আজ মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বদলে যাচ্ছে বান্দরবান-কেরানীহাট মহাসড়ক

অসীম রায় বান্দরবান : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ ১০:২২:০০ অপরাহ্ন | পার্বত্য চট্টগ্রাম

"""বান্দরবান-কেরানীহাট মহাসড়কে পাল্টে দিয়েছে পর্যটন নগরী বান্দরবানের চিত্র। এ মহাসড়ক নির্মাণের ফলে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন হবে। তবে উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে মহাসড়কটি। সেনাবাহিনীর ২০ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন প্রায় ২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মহাসড়কটি নির্মাণ কাজ করেছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই সড়কটির কাজ সম্পন্ন হওয়ায় এটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। আঁকা-বাঁকা পাহাড়ি সড়কে প্রায়সময় দুর্ঘটনায় হতাহত যেন নিত্যদিনের ঘটনা ছিল। বর্ষা মৌসুমে বিভিন্নস্থানে পাহাড়ধসে যোগাযোগ থাকতো বিচ্ছিন্ন। পাশাপাশি বাজালিয়া এলাকায় সড়কটি পানির নিচে তলিয়ে যেতো। ফলে মানুষের শঙ্কা ও দুর্ভোগ ছিল সীমাহীন। বর্তমানে এই পুনঃনির্মাণসহ সড়কটি প্রশস্ত করায় বদলে গেছে বান্দরবানের চিত্র। বান্দরবান-চট্টগ্রাম-বান্দরবান-কক্সবাজার যোগাযোগ ক্ষেত্রে সহজ হয়েছে। আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সেনাবাহিনীর এমন কাজে এলাকাবাসী ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা খুশি। আর স্থানীয়রা মনে করেন, সড়কটি নির্মাণের ফলে এলাকার কৃষকরা উৎপাদিত ফসল সহজে ও কম খরচে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানি করার সুযোগ পাবেন। পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা মনে করেন, বান্দরবান পর্যটন নগরী এখন দেশি-বেদেশি পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। তাই নিরাপদ যান চলাচলের জন্য স্থায়ীভাবে সড়কটি নির্মাণে খুুবই প্রয়োজন ছিল। সেই কাজটিই করেছে বাংলাদেশ সেনবাহিনী। বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কে কত দুর্ঘটনা ঘটেছে, কত প্রাণহানি হয়েছে তার হিসাব নেই। তবে সড়কটি পুনঃনির্মাণ এবং প্রশস্ত করায় পর্যটকদের ভ্রমণ নিরাপদ হয়েছে। ব্যবসায়ীরা মনে করেন, জেলাবাসী আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বান্দরবান-কেরানীহাট মহাসড়কটি। সারাদেশের মতো বান্দরবানে সড়ক যোগাযোগে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ফলে বান্দরবানের সাথে সারাদেশের নিরাপদ নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং বদলে গেছে বান্দরবানের চিত্র। বান্দরবান শৈল সোভা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি/ সম্পাদক জানান, বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কের দীর্ঘদিনের যে সমস্যা ছিল তা এখন লাঘব হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় এলাকার অর্থনৈতিক অবস্থা ও পর্যটনশিল্পের প্রসার ঘটবে। মেয়র মো. ইসলাম বেবী জানান, পর্যটক ও সাধারণ লোকজন এখন স্বাছন্দ্যে অল্প সময়ের মধ্যে বান্দরবান আসতে পারবেন। সরকারের বেশ কয়েকটি সাফল্যের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন অন্যতম বলে তিনি জানান। সূত্রে, সেনাবাহিনীর ২০ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন প্রায় ২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মহাসড়কটি নির্মাণ করেছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই সড়কটির কাজ সম্পন্ন হওয়ায় এটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে অল্প সময়ের মধ্যে এখন চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বান্দরবানে যাতায়াত করা যাচ্ছে। শীঘ্রই এই সড়কটি উদ্বোধন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ২০১৮ সালে বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কটি প্রশস্ত ও উঁচুকরণের প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত¡াবধানে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের অধীনস্থ ২০ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু করে। ৩১ ডিসেম্বর প্রকল্পের শেষ মেয়াদ থাকলেও এর আগেই সড়কটির সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়। ২৬৬.৫৬ কোটি টকা ব্যয়ে মহাসড়কটি নির্মাণে ২১টি ব্রিজ, ১৫টি কালভার্ট, ৩টি যাত্রী ছাউনী, ২১ কিমি ড্রেনেজ নিস্কাশন অবকাঠামো, ৬০২ মিটার রিজিড পেভমেন্ট ওয়ার্ক ও সড়ক বিভাগের একটি পরিদর্শন বাংলো নির্মাণ করা হয়েছে। ২২.৫ কিমি রাস্তার গড় প্রশস্ততা ৫.৫৮ মিটার হতে ৭.৩ মিটার উন্নীতকরণের মাধ্যমে সড়কটিকে মহাসড়ক মানে উন্নীত করা হয়েছে। প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর শাহ সাদমান রহমান জানিয়েছেন, ২৬৬.৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রকল্পটিতে ২১টি ব্রিজ, ১৫টি কালভার্ট, তিনটি যাত্রী ছাউনি, ২১ কিলোমিটার ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ১২১০ মিটার আরসিসি প্যালাসাইডিং সহ বিভিন্ন কাজ রয়েছে। এছাড়া দুর্ঘটনা রোধে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে সতর্কীকরণ চিহ্ন সহ আয়না বসানো হয়েছে। সড়কটির সৌন্দর্য বাড়াতে নির্ধারিত কাজের চাইতেও আরো বেশি কিছু করেছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা।