টানা তিন দিনের ছুটিতে পর্যটকে মুখরিত হয়ে উঠেছে পার্বত্য জেলা বান্দরবান। শুক্র ও শনিবার (২৩ ও২৪ ডিসেম্বর) সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে যোগ হয়েছে বড়দিনের ছুটি। আর সেই ছুটিতে দীর্ঘদিন পর বান্দরবানের হোটেল-মোটেল আর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে উপচে পড়া পযর্টক সমাগম হয়েছে। এদিকে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যরা।
শীতের আমেজ আর সেই সঙ্গে টানা তিন দিনের ছুটিতে জেলার মেঘলা, নীলাচল, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক, নীলগিরি, নাফাকুম, তমাতুঙ্গিসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলো এখন পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতিটি স্পটেই ছুটছেন অসংখ্য পর্যটক। পাহাড়, নদী, ঝর্ণার অপরূপ রূপ দেখে বিমোহিত হচ্ছেন প্রকৃতি প্রেমীরা।
বান্দরবানের অন্যতম সুন্দর পর্যটনকেন্দ্র নীলাচলে ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা মো. রাশেদ বাংলানিউজকে জানান, টানা তিনদিনের ছুটি পেয়ে বান্দরবান বেড়াতে আসলাম। বান্দরবান খুবই সুন্দর ও প্রকৃতি প্রেমীদের ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত একটি জেলা।
নরসিংদী থেকে মেঘলা পর্যটনকেন্দ্রে আসা শারমীন জানান, বান্দরবানের পাহাড় আর প্রকৃতি খুবই সুন্দর, আর দীর্ঘদিন পর ছুটি পেয়ে বান্দরবান ভ্রমণে আসলাম। এ জেলার ৭টি উপজেলায় অসংখ্য পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে। আমরা বেশিরভাগ পর্যটনকেন্দ্র ঘুরে এবারের ছুটি উপভোগ করব।
চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ থেকে বান্দরবান সদরে ভ্রমনে আসা দীপ্র জানান, বান্দরবান খুবই সুন্দর। আমি ছুটি পেলেই বান্দরবানে চলে আসি। এটা বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম একটি জেলা যেখানে ভ্রমণে খুবই ভালো লাগে।
এদিকে গত ১০ অক্টোবর থেকে বান্দরবান জেলার রুমা-রোয়াংছড়ি, থানচি এবং আলীকদম উপজেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকাগুলোতে যৌথবাহিনীর সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে পর্যটকদের নিরাপত্তা বিবেচনায় দেশি-বিদেশি সবার জন্য বান্দরবানের কয়েকটি উপজেলা ভ্রমণে গত ১৮ অক্টোবর থেকে কয়েক দফায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। ফলে এখনো বান্দরবানের রুমা ও রোয়াংছড়ি এই দুই উপজেলায় পর্যটকরা ভ্রমণ করতে পারছে না।
তবে দীর্ঘদিন পর টানা ছুটির কারণে বাকি ৫ উপজেলার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমনে জেলার হোটেল-মোটেলগুলো কানায় কানায় ভর্তি হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে পর্যটকবাহী গাড়িগুলোও ভাড়া হওয়ায় খুশি পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
বান্দরবান মাইক্রোবাস-জিপ-পিকআপ মালিক সমিতির সভাপতি মো.নাছিরুল আলম বলেন, দীর্ঘদিন পরে জেলায় বিপুল সংখ্যক পর্যটকের উপস্থিতি আমাদের মনে শান্তি নিয়ে এসেছে। গতবছর করোনার কারণে আমরা অনেক ক্ষতির মধ্যে ছিলাম। আবার এবছর প্রশাসন থেকে বান্দরবানের কয়েকটি উপজেলায় কয়েক দফায় নিষেধাজ্ঞার কারণে আমদের ব্যবসা বন্ধের উপক্রম হয়েছিল। তবে টানা বন্ধের কারণে বান্দরবানে এখন প্রচুর পর্যটক রয়েছে। তারা বান্দরবান বেড়াতে পেরে খুশি, আর আমরা তাদের গাড়িতে করে বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে ভ্রমণ করাতে পেরে আরও বেশি খুশি।
জেলা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন মাস্টার বলেন, বান্দরবানে পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ ভ্রমণে আসেন। পর্যটকদের উন্নত সেবা দেওয়ার জন্য আমরা বান্দরবান রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি সব সময় প্রস্তুত থাকি। পর্যটকদের ভালো সার্ভিস দিয়ে তাদের বান্দরবান ভ্রমণ নিয়মিত করতে আমরা প্রতিটি রেস্তোরাঁ মালিক সচেষ্ট রয়েছি।
এদিকে টানা বন্ধে বান্দরবানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে আরও বাড়তি সর্তকতা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্যুরিষ্ট পুলিশ বান্দরবান জোনের অতিরিক্ত সুপার মো.নকিবুল ইসলাম।
তিনি জানান, পর্যটকদের বেড়ানোর জন্য বাংলাদেশের সবচেয়ে নিরাপদ ও সুন্দর স্থান বান্দরবান। আর পর্যটকরা যাতে বান্দরবান নিরাপদে ভ্রমণ করতে পারেন সেজন্য ট্যুরিষ্ট পুলিশ সদস্যরা বেশিরভাগ পর্যটন কেন্দ্রে নিয়মিত টহল দিচ্ছে।
তিনি আরও জানান, সাদা পোশাকে এবং পোশাকধারী ট্যুরিষ্ট পুলিশ সদস্যরা বেশিরভাগ পর্যটন কেন্দ্রের আশেপাশে রয়েছে, যাতে কোনো পর্যটক বিপদের সম্মুখীন না হয়।