আজ শুক্রবার ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ই পৌষ ১৪৩১

মহেশখালী দ্বীপে হারিয়ে যাচ্ছে জলজ পাখি পানকৌড়ি

সরওয়ার কামাল, মহেশখালী : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:২৪:০০ অপরাহ্ন | কক্সবাজার প্রতিদিন

দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে পরিবেশ বিপর্যয়,খাদ্য সংকটের কারণে ত্রুমশ হারিয়ে যাচ্ছে জলজ পাখি পানকৌড়ি।  একসময় ঝাঁকে ঝাঁকে পানকৌড়ির দেখা মিললে ও বর্তমানে এই পাখি প্রায় বিলুপ্তির পথে।  পরিবেশবাদীরা মনে করছেন, প্যারাবন ধ্বংস, খাদ্যের সংকট,ফসলি জমিতে বিষ প্রয়োগ এবং জলাশয় দখলের মতো কর্মকাণ্ড পানকৌড়ির অস্তিত্ব কে  হুমকির মুখে ফেলেছে। মহেশখালী বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ। কক্সবাজারের উত্তর-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের কোলঁঘেষে গড়ে ওঠা এই দ্বীপ একসময় সবুজে  ঘেরা ছিল। কিন্তু প্যারাবন এবং পাহাড় কেটে বসতি নির্মাণ, জলাশয় দখল,নদী ভরাট এবং বিভিন্ন মেগাপ্রকল্পের কারণে দ্বীপের পরিবেশ আজ হুমকীর মুখে। পানকৌড়ি মূলত জলাশয় এবং প্যারাবনের উপর নির্ভরশীল পাখি। খাদ্য সংকট, বাসস্থান সংকুচিত হওয়া এবং পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে পানকৌড়ির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। মহেশখালীর প্যারাবন কেটে চিংড়িঘের তৈরী করা এবং সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে জমি দখল এই পরিস্থিতিকে আরো গুরুতর করে তুলছে৷ পরিবেশবাদীরা জানিয়েছেন, পানকৌড়ি দেখতে কুচকুচে কালো, লালচে চোখ, লম্বা লেজ, এবং লম্বা ঠোঁটযুক্ত পাখি। সাধারণত এরা ৩০-৩৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয় এবং দীর্ঘ সময় পানির নিচে থেকে  মাছ শিকার করতে পারে। কিন্তু মহেশখালীর প্যারাবন ধ্বংসের কারণে এই পাখি ত্রুমশ বিলুপ্তর পথে। মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপ তার জীববৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত। এখানে ৭০ প্রজাতির জলচর পাখি, লাল কাঁকড়া এবং শীলা কাঁকড়ার দেখা মেলে। দ্বীপটি সামুদ্রিক কাছিমের প্রজননক্ষেত্র হিসাবে পরিচিত। শীতকালে সোনাদিয়া দ্বীপে দেশী-বিদেশী অতিথি পাখির সমাগম ঘটে। তবে বর্তমানে সোনাদিয়া দ্বীপ ও বিপর্যয়ের মুখে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক কর্তৃপক্ষ (বেজা) এখানে ৯৪৬৭ একর জমিতে ইকো-ট্যুরিজম পার্ক নির্মাণের মাষ্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করেছে। এর ফলে প্যারাবন ধ্বংস, খাল ভরাট এবং পানি দূষণ এবং ব্যাপক হারে বেড়েছে। পরিবেশবাদীরা আশঙ্কা করছেন, এই কার্যক্রম সোনাদিয়ার প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য কে ধ্বংস করে দেবে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মহেশখালী শাখার সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবুবকর বলেন, কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের বর্জ্যে কোহেলিয়া নদী মৃত প্রায়। নদীর দুই পাড়ের প্যারাবন ধ্বংস করে ভূমিদস্যুরা চিংড়িঘের তৈরি করছে। ফলে পানকৌড়ি সহ বিভিন্ন পাখি হারিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশবাদীদের মতে মহেশখালী এবং সোনাদিয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।  প্যারাবন সংরক্ষণ, নদী দখল রোধ এবং পরিবেশ বান্ধব উন্নয়ন নিশ্চিত করার মাধ্যমে পানকৌড়ির অস্তিত্ব রক্ষা করা সম্ভব। মহেশখালীতে প্যারাবন ধ্বংস করে চিংড়িঘের নির্মাণের মহোৎসব চলছে। ফলে পানকৌড়ি শীতকালীন অতিথি পাখি এবং অন্যান্য প্রাণীর অস্তিত্ব হুমকিতে পড়েছে। পরিবেশবাদীদের দাবি, পাখির ব্যাপারে আরো দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে , নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, পাখি শিকারী,উৎসুক জনতা বা পর্যটকদের আনাগোনায় যাতে পাখিদের অবাধ বিচরণে বিঘ্ন না ঘটে সেদিকে জোরালো দৃষ্টি দিতে হবে। সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে, যাতে পাখি নিধনের মতো কাজ কেউ না করে।  পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে।