আজ বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

দুই হাতে ঘুষ নেন তিনি

ইলিয়াছ ভূঁইয়া, নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : বুধবার ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২২ ১০:২২:০০ অপরাহ্ন | দেশ প্রান্তর

সরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি, অথচ ঘুষ ছাড়া ফাইল একচুলও নড়তে দেননা। হাতে টাকা তুলে না দিলে তার টেবিল থেকে ফাইল নড়ে না। টাকা ড্রয়ারে পড়লে তবেই ফাইল নড়েচড়ে ওঠে। আবার টাকা কমও নেন না। চালু করেছেন ‘প্যাকেজ রেট’। তার নাম সানাউল হক। টেরিয়াল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা।

 

গ্রাহক সেবা জনগণের দ্বার গোড়ায় পৌছে দিতে সরকার ই-নামজারি ব্যবস্থা চালু করেছে। ঘুষ-দূর্ণীতি বন্ধে ঘোষণা করেছে জিরো টলারেন্স। কিন্তু চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী। একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর কর্মকান্ডে ভূমিসেবা থেকে বরাবরের মতই বঞ্চিত হচ্ছে গ্রাহকরা।  

সীতাকুণ্ড উপজেলার সর্ব উত্তরে অবস্থিত টেরিয়াল ইউনিয়ন ভূমি অফিস। সৈয়দপুর, বহরপুরসহ সীতাকুণ্ডের প্রত্যান্ত অঞ্চলের বেশ কয়েকটি মৌজার ভূমি মালিকরা সরকারী খাজনা পরিশোধ ও নামজারি খতিয়ান সৃজন করতে দ্বারস্থ হয় এ অফিসের। কিন্তু অফিসের বড় কর্তা সানাউল হক যিনি সর্বোচ্চ গ্রাহক সেবার ব্রত নিয়ে দায়িত্ব নিয়েছেন, তার লোভের শিকার হয়ে চরম হয়রানিতে পড়ছে ভূমি মালিকরা।

 

জানা যায়, ভূমি নামজারি সৃজন করতে সর্বপ্রথম সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) বরাবরে অনলাইনে আবেদন করে সংশ্লিষ্ট দলিলপত্রাদির কপি উপজেলা ভূমি অফিসে জমা দিতে হয়। এরপর এসিল্যান্ড আবেদন মঞ্জুর করলে নামজারি আবেদন ফাইল পাঠানো হয় টেরিয়াল ভূমি অফিসে। সেখানে তহসিলদার আবেদন ফাইল যাচাই বাছাই করে নামজারির জন্য পুনরায় উপজেলা ভূমি অফিসে প্রেরণ করেন। 

 

কিন্তু দৈনিক সাঙ্গুর অনুসন্ধানে ওঠে আসে ভিন্ন এক ভয়াবহ চিত্র। টেরিয়াল অফিস থেকে নামজারি প্রস্তাব পাঠাতে গিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট অংকের টাকা দাবি করেন সানাউল হক। টাকার এ অংক নামজারি থেকে নামজারির ক্ষেত্রে ‘প্যাকেজ রেট’ বলে প্রচার আছে ওই এলাকায়। এ প্যাকেজ রেট না পেলে প্রস্তাব পাঠাতে গড়িমসি করেন তিনি। এমনকি  অনেক সময় এ ফাইল চলে যায় রিজেক্টের তালিকায়। এছাড়া মৌরসী সম্পত্তি, বন্টকনামা অথবা পোড়ার সালের (১৯৬২-১৯৮২) দলিল দিয়ে নামজারির ক্ষেত্রে ইচ্ছেমত টাকা দাবি করেন তিনি।

 

আবদুল আহাদ নামে একজন সেবাগ্রহীতা বলেন, নামজারি থেকে নামজারি এরকম দুইটি ফাইলের প্রস্তাব পাঠাতে সানাউল হককে দুই হাজার করে ৪ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। আমার এলাকার বাসিন্দা বলে ৫শ টাকা কম দিতে চাইলে তিনি আমার ওপর ক্ষেপে যান। বাধ্য হয়ে ৪হাজার পুরোটাই দিতে হয়েছে তাকে।

 

সৈয়দপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা এহসান জানান,  আমার পৈত্রিক সম্পত্তি নামজারী করাতে প্রস্তাব পাঠানোর জন্য সানাউল হককে ২০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। 

 

এছাড়া সরকারী খাজনা আদায় করতে গিয়েও ভূমি মালিগণ চরম হয়রানির শিকার হন। বিশেষ করে বকেয়া খাজনা আদায়ে গ্রাহকরা জ্যামিতিক হারের হিসাব না বুঝায় ইচ্ছেমত অর্থ দাবি করেন তিনি। পরে খাজনা রশিদে গ্রাহকের দেয়া পুরো টাকার অংক না লিখে খাজনা আপডেট দেখানোর শর্তে কিছু টাকা কম নেন সানাউল হক। এতে একদিকে যেমন ভূমি মালিকগণ ক্ষতিগ্রস্থ হন অন্যদিকে রাজস্ব বঞ্চিত হন সরকার।

এভাবে ঘুষ-দূর্নীতি করে রাতারাতি বহু সম্পত্তি গড়েছেন সানাউল হক। তম্মধ্যে সীতাকুণ্ড সদরে গড়ে উঠা সর্ববহৎ কমপ্লেক্সের মালিকানাও রয়েছে তার। 

 

তবে এ সকল অভিযোগের বিষয়ে সরাসরি সানাউল হকের সাথে তার দপ্তরে সাক্ষাত করলে তিনি এ প্রতিবেদককে কোন কিছু জানাতে বাধ্য নন বলে জানান। উপরন্তু তিনি প্রতিবেদককে ম্যানেজ করতে তার মুঠোফোনে তৃতীয় কারো সাথে কথা বলাবার চেষ্টা করেন। এ সময় প্রতিবেদক কথা বলতে অস্বীকৃতি জানালে সানাউল হক বলেন, আপনার কোন নামজারি ফাইল থাকলে নিয়ে আসেন ফ্রি প্রস্তাব করিয়ে দিই। 

 

সীতাকুণ্ড সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) আশরাফুল আলম এসব বিষয়ে কোন কিছু অবগত নন বলে জানান।