আজ মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১লা আশ্বিন ১৪৩১

রুমায় এক প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে জাল স্বাক্ষর করে বিল উত্তোলনের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রুমা : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ২৭ অগাস্ট ২০২৪ ০৯:০২:০০ অপরাহ্ন | পার্বত্য চট্টগ্রাম

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি (এসএমসি) ও স্থানীয়দের মিথ্যা তথ্য প্রদান ও স্বাক্ষর জাল করে বিদ্যালয় মেরামতের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠেছে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

বান্দরবানের রুমা উপজেলায় বাঁচারদে পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয় সংস্কারের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা ৩০জুনের  আগে উত্তোলন করে বদলি করে নিয়ে  ওই  বিদ্যালয় থেকে অন্যত্র চলে গেছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। 

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ২০২৩ ২০২৪ অর্থবছরে ক্ষুদ্র সংস্কার আওতায় রুমা উপজেলায় প্রতি বিদ্যালয় বিপরীতে ২ লক্ষ টাকা করে মোট ৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনুকূলে ১৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ প্রদান করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এর আওতায় রুমা সদর ইউনিয়নের বাচারদেউ পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নামেও সংস্কারের জন্য বরাদ্ধ পাই দুই লক্ষ টাকা।

বাচারদেউ পাড়া প্রধান চিংপ্রু মারমা কারবারী বলেন ,  প্রধান শিক্ষকের কাছে বিদ্যালয় মেরামতের জন্য টাকা কত  বরাদ্দ?  তা জানতে চেয়েছিলাম। তবে তিনি সঠিক তথ্য প্রদান করেননি।

চিংপ্রু মারমার ভাষ্যমতে, প্রধান শিক্ষক মাম্যাসিং মারমা তাকে বলেছেন  বিদ্যালয় মেরামতের জন্য শিক্ষা অফিস থেকে প্রায় ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তারমধ্যে উত্তোলন করতে গিয়ে সরকারী ভ্যাট ছাড়াও উপজেলা শিক্ষা অফিসে আট হাজার টাকা দিতে হয়েছে। প্রাপ্ত সঠিক বরাদ্ধের কথা পাড়ার পড়ুয়া ছেলে মেয়ের অভিভাবকদের কাউকে জানায়নি প্রধান শিক্ষক। নিজের ইচ্ছেমতো পাড়ায় পুরানো বিদ্যালয় ভবন থেকে ইট ভেঙ্গে কংকর বানিয়েছে।  বিদ্যালয়ের রেলিংতে রং দেয়া হয়েছে, তা একমাস যেতে না যেতেই সব রং উঠে গেছে এখন। ভালো করে মেরামতের কোন কাজই হয় নাই।  তাই বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)র কাছে অভিযোগ দিতে এসেছেন বলে জানালেন বারবারী চিংপ্রু মারমা। 

রংয়ের কাজে যিনি জড়িত আছেন তিনি বলেন, বিদ্যালয়টি রং করতে মোট আনুমানিক  ১ লাখ ২০ হাজার টাকা প্রয়োজন। এখান থেকে তাকে মাত্র ১৫ হাজার টাকা যুক্তিতে কাজটি করিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। তাই এ কাজের মান কতটুকু হবে? এমন প্রশ্ন ছুড়েন তিনি।

এসএমসি'র সাবেক সভাপতি মংনিং মারমা বলেছেন, শিক্ষা অফিসার খরচ কেটে নেয়ার পর অবশিষ্ট ৪০-৫০ হাজার টাকা দিয়ে মেরামতের কাজ করছেন এর মধ্যে মিস্ত্রি খরচ গেছে ৩০ হাজার টাকা এমন কথা তাকে প্রধান শিক্ষক মাম্যাসিং মারমা জানিয়েছিলেন। 

তার ভাষ্যমতে, ছয় বস্তা সিমেন্ট এনেছেন প্রধান শিক্ষক স্কুল থেকে ভাঙ্গিয়ে ইট তুলে কংকর ভাঙ্গিয়েছেন দুইজন লেবার নিয়ে।  আর সাঙ্গু নদীর ধার থেকে বালু আমি ( এসএমসি সভাপতি) নিজেই তুলে দিয়েছি। তবে এসএমসি সভাপতি মংনিং মারমা বিদ্যালয় মেরামত বা সংস্কারের টাকা উত্তোলন করতে প্রধান শিক্ষক তার কোন থেকে স্বাক্ষর নেননি তার স্বাক্ষর ছাড়া কিভাবে টাকা উত্তোলন করেছেন এবং বিল ভাউচার সমন্বয় করেছেন বিষয়টি ভাবার বিষয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।

 

বিদ্যালয়ের নামে দুই লক্ষ টাকা বরাদ্দের কথা জানার পর অনেকে প্রধান শিক্ষক কর্তৃক মেরামত নিয়ে ব্যয়ের হিসাব করেছেন । তাদের হিসাব মতে মোট বরাদ্দ ২ লাখ টাকার মধ্যে মাত্র ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা সব মিলে হয়েছে বাকি টাকা প্রধান শিক্ষক আত্মসাৎ করেছেন বলে পাড়ার প্রধান চিংপ্রু মারমা ও এসএমসি সভাপতি মংনিং মারমার অভিযোগ করেন।

বিষয়টি জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মাম্যাসিং মারমা বলেছেন, বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে সব কাজ করা হয়েছে। প্রয়োজনে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ চিরান এর সাথে যোগাযোগ করে দেখুন। জাল স্বাক্ষর করে টাকা উত্তোলনের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসএমসি সভাপতি মংনিং মারমা মদ্যপান করে মানুষের সামনে যা তা বলে বেড়ায়। তাই ওনার কথা বিশ্বাস না করাটা ভালো।

 

উপজেলা শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা আশীষ চিরান বলেন, অর্থ আতৎসাত  বিষয়ে কোনো অভিযোগ  আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।