শীতকালে আমলকী খেলে যেসব উপকারিতা পাওয়া যায়। খালি পেটে আমলকী খেলে যেসব উপকারিতা পাওয়া যায় আকারে ছোট হলেও আমলকীর গুণ অনেক। এই ফলটি সাধারণত শীতকালে পাওয়া যায়। তবে বিভিন্ন উপায়ে বছরজুড়ে সংরক্ষণ করে রাখা যায়। আমলকীর ফল ও এর পাতা দুটিই ঔষধি গুণের জন্য বিখ্যাত। এটি কাঁচা খাওয়া যায়, আবার আচার বানিয়েও খাওয়া যায়। জুস বানিয়ে বা বিশেষ উপায়ে শুকিয়ে রেখে সারা বছর এই ফল ভেজানো পানিও পান করা যায়। *সিভিল সার্জন ডা: নিহার রঞ্জন নন্দী,বলেন - পুষ্টিগুণ :সুপারফুড হিসেবে খ্যাত আমলকীতে থাকা উপাদানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হলো ভিটামিন-সি। এই ভিটামিন আমলকীতে এত বেশি পরিমাণে থাকে, যার পরিমাণ কমলা বা অন্যান্য লেবুর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। বলা হয়ে থাকে, একটি আমলকীর সমান ভিটামিন-সি পেতে হলে অন্তত তিনটি কমলা খেতে হবে। আমলকীকে বলা হয় শক্তিশালী ফাইটোকেমিক্যালসমৃদ্ধ ফল; যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বাড়াতে সাহায্য করে এবং শরীরকে ক্ষতিকর রাসায়নিক থেকে মুক্ত রাখে। আমলকীতে থাকা ফাইটোকেমিক্যালগুলোর মধ্যে রয়েছে- ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, ফুরোসিন, গ্যালিক অ্যাসিড, কোরিলাগিন ও কোয়েরসেটিন। আমলকী ফাইবার, প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ম্যাঙ্গানিজ, পটাসিয়াম, কপার এবং বি ভিটামিনের একটি বড় উৎস। এটি একটি কম ক্যালোরিসমৃদ্ধ ফল, (১০০ গ্রামে মাত্র ৪৪ ক্যালোরি), যা ওজন কমানোর জন্য সহায়ক। স্বাস্থ্য উপকারিতা:বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, আমলকীর জুস নানাভাবে হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে। একটি সমীক্ষা বলছে, ১২ সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন দুবার ৫০০ মিলিগ্রাম করে আমলকীর নির্যাস গ্রহণ করলে রক্তে কোলেস্টেরল এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক কমে যায়। আরেকটি ছোট সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১২ সপ্তাহ ধরে আমলকীর নির্যাস গ্রহণ করলে অতিরিক্ত ওজন বা স্থুলতার সমস্যায় ভোগা প্রাপ্তবয়স্কদের হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। আরও কিছু সমীক্ষা বলছে, আমলকীর নির্যাস হৃদরোগের জন্য অন্যতম ঝুঁকি রক্তচাপ কমাতেও সাহায্য করে। আমলকীতে এমন কিছু আঁশজাতীয় (ফাইবার) উপাদান আছে, যা আমাদের শরীর খুব দ্রুতই গ্রহণ করতে পারে। আর এই আঁশ আমাদের শরীরের সুগার শোষণের হার কমাতে সাহায্য করে। এভাবে শরীরে সুগারের মাত্রা কম থাকে। ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমলকীতে থাকা উপাদান টাইপ টু ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্যও উপকারী। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের কোষগুলো বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে। এর ফলে বলিরেখাসহ বার্ধক্যের বিভিন্ন রকম ছাপ এবং রোগব্যাধিও দেখা দেয়। এসবের পেছনে মূল কারণ হলো, শরীরে থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক। এ ছাড়া ডিএনএর ক্ষতির সঙ্গেও বিষয়গুলো সম্পর্কিত। আমলকী যেহেতু শরীরে থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক ধ্বংস করে, তাই এটি বার্ধক্য রোধেও কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম। লিভার আমাদের শরীরের বিপজ্জনক রোগজীবাণু ফিল্টার করে। আর কিডনি বিষাক্ত পদার্থগুলোকে ফিল্টার করে শরীর থেকে বের করে দেয়। তাই অঙ্গ দুটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সমীক্ষায় দেখা গেছে, আমলকীতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এদিকে আমলকীতে থাকা অতিমাত্রার ভিটামিন-সি কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এমনকি কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকিও কমায়। চোখ ভালো রাখতে সাহায্য করে ভিটামিন-এ। আমলকীতে থাকা অন্যান্য উপাদানের মধ্যে এই ভিটামিন রয়েছে। ভিটামিন-এ দৃষ্টি ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে। এ ছাড়া আমলকীতে থাকা ভিটামিন-সি চোখকে ব্যাকটেরিয়া থেকে মুক্ত রাখে এবং চোখ ওঠাসহ অন্যান্য সংক্রমণ থেকেও চোখকে নিরাপদ রাখে। হজম শক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে আমলকী। ফলটিতে থাকা আঁশ জাতীয় উপাদান পেটের সমস্যা আইবিএস কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া এতে থাকা ভিটামিন-সি আয়রন এবং মিনারেলসের মতো অন্যান্য উপকারী উপাদানও আমাদের শরীরে হজম করতে সাহায্য করে। চুলের গ্রোথ বাড়াতে ও চুল পড়া রোধ করতে আমলকীর জুড়ি নেই। এসব ক্ষেত্রে উপকার পেতে অনেকে আমলকীর তেল ব্যবহার করে থাকেন। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, টানা ৯০ দিন আমলকী, নারকেল তেলসহ অন্যান্য উপাদানের মিশ্রণে তৈরি সিরাম ব্যবহার করায় অভাবনীয় উপকার পাওয়া যায়। চুল পড়া রোধ হয় এবং চুলের ঘনত্বও বাড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমলকীতে থাকা উপাদান চুলের জন্য ক্ষতিকর এনজাইমকে ধ্বংস করে। ২৭শে নভেম্বর সকালে রোববার ছবি - বান্দরবান বাজার থেকে সংগ্রহ।