টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢলের কারণে হু হু করে পানি বাড়ছে সিলেট নগরীসহ সবকটি উপজেলায়। বেশিরভাগ এলাকার রাস্তাঘাট বাসাবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) সন্ধ্যার পর থেকে দ্রুতগতিতে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন সিলেটের বানভাসি মানুষ। এ নিয়ে নির্ঘুম রাত পার করছেন তারা।
৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে সিলেট সদর, ছাতক, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভপুরে হাজার হাজার বসতঘরে বানের পানি ঢুকে পড়েছে। ছাতক ও সুনামগঞ্জ শহরের শতশত বসত ঘরের নিচতলা কোমর পানিতে ডুবে আছে।
সিলেট নগরীর আখালিয়া এলাকার বাসিন্দা হাসান বলেন, আমার বাড়িতে কোনোদিনই পানি ঢুকেনি। কিন্তু রাত ১০টার পর থেকে আমার বাড়ির উঠানে পানি প্রবেশ করেছে। চারদিকে এত বন্যার পানি আগে আমি কখনোই দেখিনি। যত সময় যাচ্ছে পানির উচ্চতা ততই বাড়ছে। এ অবস্থায় বাসাবাড়িতে আমার পরিবার নিয়ে খুব আতঙ্কের মধ্যেই রাত পার করছি।
অপরদিকে সিলেট নগরীর আরেক বাসিন্দা সোহাগ বলেন, এখন মধ্যরাত। আমার ঘরে হাঁটু পর্যন্ত পানি। সকাল না হলে পরিবার নিয়ে অন্য কোথাও বেরিয়ে যেতে পারব না।
সিলেটের লামাগাজীর আরেক বাসিন্দা গণমাধ্যমকর্মী আবদাল বলেন, রাত ১০টার দিকে আমাদের বাসার ভেতরে পানি ঢুকে যায়। সেই সাথে চলছে টানা বৃষ্টি। বিভিন্ন ধরনের পোকা-সাপের ভয়ে আছি।
তিনি বলেন, পুরো এলাকা বিদ্যুতহীন হয়ে পড়েছে।চার্জ দিতে না পারায় বন্ধ রয়েছে মোবাইল ফোন। ফলে সবার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।তাতে বিপাকে পড়েছেন বানভাসিরা।ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন বলে জানান তিনি।
হঠাৎ করে পানি বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ। আবার কিছু কিছু এলাকায় স্থানীয়ভাবে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হচ্ছে। পানিবন্দি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হচ্ছে।
সিলেট নগরীর ১০নং ওয়ার্ডের মোল্লাপাড়া এলাকার বাসিন্দা শুভ বলেন, রাত পৌনে ২টায় সিলেট নগরের মোল্লাপাড়া জামে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয় পানির কারণে যদি কারো বাসাবাড়িতে থাকতে সমস্যা হয়, তাহলে যেন মসজিদে এসে তারা নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করেন। এ ঘোষণার পর অনেকে মসজিদে আশ্রয় নিয়েছেন। এ অবস্থায় আমি পরিবার আত্মীয়-স্বজন নিয়ে বেশ উৎকণ্ঠার মধ্যে রাত পার করছি।
সিলেটের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আগামী তিন-চার দিন অবিরত বর্ষণ অব্যাহত থাকবে। এভাবে টানা বর্ষণ অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে।
আকস্মিক বন্যায় সিলেট নগরের উপশহর, সোবহানীঘাট, মেন্দিবাগ, মুরাদপুর এবং আশপাশের এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তাই গ্রাহকদের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে জরুরি সতর্কবার্তা দিয়েছে সিলেট বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ।