বান্দরবানের লামার আজিজনগর হতে ১৯৮৬-৮৭ সালে শুরু হয় গজালিয়া ১৮ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ পার হলেও শেষ হয়নি এ সড়কের নির্মাণ কাজ। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। বান্দরবান সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোসলেহ্ উদ্দীন চৌধুরী জানিয়েছেন, ১৮ কিলোমিটার সড়কটির প্রথম ১০ কিলোমিটার প্রশস্থ করা হবে এবং ৮ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণ কাজ খুব দ্রুত শুরু করা হবে। এলাকাবাসীর প্রত্যাশা এবার সড়কটি দ্রুত নির্মাণ করা হলে আজিজ নগর হতে লামার দুরত্ব কমবে ১৭ কিলোমিটার। ওই অঞ্চলের দশটি গ্রামের কৃষকের ভোগান্তি কমবে। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে জনবহুল ইউনিয়ন শিল্পনগরী আজিজ নগর ইউনিয়ন। প্রায় ১৯ হাজার মানুষের বসবাস। এখানকার মানুষকে বিভিন্ন কাজে কক্সবাজার জেলা চকরিয়া উপজেলা হয়ে লামা উপজেলায় যেতে হয়। যার দুরত্ব প্রায় ৪৬ কিলোমিটার। অথচ গজালিয়া ইউনিয়ন হয়ে লামা উপজেলার দুরত্ব মাত্র ২৯ কিলোমিটার। আজিজ নগর থেকে গজালিয়া হয়ে লামায় যে সংযোগ সড়কটি আছে। ইতোমধ্যে ১০ কিলোমিটার পিচঢালা চলাচল যোগ্য। বাকি নাজিরাম ত্রিপুরা পাড়া থেকে ডিসি রোড পর্যন্ত ব্রিক সলিড কিছু, কাচা রাস্তা, বড় বড় গর্ত হয় গাড়ী চলাচলের অনুপযোগী ৮কিলোমিটার সড়ক। শুষ্ক মৌসুমে কিছু মোটরসাইকেল, তিন চাকার মহিন্দ্র গাড়ী ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী বহন করে থাকে। সরেজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকার কারণে পুরো রাস্তাজুড়ে বড় বড় গর্ত, খানাখন্দে ভরা। গাড়ি চলাচলের অনুপযোগী। আসাই মং মারমা, গজালিয়া ইউনিয়নের রেমং মেম্বার পাড়ার বাসিন্দা। তিনি আজিজ নগরে চাম্বি হাই স্কুল এন্ড কলেজে এইচএসসি ১ম বর্ষ পড়েন। তিনি জানান, প্রতিদিন সকাল ৮টায় বাড়ি থেকে হাঁটা শুরু করেন, দেড় ঘন্টায় কলেজে পৌঁছেন। সড়কটি নির্মাণ হলে অল্প টাকায় গাড়িতে যাতায়াত করতে পারতেন, সময়ও বেঁচে যেত। লেখাপড়ায় আরও মনযোগী হতে পারতেন। তিনি আজিজ নগর হতে গজালিয়া সড়কটি দ্রুত নির্মাণ কাজ শুরু করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন। রেমং মেম্বার পাড়ার গ্রাম প্রধান (কার্বারী) মং মং মারমা বলেন, আজিজ নগর হতে গজালিয়া ডিসি রোড পর্যন্ত সড়কটি ১৯৮৬-৮৭ সালে সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্ত ৩৬ বছরেও সড়কটি চলাচলের যোগ্য হয়নি। সড়কটি পুনঃনির্মাণ করা হলে কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত পণ্য সহজেই পরিবহন করে বাজারজাত করতে পারতেন। কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতেন। বিভিন্ন পাড়া থেকে গজালিয়া হাই স্কুলে পড়তে আসা প্রায় ৫০-৬০ জন ছাত্রছাত্রী যাতায়াত করতে সুবিধা পেত। ইসলামপুরের গ্রাম সর্দার মো. সোহেল সর্দার বলেন, অনেকদিন ধরেই শুনে আসছেন আজিজ নগর-গজালিয়া রোডটি চালু হবে, পুনঃনির্মাণ হবে। কিন্তু কবে সড়কটি নির্মাণ হবে, কেউ জানেন না। সড়কটি নির্মাণ না হওয়ার কারণে ১০টি গ্রামের কৃষক তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে পরিবহনের সমস্যায় পড়তে হয়। শ্রমিকের মজুরি দিতে দিতে কৃষকের লাভ কিছুই থাকে না। ফলে কৃষক পণ্যের ন্যায্য মূল্য পায় না। তাই সড়কটি যত দ্রুত নির্মাণ হবে, গ্রামগুলোর কৃষকের অর্থনৈতিক অবস্থা তত দ্রুত উন্নতি হবে বলে মনে করেন তিনি। গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বাথোয়াইচিং মারমা জানান, দীর্ঘদিন ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি গজালিয়া হতে আজিজনগর ৮ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করার জন্য বান্দরবান সড়ক ও জনপথ অধিদফতরকে নির্দেশ দিয়েছেন। গজালিয়া ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। সড়কটি চালু হলে কৃষক কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণে পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবে। স্কুল-কলেজে যাতায়াতে ছাত্র-ছাত্রীরাও সবাই উপকৃত হবেন। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোসলেহ্ উদ্দীন চৌধুরী জানান, প্রথম দশ কিলোমিটার সড়কটি প্রশস্ত করা হবে এবং বাকি ৮ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে, এটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। অনুমোদন পেলে কাজ অতিদ্রত শুরু করা হবে বলে জানান তিনি।