বান্দরবানের লামা পৌরসভার কলেজ গেট পাড়ার বাসিন্দা আবুল হাসেম ও তার ছেলে-মেয়ে সহ সংঘবদ্ধ একটি চক্রের বিরুদ্ধে ফিল্মি স্টাইলে টিনের ঘর নির্মাণ করে ফরিদ আহমদ ও এরশাদ উল্লাহ নামের দুই সহোদরের জমি জবর দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে পৌরসভা এলাকার সরকারী মাতামুহুরী কলেজের উত্তর পাশে। একটি মামলায় আদালত এরশাদ উল্লাহ ও ফরিদ আহমদকে কারাগারে প্রেরণের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এ ঘটনা ঘটায় আবুল হাসেমরা। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে এরশাদ উল্লাহর স্ত্রী বাদী হয়ে আবুল হাসেম সহ ৪০-৫০ জনের বিরুদ্ধে লামা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে উল্লেখিত অভিযুক্তরা হলেন- একই এলাকার মৃত হাকিম আলীর ছেলে আবুল হাসেম, আবুল হাসেমের ছেলে মো. লিটন, সরোয়ার, মো. কায়সার, মো. সেলিম, মো. ছোটন, গুরা মিয়া ও মেয়ে শাহিনা আক্তার। জমি দখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন মুহুর্তে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
অভিযোগে জানা যায়, ২৯৩নং ছাগল খাইয়া মৌজার জি/১৩৭নং হোল্ডিং মূলে ৬০ শতক, ৯১নং হোল্ডিং এর ১৪৫নং খতিয়ানের ২৭৯২ দাগ মূলে ৬০শতক ও ২৭৯৬নং দাগ মূলে ৭০ শতক মো. এরশাদ উল্লাহ ও ফরিদ আহমদ নামে দুই সহোদরের মোট ১ একর ৩০ শতক জমি রয়েছে। দীর্ঘ বছর ধরে এ জমি ভোগ করে আসছেন দুই সহোদর। ২০২২ সালে এ জমি আবুল হাসেম নামের এক ব্যক্তি দাবী করে বিভিন্ন ভাবে জবর দখল চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উভয় পক্ষের মামলা চলমান রয়েছে। এক পর্যায়ে ২০২২ সালের ৪ আগস্ট আবুল হাসেমের নেতৃত্বে ৪০-৫০ জন সংঘবদ্ধ হয়ে ফরিদ আহমদদের জমি জবর দখলের জন্য যায়। এ সময় ফরিদ আহমদরা তাৎক্ষনিক লামা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। এ নিয়ে বৈঠকের পর বিবাদী আবুল হাসেমরা থানা পুলিশের সিদ্ধান্ত অমান্য করে পুণরায় জমি দখল করতে যায়। পরে ফরিদ আহমদরা সহকারী পুলিশ সুপার বরাবরে অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার হস্তক্ষেপ করলে, আবুল হাসেমরা জমি জবর দখল করতে পারেনি। এতে প্রতিপক্ষ আবুল হাসেমরা ক্ষিপ্ত হয়। গত এক মাস আগে প্রতিপক্ষ আবুল হাসেমরা ফরিদ আহমদদের বিরুদ্ধে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি (মামলা নং ৩০৫/২৪) ও গত ১৮ মার্চ জমিতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফরিদ আহমদদের বিরুদ্ধে ১৪৫ ধারায় একটি মামলা করেন, মামলা নং ১৭/২০২৪। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়েরকৃত মামলা থেকে ফরিদ আহমদরা জামিন চাইলে বিজ্ঞ আদালতের বিচারক জামিন না মঞ্জুর করে এরশাদ উল্লাহ ও ফরিদ আহমদকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আবুল হাসেমের নেতৃত্বে আরও ৪০-৫০ জন সংঘবদ্ধ হয়ে গত ৭ নভেম্বর দিন দুপুরে নিজের করা নিষেধাজ্ঞা মামলা অমান্য করে বিরোধীয় জায়গার উপর ফিল্মি স্টাইলে জোর পূর্বক টিনের ঘর নির্মাণের পাশাপাশি জমিতে কলাগাছ রোপন করে দখল করে নেন। জমি জবর দখলে বাধা দিলে আবুল হাসেমরা এরশাদ উল্লাহর স্ত্রী মরিয়ম বেগমকে প্রাণ নাশের হুমকি দেন। এর আগে এরশাদ উল্লাহদের বিরুদ্ধে আবুল হাসেমরা একটি সি.আর (মামলা নং ০৪/২০২২) মামলা করেন। মামলাটি আদালত খারিজ করে দেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
ভুক্তভোগী এরশাদ উল্লাহর স্ত্রী মরিয়ম বেগম জানান, আবুল হাসেমরা আমার শশুর আনু মিয়ার কাছ থেকে ৬০ শতক জমি কিনেছেন ১৪৫নং খতিয়ান ও ২৭০ নং হোল্ডিং থেকে। কিন্তু তারা ওই হোল্ডিং এর জমিতে না গিয়ে, গায়ের জোরে আমার স্বামী-দেবরের ভোগ দখলীয় জমি জবর দখল করেছে। এ ঘটনায় আমি থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।
এ বিষয়ে স্থানীয় নুনারঝিরি এলাকার বাসিন্দা ইয়াছিন আরাফাত, এনামুল, রুহুল আমিন ও ফাতেমা বেগম বলেন, দিন দুপুরে ফিল্মি স্টাইলে জমি জবর দখলের ঘটনা এক সময় সিনেমাতেই দেখেছিলাম। এখন দেখি সরকারী মাতামুহুরী কলেজ সংলগ্ন উত্তর পাশের ফরিদ আহমদ ও এরশাদ উল্লাহর জমিতে সে ঘটনাই ঘটল। যা মোটেও কাম্য নয়। জমি দখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরী।
তবে অভিযুক্ত আবুল হাসেমরা জানায়, ফরিদ আহমদদের বাবা আনু মিয়ার কাছ ২০০৬ সালে আবুল হাসেম ৬০ শতক প্রথম শ্রেণীর জমি কিনেন। যা খতিয়ান নং ১৪৫ এর আন্দরে ৩০ শতক ও হোল্ডিং নং জি/২৭০ মূলে ৩০ শতক। কিন্তু আনু মিয়া মারা যাওয়ার পর ওয়ারিশ ফরিদ আহমদরা জমি দখলে না দিয়ে নানান তাল বাহানা করেন। তাই ক্রয়কৃত জমি দখলে নিয়েছেন তারা।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে লামা থানা পুলিশের এএসআই রিয়াজ উদ্দিন বলেন, পৌরসভার কলেজ গেট এলাকার ফরিদ আহমদদের জমি দখলের ঘটনায় মরিয়ম বেগম নামের এক নারী থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাৎক্ষনিক প্রতিপক্ষ আবুল হাসেমদেরকে বিরোধীয় জমিতে জোর করে ঘর নির্মাণ না করার জন্য নিষেধ করা হয়। পাশাপাশি বাদী পক্ষ মরিয়ম বেগমকে আদালতের আশ্রয় নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়।