ম্যালেরিয়ার নতুন একটি টিকা ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এই টিকাটি সস্তা এবং বিপুল পরিমাণে উৎপাদন করা সম্ভব। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি এই টিকাটি উদ্ভাবন করেছে। এটি রোগটির বিরুদ্ধে সংস্থাটির অনুমোদিত দ্বিতীয় টিকা। সোমবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশু ও নবজাতকের মৃত্যু হয়। মশাবাহিত এই রোগটিকে জনস্বাস্থ্যের অন্যতম শত্রু হিসেবে মনে করা হয়। একটি জটিল পরজীবী দ্বারা এই রোগ সৃষ্টি হয় এবং রক্ত চোষা মশার কামড়ে এটি ছড়ায়। সাধারণ ভাইরাসের তুলনায় এটি মানবদেহে অভ্যন্তরে ক্রমাগত আকার পরিবর্তন করে প্রতিরোধ ব্যবস্থা থেকে লুকিয়ে থাকতে পারে। ফলে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার মাধ্যমে প্রাকৃতিকভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি এবং টিকা উদ্ভাবন কঠিন। এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টার পর রোগটির বিরুদ্ধে কার্যকর টিকা উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে।
প্রায় দুই বছর আগে ম্যালেরিয়ার প্রথম টিকা ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছিল ডব্লিউএইচও। ওই টিকাটির নাম আরটিএস,এস এবং উদ্ভাবন করেছিল জিএসকে।
ডব্লিউএইচও মহাপরিচালক টেড্রোস আডানম গেব্রিয়াসিস বলেছেন, আজকের মুহূর্তটি খুব আনন্দের। আমি স্বপ্ন দেখতাম আমরা ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে একটি নিরাপদ ও কার্যকর টিকা আমাদের হাতে থাকবে। এখন আমাদের দুটি টিকা রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, দুটি টিকার কার্যকারিতা প্রায় সমান এবং একটি অপরটির চেয়ে ভালো বলে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তবে সবচেয়ে বড় পার্থক্য হলো দুটি টিকার উৎপাদনের মাত্রা। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির আর২১ নামের টিকাটি বিপুল পরিমাণে উৎপাদন করা সম্ভব।
বিশ্বের বৃহত্তম টিকা উৎপাদনকারী ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ইতোমধ্যে প্রতি বছর ১০ কোটি ডোজ তৈরির প্রস্তুতি নিয়েছে। জিএসকে’র আরটিএস,এস টিকাটির মাত্র ১ কোটি ৮০ লাখ ডোজ রয়েছে।
ডব্লিউএইচও বলছে, আর২১ টিকাটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠবে। কারণ ম্যালেরিয়া টিকার চাহিদা সরবরাহের তুলনায় বেশি এবং এটি আগামী বছরের মাঝামাঝি থেকে পাওয়া যাবে। এগুলোর প্রতিটি ডোজের দাম পড়বে ২-৪ ডলার। একজন ব্যক্তির জন্য চারটি ডোজ প্রয়োজন হবে।
২০২১ সালে বিশ্বে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৪ কোটি ৭০ লাখ এবং মৃত্যু হয়েছে ৬ লাখ ১৯ হাজার মানুষের। এদের বেশিরভাগের বয়স পাঁচ বছরের কম। ৯৫ শতাংশের বেশি ম্যালেরিয়ার রোগী আফ্রিকা মহাদেশের।
ডব্লিউএইচও-এর আফ্রিকা অঞ্চলের প্রধান মাতশিদিসো মোয়েতি বলেছেন, দ্বিতীয় টিকাটির কারণে চাহিদা ও সরবরাহের ব্যবধান কমিয়ে দেওয়ার প্রকৃত সম্ভাবনা রয়েছে।