বৃষ্টিপ্রবন এলাকা পার্বত্য বান্দরবান । এ জেলায় রয়েছে বিপুল পরিমাণ অনাবাদি জমি। এই জমিতে পাম চাষ করে তেল উৎপাদনের সম্ভাবনার গল্প শোনানো হয়েছিল উদ্যোক্তাদের। তখন অনেকেই এগিয়ে এসেছিলেন পাম ওয়েল গাছের বাগান করতে। কেউ কেউ শুরুও করেছিলেন পাম বাগান। শুধুমাত্র সঠিক ব্যবস্থাপনা ও পাম তেল প্রক্রিয়া করণের অভাবে পাম চাষ শিল্পে রূপ পায়নি। উল্টো হতাশ হয়ে পড়ে উদ্যোক্তারা। এমনই একজন উদ্যোক্তা হল নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড পূর্ব হেড়ম্যান পাড়ার মৃত্যু মনছুর আলীর পুত্র কৃষক নাজের হোসাইন। তিনি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলেন, ‘২০১১ সালে ৮ একর পাহাড়ি জমির উপর লাগিয়েছিলাম ৩২০টি পাম গাছের চারা। প্রতিটি চারার দাম পড়ে ৩০০ শত টাকা। ১১ বছর পরিচর্যা করে এক টাকাও আয় হয়নি। বরং, পরিচর্যা করতে গিয়ে আমার লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ঘরের গরু, নিজের স্ত্রীর স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পাম চাষে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখায় কৃষি বিভাগ ও কিছু কোম্পানি। তাদের প্রলোভনে আমিসহ নাইক্ষ্যংছড়ির অনেকে পাম চাষে পা বাড়াই। একটি কোম্পানির কাছ থেকে প্রতিটি চারা ৩ শত টাকা দামে ক্রয় করেন। ১৬ মাসের মাথায় প্রতিটি গাছে ফল ধরেছিল,। কিন্তু তেল প্রক্রিয়াজাত মেশিন না থাকায় কিছুই করা সম্ভব হয়নি। এক পর্যায়ে পঁচে নষ্ট হয়েছে ফলগুলো।’ এখনো শোনাচ্ছেন সম্ভাবনার গল্প। তিনি বলেন, ‘সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব, ও অসহযোগিতার জন্য এই সম্ভাবনাময় পাম চাষ শিল্পে রূপ নেয়নি। যদি সরকারের সহযোগিতা পেত তাহলে হয়ত আশার আলো দেখতাম। পাম গাছ গুলোতে এখন ফল ধরছে। কিন্তু এটা প্রক্রিয়াকরণের সুযোগ না থাকায় সম্ভাবনা থাকলেও আমি পাম ওয়েল গাছের ফলগুলো কোনো কাজে লাগাতে পারছি না।’ ইউপি সদস্য জাফর আলম বাংগালী বলেন, তেল উৎপাদনে যেতে হলে প্রক্রিয়াকরণ মেশিন দরকার পাম চাষের সম্ভাবনা, প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন। বিনিয়োগের আগে ব্যবসায়ীরা আদৌ লাভোবান হবেন নাকি ক্ষতির মুখে পড়বেন তা যাচাই বাছাই করতে হবে।’ গত ৩ রা নভেম্বর উপজেলা রাজস্ব খাত নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর কার্যলয়ে প্রধান মন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিটি জেলায় তেলের চাহিদা মেটানোর জন্য এক জরুরি সভার আয়োজন করা হয়। এ সভায় উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনার সামশুদ্দিন মোঃ রেজা, মৌজা হেডম্যান, চেয়ারম্যান সহ উপজেলা সার্ভেয়ার ওয়াহিদুল্লাহ পারভেজ উপস্থিত ছিলেন। সভায় ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটানোর লক্ষে প্রতিটি মৌজায় ৫ একর ভুমিতে সরিষা, পাম ওয়েল ও আখ চাষের উপর পর্যালোচনা সহ বর্তমান সৃজিত নাজের হোছেনের পাম বাগান নিয়ে আলোচনা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৪ নভেম্বর নাজের হোসেনের পাম বাগান সরজমিন এ পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের প্রতিনিধি সার্ভেয়ার ওয়াহিদুল্লাহ পারভেজ। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মোঃ ওয়াহিদ উল্লাহ পারভেজ বলেন আমি বিষয়টি বিস্তারিত আকারে ইউ এন ও স্যারকে জানাব। সার্ভেয়ার ওয়াহিদুল্লাহ বলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন নিজেদের প্রয়োজনীয় খাদ্য নিজেরা উৎপাদন করতে হবে। জাতির জনকের মহা মূল্যবান বাণী অনুসরণ করে সম্মানিত কৃষক ভাইদের তেলজাতীয় ফসলের আবাদ বৃদ্ধি করে দেশকে তেল সংকট থেকে রক্ষা ও পাশাপাশি মানুষের পুষ্টিগুণ বাড়ানোর জন্য তিনি পরিদর্শন কালীন উপস্থিত কৃষকদের উদ্দুদ্ধ করেন।