বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর খাগড়াছড়ির অধিকাংশ স্টিল পাটাতনের বেইলী সেতু সরিয়ে নির্মাণ করা হয় পাকা স্থায়ী সেতু। এই ৪২টি স্থায়ী সেতু নির্মাণের ফলে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে খাগড়াছড়ির সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায়। প্রধান প্রকৌশলী এ, কে, এম, মনির হোসেন পাঠান স্বাক্ষরিত চিঠিতে এই তথ্য জানানো হয়, শুধুমাত্র খাগড়াছড়ি জেলায় নির্মিত ৪২টি সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২’শ ৩৮ কোটি টাকা। তিনি জানান, আগামী সোমবার ৭ ই নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি একযোগে সেতুগুলো উদ্বোধন করবেন। এদিকে এই কর্মসূচিকে সামনে রেখে খাগড়াছড়ি সরকারি হাইস্কুল মাঠে নেয়া হচ্ছে ব্যাপক প্রস্তুতি। বিশালাকার এলইডি স্ক্রিন বসিয়ে মাঠজুড়ে জমায়েতে যোগ দেয়া মানুষরা যাতে বহুল প্রত্যাশিত সেতু উদ্বোধন উপভোগ করতে পারেন, সেজন্য নেয়া হচ্ছে বাড়তি প্রস্তুতি। সড়ক বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ‘খাগড়াছড়ির জেলার বিভিন্ন সড়কে পিসি গার্ডার সেতু, আরসিসি সেতু ও আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্প”র আওতায় প্রায় ২শ ৩৮ কোটি ২৪ লাখ টাকায় ৪২টি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এরমধ্যে দীর্ঘ সেতুটি হচ্ছে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা-বাবুছড়া-লোগাং-পানছড়ি সড়কের লোগাং সেতু। ১৪৩ দশমিক ০৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১১ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা। এরপরের দীর্ঘতম মানিকছড়ি-লক্ষ্মীছড়ি সড়কে ১০০মিটার ধুরুং খাল সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা। খাগড়াছড়ি সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ’র সাধারণ সম্পাদক বিশ^জিত রায়দাশ বলেন, দীর্ঘবছর আমরা ঝুঁকিপূর্ণ সড়কে যানবাহন চালিয়েছি। এতে সড়ক দুর্ঘটনায় বহু হতাহতের ঘটনাও আছে। অস্থায়ী সেতুর পাটাতনে ভেঙ্গে গাড়ি আটকে যান চলাচলে বিঘœ ঘটতো। এখন সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। যে কয়টা ঝুকিপূর্ণ ছিল সেগুলোও স্থায়ী সেতুতে রুপ পেলো। খাগড়াছড়ির সড়ক যোগাযোগে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে। পানছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সা. সম্পাদক বিজয় কুমার দেব বলেন, আগে খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কে অধিকাংশ সড়কে অস্থায়ী বেইলী সেতুই ছিল। সেতুর পাটাতন খুলে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটতো। মেরামত করে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে কখনো কখনো এক থেকে দুইদিন লাগতো। স্থানীয়দের কৃষিপণ্য পরিবহন, অসুস্থ রোগী পরিবহনসহ সাধারণ জীবনযাত্রা বাধাগস্ত হতো। তবে এখন এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়েছেন উপজেলার বাসিন্দারা। খাগড়াছড়ি চেম্বার অব কমার্স’র সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী বলেন, খাগড়াছড়ি কৃষিনির্ভর এলাকা। এখানকার উৎপাদিত কৃষি পণ্য সারাদেশে সরবরাহ করা হয়। স্থায়ী সেতু হওয়ায় এখন ব্যবসায়ীরা দ্রুত পণ্য পরিবহন করতে পারবে। এটা জেলার আর্থ-ামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভুমিকা রাখবে। প্রধানমন্ত্রী খাগড়াছড়িতে ভার্চুয়ালি জনগণের মাঝে উপস্থিত থাকবেন , তিন পার্বত্য চট্টগ্রামের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সারাদেশের মত খাগড়াছড়িতেও সড়ক যোগাযোগে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। তৎকালীন বেইলী সেতু দিয়ে সড়কে যান চলাচল করতে কখন যাত্রীসহ সেতু ভেঙ্গে যায় এই ভয়ে আমরা আতংকে থাকতাম। এখন জেলা-উপজেলার সাথে একদম নিরাপদ নিরবিচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ সৃষ্টি হয়েছে। খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা জানান, ১৯৯৭ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবার ক্ষ্মমতায় আসার পর থেকেই পাহাড়ের উন্নয়নে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছেন। তিনি পাহাড়ের মানুষকে সমতলের মানুষের সাথে যাতে টিকে থাকার সক্ষমতা অর্জন করতে পারে সেজন্য শিক্ষা-কৃষি-চিকিৎসা-স্বাস্থ্য-জনস্বাস্থ্য এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে পার্বত্য চ্টগ্রামকে বিশেষ অগ্রাধিকার প্রদান করেছেন। উল্লেখ্য, এর আগে ১শ ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে জেলায় আরো ১৮টি স্থায়ী সেতু নির্মাণের ফলে খাগড়াছড়ি-ঢাকা ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। বান্দরবান সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোসলেহ্উদ্দীন চৌধুরী বলেন, ‘সড়কটি মোট ২০ কিলোমিটারের। এরইমধ্যে ষোল কিলোমিটার সম্পন্ন হয়েছে। বাকি চার কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কাজও দ্রুত গতিতে চলমান রয়েছে। সেতুসহ সংযোগ সড়কটির ফলে পাহাড় এবং সমতল ভূমির মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরি হয়েছে। দুপারের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সেতুটি পর্যটন শিল্পেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। সড়কটি দিয়ে কক্সবাজার থেকে সহজে থানচি এবং বান্দরবান জেলা সদরে চলাচল করতে পারবে।’ মোহাম্মদ মোসলেহ্উদ্দীন চৌধুরী আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে সেতুটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে সেতুটি উদ্বোধনের কথা আছে।’