আজ বৃহস্পতিবার ২ মে ২০২৪, ১৯শে বৈশাখ ১৪৩১

বন্যায় নষ্ট চিনাবাদাম, চরাঞ্চলের কৃষক পরিবারে হাহাকার

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : বুধবার ২৯ জুন ২০২২ ০২:২৮:০০ অপরাহ্ন | দেশ প্রান্তর

গেল বন্যার পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে লালমনিরহাটের চরাঞ্চলের কৃষকের মাটির সোনা খ্যাত চিনাবাদাম। ফলে উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না বাদাম চাষিরা।

জানা গেছে, তিস্তা, ধরলা আর সানিয়াজান নদীবেষ্টিত জেলা লালমনিরহাট। জেলার ৫টি উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে খরস্রোতা তিস্তা আর ধরলা নদী। তিস্তা নদী জেলার দক্ষিণ দিয়ে ৫টি উপজেলার বুক চিড়ে বয়ে চলেছে আর খরস্রোতা ধরলা জেলার সদর উপজেলার উত্তর পূর্ব দিক দিয়ে বয়ে চলেছে। সব মিলে নদী দু'টি দুই দিক দিয়ে জেলার সীমান্তকে আগলে রেখেছে। বর্ষা মৌসুমে ধরলা আর তিস্তার খরস্রোতে প্রতি বছর গৃহহারা হচ্ছে শত শত পরিবার। ভিটে মাটি আর চাষাবাদের ফসলি জমি হারিয়ে আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে দুই নদীর তীরবর্তী মানুষ। বর্ষা শেষে শুষ্ক মৌসুমে মাঠের পর মাঠ বালুচরে পরিণত হয়। জেলা জুড়ে প্রায় ৩৬টি চরাঞ্চল রয়েছে নদীর বুকে।

কৃষকরা জানান, শুষ্ক মৌসুমে কঠোর পরিশ্রম করে ধূ ধূ বালুর ওপর সবুজ ফসলে চরাঞ্চল ভরে তোলেন চাষিরা। শুষ্ক মৌসুমের এই স্বল্প সময়ে চাষাবাদের আয়ে চলে চরাঞ্চলের মানুষের সারা বছরের সংসার। কেউ ঋণ করে আবার কেউ বাকিতে বীজ, সার, কীটনাশক ক্রয় করে বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করেন। ফসল উঠে গেলে ঋণ ও দোকানের পাওনা পরিশোধ করে বাকি সময়টুকু বিকল্প পেশায় আয় রোজগার করে সংসারের চাকা সচল রাখেন।

কিন্তু এ বছর ঘটেছে উল্টো। ধূ ধূ বালুর ওপর হঠাৎ বন্যার আঘাত লাগে তিস্তা পাড়ে। আগাম বন্যায় অনেক ফসল ঘরে তুলতে পারেনি চরাঞ্চলের চাষিরা। এছাড়াও শীতকালিন ফসল আলু, মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টা ও তামাক নষ্ট হয়েছে শিলাবৃষ্টিতে। পেঁয়াজ, রসুন ও মরিচসহ বিভিন্ন সবজি চৈত্র মাসের আগাম বন্যায় ডুবে নষ্ট হয়েছে। বাকি ছিল চরাঞ্চলের সোনা খ্যাত চিনাবাদাম। সেই বাদামও চলতি মাসের টানা বন্যার পানি ডুবে নষ্ট হয়েছে। সব মিলে এ বছর চরাঞ্চলের চাষিরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

এ বছর শুষ্ক মৌসুমের কোনো ফসলই ঘরে তুলতে পারেননি তারা। ফলে চলতি বছর ঋণ ও বাকিতে কেনা বীজ, সার ও কীটনাশকের টাকাও পরিশোধ করতে পারেননি অনেক কৃষক। বড় বিপদ হচ্ছে শুষ্ক মৌসুমের ফসল রাখেন বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগকালিন সময়ের সম্বল হিসেবে। সেটাও এ বছর সঞ্চিত রাখতে পারেননি চাষিরা। ফলে নদীপাড়ের কৃষকের মাঝে দীর্ঘশ্বাস ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই।

তিস্তা নদীর বাম তীরের গোবর্দ্ধন গ্রামের বাদাম চাষি জমির উদ্দিন বলেন, চরের বালু জমিতে কম খরচে অধিক মুনাফা পেতে বাদাম চাষের জুড়ি নেই। প্রতি ২৭ শতাংশ জমিতে বাদাম চাষে খরচ পড়ে মাত্র ৪ হাজার টাকা। আর বাদাম উৎপাদন হয় ৪/৫ মণ। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রতিমণ সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। গেল বছরও শুষ্ক মৌসুমের বিভিন্ন ফসল বিক্রি করে ৫ লাখ টাকা পেয়েছি। এ বছর উৎপাদন খরচও পেলাম না। সব নষ্ট হয়েছে শিলাবৃষ্টি আর আগাম বন্যায়।