড়া অংশটি ধসে পড়েছে। এর মধ্যে সড়কটির সামমাহালদার পাড়া, ছামিদর কোয়াং তিন গ্রামের আর পাঁচটি স্থানে সড়ক ধসে একেবারে পাশের জমির সঙ্গে মিশে গেছে, সড়কের কোনো অস্তিত্বই নেই।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বর্ষায় ভারি বৃষ্টি হলে গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া হালদা নদীর পানি ৬ থেকে ৮ ফুট বেড়ে যায়। এ সময় স্রোতের তোড়ে সড়কটির বেহাল দশা হয়। সড়কটি আরও ৩ থেকে ৪ ফুট উঁচু করে দুপাশে নিরাপত্তা দেয়াল দেওয়ার দাবি জানান বাসিন্দারা।
মোকামীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তাঁদের এই সড়ক দিয়ে প্রায় সাত গ্রামের ১০ হাজার মানুষের চলাচল রয়েছে। এলাকাবাসী সড়কটি টেকসই করে নির্মাণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে এলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ভাঙ্গা সড়কের কারণে গ্রামবাসীকে বছরের প্রায় ছয় মাস অনেকটা অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকতে হয়।
ছয় বছর ধরে সড়কটি সংস্কারের সঙ্গে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবীদের একজন স্থানীয় তরুণ এস এম কায়সার হামিদ। তিনি বলেন, তাঁরা ১৫ থেকে ২০ জন তরুণ চাঁদা তুলে সড়কটি বারবার মেরামত করে আসছেন। তবে গ্রামটি নদীতীরবর্তী হওয়ায় বর্ষায় প্রায়ই নদীর পানি ঢুুকে পড়ে সড়কটি ভেঙে যায়। নদীর তীরে বেড়িবাঁধ থাকলে এ সমস্যা থাকত না।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী আবুল কালাম বলেন, আমরা বন্যার পর সড়কটি পরিদর্শন করেছি। এটি আরসিসি ঢালাই এবং নিরাপত্তা দেয়াল নির্মাণের জন্য এলজিইডির সদর দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ এলে দ্রুত কাজ করা হবে।
রাউজান উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা অংগ্যজাই মারমা বলেন, বন্যায় এ উপজেলায় সড়ক যোগাযোগসহ ৮৩ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। এরমধ্যে নোয়াপাড়া ইউনিয়নের সড়কযোগাযোগ ব্যবস্থার বেশী ক্ষতি হয়েছে। মোকামী পাড়া সড়ক নির্মাণের বরাদ্দ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা হবে।