আজ সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পর্যটকদের অগ্রিম বুকিং নেই বান্দরবানে

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : শনিবার ২২ এপ্রিল ২০২৩ ১২:২৬:০০ অপরাহ্ন | পার্বত্য চট্টগ্রাম

বান্দরবান: ভ্রমণ পিপাসুদের পদচারণায় সারা বছরই মুখর থাকে পার্বত্যজেলা বান্দরবান। বিশেষ করে যেকোনো সরকারি ছুটি, ঈদ,পূজা আর বড়দিনের বন্ধে বান্দরবানে ভিড় করে অসংখ্য পর্যটক। 

 

 বন্ধের কয়েকদিন আগে থেকে জেলার হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস আর চাঁদের গাড়িগুলো বুকিং হয়ে গেলেও এবারে কয়েক দিনব্যাপী সারাদেশে তীব্র তাপদাহ, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার কারণে হোটেল-মোটেল ও চাঁদের গাড়িগুলো বুকিং হয়নি। আর ভরা পর্যটন মৌসুমে দীর্ঘ এই ঈদের বন্ধে পর্যটকদের বুকিং না হওয়ায় পর্যটন ব্যবসায়ীরা আশানুরূপ ব্যবসা করতে না পারার আশঙ্কায় রয়েছেন।

 

পর্যটন নগরী বান্দরবানে প্রতিদিনই ঘুরতে যায় অসংখ্য পর্যটক, আর যেকোনো সরকারি ছুটিতে জেলার হোটেল-মোটেল আর পর্যটনকেন্দ্রগুলো ভরে ওঠে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়ে। যেকোনো ছুটির বন্ধে কয়েকদিন আগেই বুকিং হয়ে যায় বেশিরভাগ হোটেল-মোটেল।  

জেলার মেঘলা, নীলাচল, নীলগিরি, শৈলপ্রপাত, প্রান্তিক লেক ,চিম্বুকসহ অসংখ্য পর্যটনকেন্দ্র ভ্রমণ করে পর্যটকরা হয় বিমোহিত। তবে এবার শবে কদর, সাধারণ ছুটি ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে টানা সরকারি ছুটিতে আশানুরূপ পর্যটকদের সাড়া পাচ্ছেন না আবাসিক হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা।

বান্দরবানের আবাসিক হোটেল হিলটনের ম্যানেজার মো. আক্কাস বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের হোটেলে ৭২টি কক্ষ রয়েছে আর তার মধ্যে ২৫ ও ২৬ এপ্রিলের জন্য মাত্র ৩০টি কক্ষ বুকিং হয়েছে। এবারের বন্ধে আমাদের বেশিরভাগ কক্ষ বুকিং হয়নি।  

তিনি বাংলানিউজকে আরও বলেন, প্রতিবছর ঈদের আগে আমরা অনলাইনে ও ফোনে অসংখ্য কক্ষ বুকিং করে ফেলি, কিন্তু এবারের পরিস্থিতি আমাদের ব্যবসায়ীদের জন্য সুখবর নয়।  

আবাসিক হোটেল হিলভিউয়ের ম্যানেজার অভিজিৎ দাশ বাংলানিউজকে বলেন, বিগত বছরগুলোতে এ সময় ৮০ ভাগ কক্ষ আগাম বুকিং নিয়ে নিতেন ভ্রমণ প্রত্যাশীরা, এবার পাঁচ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়েছে। রুমা-রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় বান্দরবান ভ্রমণে পর্যটকরা নিরুৎসাহিত হচ্ছে।  

এদিকে শুধু হোটেল-মোটেল নয় পাশাপাশি পর্যটকদের ভ্রমণের পছন্দের অন্যতম বাহন চাঁদের গাড়িগুলো বুকিং হয়নি একটিও। ঈদের কয়েকদিনের টানা ছুটিতে বান্দরবানে অগ্রিম বুকিং না হওয়ায় চিন্তিত পরিবহণ মালিক ও শ্রমিকরা।  

বান্দরবান মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. জাফর ইকবাল বাংলানিউজকে জানান, আমাদের বান্দরবান সদরে ৪০০টি চাঁদের গাড়ি রয়েছে। গাড়িগুলোর সঙ্গে প্রায় ৭০০ শ্রমিক জড়িত রয়েছেন।  

তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর যেকোনো বন্ধে বান্দরবানে প্রচুর পর্যটক ভ্রমণে আসেন। আর আমরা তাদের বান্দরবানের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে আনন্দের সঙ্গে ভ্রমণ করাই, তবে এবার প্রচণ্ড তাপদাহ আর সে সঙ্গে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উপজেলায় পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করায় বান্দরবানে এখন কোনো পর্যটন ভ্রমণে আসছে না আর আমরা চালক ও শ্রমিকদের নিয়ে কষ্টে দিনযাপন করছি।

পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদ উপলক্ষ্যে আগামী ২৪ ও ২৫ এপ্রিলের জন্য মাত্র ১০ শতাংশ হোটেলের কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়েছে। হাতেগোনা দু-চারটি কক্ষে পর্যটক রয়েছে বর্তমানে। জেলার তিন উপজেলায় (রুমা, রোয়াছড়ি, থানচি) পর্যটক ভ্রমণে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ থাকায় এবারের ঈদে আশানুরূপ পর্যটক বান্দরবানে না আসার সম্ভাবনা রয়েছে।  

বান্দরবান আবাসিক হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি অমল কান্তি দাশ  বাংলানিউজকে জানান, প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ ও তিন উপজেলা ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় এবার পর্যটকের তেমন সাড়া নেই। পুরো রমজান মাসে বান্দরবানে পর্যটক আসেনি বললেই চলে আর আমরা এই সময়টা সব হোটেল-মোটেল পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে নতুনভাবে সাজিয়েছি।  

সভাপতি অমল কান্তি দাশ বলেন, বান্দরবান একটি পর্যটন জেলা আর এখানে অবশ্যই পর্যটকরা ভ্রমণে আসবেন, এটা আমাদের প্রত্যাশা। আর পর্যটকদের সার্বিক সুন্দর ভ্রমণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা পর্যটন ব্যবসায়ীরা সচেষ্ট রয়েছি।  

তিনি আরও বলেন, পর্যটকদের ভ্রমণের সুবিধার্থে বান্দরবান পৌর এলাকায় ৭০টি আবাসিক হোটেল-মোটেল ও কটেজ গড়ে উঠেছে, যেখানে প্রায় ৬ হাজার পর্যটক ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। পর্যটকদের পরিবহণের জন্য বান্দরবানে চাঁদের গাড়ি রয়েছে প্রায় ৪০০টি। আর ২০২২ সালের অক্টোবর মাস থেকে দফায় দফায় জেলায় পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় বান্দরবানের পর্যটন শিল্প এখন থমকে গেছে।