বান্দরবান সদর উপজেলার মেঘলা, নীলাচল, টাইগার পাড়া, কানাপাড়া, চেমীরমুখ, রেইছা, মাঝের পাড়ার চা বোর্ডের আশপাশসহ সদরের বিভিন্ন এলাকায় সৃজিত সেগুন, গামারী, মেহগনিসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন উজার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে বান্দরবানের কিছু নেতার বিরুদ্ধে। স্থানীয়রা জানায়, এক সময় বিএনপির রাজনীতি করলেও কয়েকবছর আগে আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা বনে যান গাছ কামাল, অন্যদিকে সদর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক সরোয়ার জামাল। আর এই দুই নেতা রাজনৈতিক প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে কয়েকবছর ধরে বান্দরবান সদরের মেঘলা, নীলাচল, কানাপাড়া, ডলুঝিড়ি পাড়া, মাঝের পাড়ার চা বোর্ড এলাকা, চেমীরমুখ, গোয়ালিয়া খোলা, রেইচা, টাইগার পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার গাছ কেটে বন উজার করছে। আর উজার করা এসব গাছ বন কর্তাদের ম্যানেজ করে ও বন বিভাগের দেয়া প্রহরা চৌকি পার হয়ে চলে আসছে বান্দরবান সদরে। আবার কিছু কিছু গাছ চলে যাচ্ছে চট্টগ্রামে। বান্দরবানের ১২ মাইল সুকুমার রোড দিয়ে এসব অবৈধ গাছ যাচ্ছে বিভিন্ন অবৈধ ইটভাটায় ও মেঘলা এলাকার লুম্বিনী গার্মেন্টসে। বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক এলাকায় অবস্থিত এবিএম ইটভাটার শ্রমিক জামাল উদ্দিন জানান, তাদেরসহ আরো ৩টি ইটভাটায় প্রতিদিন কামাল ও সরোয়ার জামাল জ্বালানী হিসাবে কাঠ সরবরাহ করে। বান্দরবান শহরের বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার বলেন, জেলা শহরের পৌর এলাকার যৌথ খামার এলাকায় মানুষের সৃজিত বাগানের সেগুন, গামারি, মেহগনিসহ মহামূল্যবান গাছ নির্বিচারে কেটে রাতের আধারে পাচার করছে। আর এই অবৈধ ব্যবসা করেই এখন তারা রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক। সদরের কানাপাড়া এলাকার বম পাড়ার বাসিন্দা লাল পিয়ান বম জানান, বান্দরবানে মেঘলা এলাকার কানা পাড়ার গোল্ডেন টেম্পল পাশের রাস্তার উপরে, বম সম্প্রদায়ের পাড়ার পরে ডলুঝিড়ি পাড়ার পাহাড় থেকে গাছ কেটে স্তুপ করে রাখা হয়েছে পাচারের উদ্দ্যেশে। গত ১৪ জানুয়ারী উক্ত এলাকা থেকে ট্রাকে করে গাছ পাচার করা হয় গাছ। আর এই পাহাড়ে শত শত গাছের কাটা টুকরো পড়ে আছে। শুধু এই এলাকা নয়, উক্ত এলাকাগুলোতে দেখা মেলে কর্তন করা গাছের গোড়া। এসময় কাঠ বোঝায় করা ট্রাক শ্রমিক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, ডলুঝিড়ি পাড়ার পাহাড় থেকে কাঠগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে, এসব কাঠের মালিক কাঠ ব্যবসায়ি কামাল, কাঠগুলো আমরা ইটভাটায় দেবার জন্য নিয়ে যাচ্ছি। সদর উপজেলার ডলুঝিড়ি পাড়ার শামসুল আলম জানান, প্রতিদিন যেভাবে ট্রাকে করে অবৈধ গাছ পাচার হচ্ছে, জেলা সদরে আর গাছ থাকবেনা, থাকবেনা সবুজ অরণ্য। আরো জানা গেছে, জেলা সদর ও পৌর এলাকার বিভিন্ন বাগান থেকে মহামূল্যবান এসব বড় গাছ কেটে জোত পারমিট ছাড়া জেলার বাইরে পাচার, আবার একটি বাগানের গাছ পারমিট করলেও পারমিটের গাছের সংখ্যা পূরন করা হয়, অন্য বাগানের গাছ কেটে। ইটভাটার শ্রমিকদের তথ্য মতে, গাছের অবশিষ্ট অংশ ১৫০ টাকা করে মণ বিক্রি করে এবং এক পিকআপ লাকড়ি ইটভাটায় বিক্রি করে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা করে। একটি ইটভাটায় দৈনিক গড়ে ৩০০ মণের উপর কাঠের প্রয়োজন হয়, জেলা সদরের পাশের কয়েকটি ইটভাটায় প্রতিদিন ট্রাকে ট্রাকে করে এসব চোরাই গাছের কাঠ বিক্রি করা হয় ভাটার জ্বালানির জন্য। এ বিষয়ে সদর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক সরোয়ার জামালকে ফোনে পাওয়া না গেলেও অবৈধ অন্য গাছ পাচারকারী কামাল বলেন, আমি অবৈধ ভাবে গাছ কেটে বিক্রি করিনা, মানুষের বাগান থেকে রাতের আধারে গাছ কেটে পাচারও করিনা। স্থানীয় সূত্রে আরো জানা গেছে, জেলার মেঘলা, নীলাচল, টাইগার পাড়া, কানাপাড়া, চেমীরমুখ, ডলুঝিড়ি পাড়া, মাঝের পাড়ার জনবসতিহীন মানুষের বাগানের রোপিত মহামূল্যবান গাছ দিনের বেলায় কেটে ফেলে রাখা হয়, আর সেসব গাছ প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যার পর মিনি ট্রাকে করে জেলা শহরের প্রধান সড়ক দিয়ে গাছ পাচারের ঘটনা ঘটলে এক্ষেত্রে নীরব বন বিভাগ। এ বিষয়ে বান্দরবান সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ গাছ কাটছে কিনা জানা নেই, জানলে অভিযান চালানো হবে। গত ৬ মাসে উক্ত এলাকা থেকে কি পরিমান অবৈধ কাঠ আটক করা হয়েছে এই ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে, তিনি কোন সুদত্তর দিতে পারেননি। এদিকে স্থানীয়রা মনে করেন, জেলা সদরের পৌর এলাকা ও সদর উপজেলায় এই ধরণের অবৈধ গাছ পাচার অব্যাহত থাকলে সবুজ অরণ্য ঘেরা বান্দরবান শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অচিরেই হারিয়ে যাবে, যার ফলে প্রাকৃতি দর্শনে আসা পর্যটকের আগমন কমে আসতে পারে।