আজ রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

লামায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাতের আঁধারে ঘর নির্মাণের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, লামা (বান্দরবান) : | প্রকাশের সময় : সোমবার ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:২৯:০০ অপরাহ্ন | পার্বত্য চট্টগ্রাম

আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বান্দরবানের লামা উপজেলায় রাতের অন্ধকারে ঘর নির্মাণ করে জমি জবর দখল চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে। উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি হেডম্যান পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নয়ামুসলিম পাড়ার বাসিন্দা মৃত ইউনুছ মিয়ার ছেলে আনোয়ার হোসেন ও মো. ইব্রাহীম হোসেন সহ মৃত দুলাল মিয়ার ছেলে তাজুল ইসলামরা ফারজানা আক্তার মুন্নির ভোগদখলীয় জমিতে এ ঘর নির্মাণ করেন। 

অভিযোগে জানা যায়, ক্রয় সূত্রে ফারজানা আক্তার মুন্নির নামে লামা উপজেলার ৩০৫নং গজালিয়া মৌজার আর/৮৪৩নং হোল্ডিং মূলে ৩ একর ৮০ শতক দ্বিতীয় শ্রেণীর জমি রয়েছে। লোভের বশিভুত হয়ে এ জমির উপর পাশের নয়া মুসলিম পাড়ার বাসিন্দা মৃত দুলাল মিয়ার ছেলে তাজুল ইসলামদের (৩৫) লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। তারা এ জমি জবর দখলে নিতে বিভিন্নভাবে পায়তারা শুরু করেন। এক পর্যায়ে ১২ সেপ্টেম্বর প্রতিপক্ষ আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫ধারা মতে জমির মুল মালিক ও ফারজানা আক্তার মুন্নি সহ ১১ জনের বিরুদ্ধে স্থিতিতাবস্থা চেয়ে ফৌজদারী অভিযোগ করেন। বিজ্ঞ আদালত উভয় পক্ষকে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় স্থাপনা বা নির্মাণকাজ না করার জন্য আদেশ দেন। কিন্তু তাজুল ইসলাম, ইব্রাহিম হোসেন ও আনোয়ার হোসেনরা আদালতের এ নির্দেশ অমান্য করে গত ২৫ সেপ্টেম্বর দিনগত রাতে ওই জমিতে নিজেরাই একটি ঘর নির্মাণ করেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় তাজুল ইসলামরা জমির ঘেরাবেড়া ও জমির ফসল উপড়ে ফেলে বলে জানান জমির ইজারাদার মো. আলম।  

ভুক্তভোগীর স্বামী সাদ্দাম হোসেন রাকিব বলেন, অনেক দিন ধরে তাজুল ইসলাম ও আনোয়ার হোসেনরা আমার স্ত্রী ফারজানা আক্তার মুন্নিার কেনা জমি দখলের পাঁয়তারা করে আসছেন। কিছুদিন আগেও জমিতে কাজ করতে গেলে তারা বাধা প্রদান করেন। শুধু তায় নয়, জমি ছেড়ে না গেলে আমাকে ও আমার জমির কেয়ারটেকারকে হত্যা করে লাশ গুম করবে বলে হুমকিও দেন। হুমকির শিকার হয়ে আমি আদালতের শরণাপন্ন হই। তিনি আরও বলেন, এর আগে গত ১৯ মে ফারজানা আক্তার মুন্নি জমি মো. আলমের কাছে লাগিয়ত প্রদান করেন। এ লাগিয়ত চুক্তি নামায় স্বাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর করেন অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন। অথচ এতদিন পর এসে জমি তাদের দাবী করে অযথা ঝামেলা করছেন। 

এদিকে স্থানীয় বাসিন্দা মো. আলম, মো. ফারুক ও মো. মুসা সহ অনেকে জানান, আর/৮৪৩নং হোল্ডিং এর ৩ একর ৮০ শতক জমি ফারজানা আক্তার মুন্নি ক্রয় সূত্রে মালিক। এ জমি দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখলেও আছেন তিনি। কিন্তু ইদানিং ইব্রাহিম হোসেন, আনোয়ার হোসেন ও তাজুল ইসলাম গংরা এ জমিতে রাতের আধাঁরে ঘর তুলে তাদের বলে দাবী করছেন এটা সম্পূর্ণ অন্যায়।  

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মো. ইব্রাহিম হোসেন বলেন, আমরা আমাদের বাবার জমিতে ঘর নয়, একটি বৈঠকখানা নির্মাণ করেছি। বাবা মারা যাওয়ার পর ওয়ারিশসূত্রে এ জমির মালিক আমরা। তবে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও বিরোধীয় জমিতে ঘর নির্মাণের বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেন নি ইব্রাহীম হোসেন ও আনোয়ার হোসেনরা। 

গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য ম্যংক্যচিং চৌধুরী বলেন, বিরোধীয় জমির বিরোধ মিমাংশার স্বার্থে উভয় পক্ষকে নিয়ে হেডম্যান কার্যালয়ে বসার কথা ছিল। উভয়পক্ষ বসার জন্য সম্মতিও দিয়েছেন। কিন্তু এর মধ্যে আনোয়ার হোসেন ও তাজুল ইসলামরা কারো কথা না মেনে রাতের অন্ধকারে ঘর তুলে জমি জবর দখলের চেষ্টা করছেন।

 

লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো. শামীম শেখ বলেন, গজালিয়া হেডম্যান পাড়ার জমি নিয়ে এক পক্ষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্থিতিতাবস্থা চেয়ে ও অপর পক্ষ জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছেন। নোটিশের মাধ্যমে উভয় পক্ষকে শান্তি শৃঙ্খলার স্বার্থে বিরোধীয় জায়গায় না  যেতে বলা হয়েছে। কোন পক্ষ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিরোধীয় জমিতে ঘর তুললে বা কোন  ধরণের কাজ করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।