বান্দরবান জেলা সদরের রোয়াংছড়ি বাস ষ্টেশন আবাসিক এলাকায় বড়ুয়া সম্প্রদায়ের শ্বশ্মান নির্মানকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ঘটনার পর সরেজমিনে পরিদর্শন করে নির্মান কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বান্দরবান পৌর মেয়র। স্থানীয়রা জানায়, শনিবার (২৫ মার্চ) সকালে বান্দরবান সদর এলাকার রোয়াংছড়ি বাস ষ্টেশন ভবনের পেছনে ২০ শতক সরকারী খাস জায়গা অবৈধ ভাবে দখল করে বড়ুয়া সম্প্রদায়ের শ্বশ্মান নির্মান করতে গেল আশপাশের শত শত নারী পুরুষ এতে বাঁধা প্রদান করেন। এঘটনাকে কেন্দ্র করে বড়ুয়া সম্প্রদায়ের সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহার কমিটির লোকজনের সাথে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে স্থানীয়দের বাঁধা উপেক্ষা করে শ্বাশ্মান নির্মান কাজ অব্যাহত রাখলে উপয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এসময় স্থানীয়রা ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করে পুলিশ প্রশাসনে সহযোগীতা কামনা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উভয় পক্ষকে থানায় ডেকে নিয়ে যায়।পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বান্দরবান পৌর মেয়র মোঃ ইসলাম বেবী ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম রফিকুল ইসলাম। এসময় মেয়র সরকারী খাস জায়গায় দখন এবং বানিজ্যিক ও আবাসিক এলাকার মধ্য শ্বশ্মান নির্মান করায় ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। স্থানীয় সোনা রাম,বিক্রশ লালা,নুরুল ইসলাম জানান, রোয়াংছড়ি বাস ষ্টেশন এলাকায় মুসলিম,হিন্দু,মার্মা ও কয়েকটি বড়ুয়া পরিবারসহ প্রায় ২শতাধিক পরিবারের সাম্প্রদায়ীক সম্প্রীতির বসবাস। বিগত ৫/৭ বছর পুর্বে রোয়াংছড়ি বাস টার্মিনাল ঘেষে গড়ে তোলা হয়েছে বড়ুয়া সম্প্রদায়ের সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহার। বাস টার্মিনালের চতুর পার্শ্বে বসত ঘর,বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্টান ও একটি বৌদ্ধ অনাথালয় রয়েছে। বাস টার্মিনাল ভবনের পেছনে এবং আবাসিক এলাকার ভেতরে অনুমানিক ২০শতক পরিত্যক্ত সরকারী খাস জমি রয়েছে যা পাড়ার লোকজন বিভিন্ন সময় ধর্মীয় ও সামাজিক আচার-অনুষ্টান কাজে ব্যবহার করে আসছিল। সাম্প্রতিক সময়ে উক্ত ২০ শতক সরকারী খাস জমি অবৈধ ভাবে দখল করতে এবং তাদের নিজন্ব সম্পত্তি দাবী করে বড়ুয়া সম্প্রদায়ের সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহার কমিটির লোকজন উক্ত জায়গায় একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়। গত ২১/০৩/২০২৩ ইং তারিখে বান্দরবান পৌর সভার ৬নং ওয়ার্ড নিউগুলশান এলাকার বাসিন্দা ও সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহার কমিটির সভাপতি চৌধুরী প্রকাশ বড়ুয়ার পিতা রায় মোহন বড়ুয়া মারা যায়। পাড়ার লোকজনের ব্যবহৃত ২০ শতক খাস জমিকে শ্বশ্মানে রুপান্তর করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে চৌধুরী প্রকাশ বড়ুয়ার মৃত পিতাকে হঠাৎ ওই জায়গায় সৎকার করার চেষ্টা চালায়। এসময় পাড়ার শত শত নারী- পুরুষ এতে বাঁধা প্রদান এবং প্রতিবাদ করে। এক পর্যায়ে উক্ত জায়গায় মৃত ব্যক্তিকে সৎকার থেকে তারা বিরত থাকে। এসময় সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহার কমিটির সভাপতি চৌধুরী প্রকাশ বড়ুয়া ও সাধারন সম্পাদক অসীম বড়ুয়াসহ কমিটির কথিপয় লোকজন হুমকি ধমকি প্রদান করে যে,তারা যে কোন সময় পাড়ার লোকজনের ব্যবহৃত খাস ২০ শতক জমি দখলে নিয়ে শ্বশ্মান নির্মান করবে। শনিবার বড়ুয়া সম্প্রদায়ে লোকজন আবারো শ্বশ্মান নির্মানের কাজ করতে গেলে পাড়ার লোকজনের সাথে আবারো ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। তারা আরো জানান, একটি বাস টার্মিনাল,আবাসিক এলাকা এবং বানিজ্যিক এলাকার মত একটি জনগুরুত্বপুর্ন এলাকায় শ্বশ্মান গড়ে তোলা মোটেও সমীচীন হবেনা। একটি জনগুরুত্বপুর্ন এলাকায় শ্বশ্মান গড়ে তোলা হলে লাশ পুঁড়ানোর দুর্গন্ধে পরিবেশ নষ্ট হবে এবং স্থানীয় বাসিন্দারা নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হবে। তারা আরো জানান, সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহার কমিটির লোকজন যদি পাড়াবাসীর ব্যবহৃত এবং সরকারী খাস ২০ শতক জমি অবৈধ ভাবে দখল করে শ্বাশ্মান নির্মান করা হয় তাহলে যে কোন অনাকাংঙ্খিত পরিস্থিতি এবং সাম্প্রদায়ীক দাঙ্গাসহ সকল ঘটনার দ্বায়ভার সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহার কমিটির লোকজনকেই নিতে হবে। কালাঘাটার বড়ুয়ারটেক এলাকায় সরকারী নির্ধারিত বড়ুয়া সম্প্রদায়ের জন্য নির্দিষ্ট শ্বশ্মান রয়েছে। সরকারী অর্থায়নে প্রয়োজনে উক্ত শ্বশ্মানকে আরো মানসম্পন্ন ও আধুনিক মানের গড়ে তোলা যায় বলে তারা জানান। এব্যপারে সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহার কমিটির সভাপতি চৌধুরী প্রকাশ বড়ুয়া জানান,বিহারের নামে ১০ শতক জমি বন্দোবস্তি রয়েছে। আমাদের নিজস্ব সম্পত্তিতে শ্বশ্মান নির্মান কাজে এলাকার লোকজন বাঁধা দিচ্ছে। আমাদের সম্পত্তিতে কি করবো না করবো এটা আমাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। বান্দরবান পৌর মেয়র মোঃ ইসলাম বেবী জানান,খাস জায়গা হচ্ছে সরকারের ব্যক্তিগত সম্পত্তি। সরকারী খাস জায়গা অবৈধ ভাবে দখল করে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্টানকে কোন কিছুই করতে দেয়া হবেনা। তাই বড়ুয়া সম্প্রদায়ের শ্বশ্মান নির্মান কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বান্দরবান সদর থানান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম রফিকুল ইসলাম জানান,রোয়াংছড়ি বাস ষ্টেশন এলাকায় বড়ুয়া সম্প্রদায়ের শ্বশ্মান নির্মানকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ঘটনায় উভয় পক্ষকে থানায় ডেকে বৈঠক করা হয়েছে এবং কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আগামী কাল তাদের নিয়ে আবারো বৈঠকের আহবান করা হয়েছে। সৃষ্ট ঘটনার শান্তিপুর্ন সামাধানের পথ বের করা প্রয়োজন বলে তিনি জানান।
