ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত সিলেট ও সুনামগঞ্জ। এছাড়া মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের বেশ কয়েকটি উপজেলা প্লাবিত হয়। ভয়াবহ বন্যা উপদ্রুত এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে গত এক সপ্তাহে সিলেট বিভাগে ৪৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও জানিয়েছেন দুর্গত এলাকার লোকজন।
এরমধ্যে বেশিরভাগ বন্যার পানিতে ডুবে, বজ্রপাতে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে, টিলা ধসে এবং সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেটের পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে মারা যাওয়াদের মধ্যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৪৭ জনের খবর জানতে পেরেছি।
তিনি বলেন, মারা যাওয়াদের মধ্যে সর্বাধিক সুনামগঞ্জে ২৬ জন, সিলেট জেলায় ১৬, মৌলভীবাজারে ৪ জন, হবিগঞ্জে একজন। মারা যাওয়াদের মধ্যে নারী ও শিশুরাও রয়েছেন।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার কুড়ারবাজার বসত ঘরে ডুবে পানিতে মারা যাওয়া বাহার নামে এক জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আগেরদিন জৈন্তাপুরে বন্যায় নিখোঁজ এক জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
গত বুধবার (২২ জুন) পর্যন্ত সুনামগঞ্জে ১৭ জনের মারা গেলেও বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ জনে।
সিলেটে টিলাধসে একজন, বন্যার পানিতে বিদ্যুতের ছেঁড়া তারে স্পৃষ্ট হয়ে ২ জন এবং নৌকাডুবিতে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। তন্মধ্যে সিলেটের বিশ্বনাথে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত জাহান।
জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল বশিরুল ইসলাম জানান, বন্যার পানিতে ডুবে তার উপজেলায় মা-ছেলেসহ ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আহমেদ হোসাইন জানান, জেলায় বজ্রপাতে ৩ জন ও বন্যার পানিতে ডুবে ২৩ জন এবং মৌলভীবাজারে সাপের কামড়ে ২ জনের, টিলাধসে একজন এবং বন্যার পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আর হবিগঞ্জে বন্যার পানিতে ডুবে এক জন মারা যান।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৌলভীবাজারে এখন পর্যন্ত ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে টিলাধসে একজন, বন্যার পানিতে ডুবে এক শিশু ও মাছ ধরতে গিয়ে জুড়ি ও কুলাউড়া উপজেলায সাপের কামড়ে ২ যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
গত ১৫ জুন থেকে সিলেট বিভাগে ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে বন্যার সৃষ্টি হয়। পানিতে ডুবে গেছে সিলেট জেলা ও নগরের ৮০ ভাগ এলাকা। এছাড়া সুনামগঞ্জ জেলার অন্তত ৯০ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ডুবে যায় এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থার বিপর্যয় ঘটে জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এতে বিভাগের সোয়া কোটি জনসংখ্যার অন্তত ৪০ ভাগ লোকজন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হন। বন্যায় জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।