আজ মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

খাগড়াছড়িতে মোড়া বানিয়ে বিক্রি করে অভাবের সংসারে অর্থনৈতিক যোগান

বিপ্লব তালুকদার ,খাগড়াছড়ি : | প্রকাশের সময় : রবিবার ৬ নভেম্বর ২০২২ ০৬:০৫:০০ অপরাহ্ন | পার্বত্য চট্টগ্রাম

বাব মায়ের অভাবের সংসারে নিজ উদ্যোগে মোড়া বানিয়ে অর্থনৈতিক যোগান দিচ্ছে কলেজ পড়–য়া এক শিক্ষার্থী। সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সময়ে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা মহিলা কলেজের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী আফরিন সোলতানা প্রতি মাসে ১০/১৫ টি মোড়া বানিয়ে বিক্রি করে মাসে আয় করেছে তিন হাজার টাকার কাছাকাছি। এই শিক্ষার্থী তার পড়ালেখা ছাড়া অন্য সময়টা অর্থ উপার্জনের কাজে লাগিয়েছে সঠিকভাবে। অন্য বান্ধবীরা সময় পেলেই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতো। অভাবের সংসার হওয়ায় বাবা-মায়ের সংসারে কাজ করতো কলেজ শিক্ষার্থী আফরিন সোলতানা। দিনমজুর বাবার সংসাওে তারা দুই বোন । সে পরিবারের সবার ছোট। মাটিরাঙ্গা মহিলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে মহামারি করোনা ভাইরাস। পুরো সময়টা কাজে লাগিয়েছেন সে। বাবার আয়ের পাশাপাশি তার মা বাসায় বসে মোড়া বানিয়ে তা বিক্রি করে বাড়তি অর্থ উপার্জন করে সংসারে যোগান দেয়। যা একটি দরিদ্র পরিবারের জন্য অনেক বড় বিষয়। করোনা কালে এই শিক্ষার্থী বেকার সময় না কাটিয়ে মোড়া বানিয়ে অর্থ উপার্জন করে নিজের খরচ চালিয়ে বাড়তি টাকা পরিবারে দিচ্ছে। জানাগেছে, প্রতিমাসে সে ১০/১৫ টা মোড়া বানায় যা বিক্রি হয় প্রতি জোড়া ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়। এতে খরচ হয় প্রায় ২০০ টাকা। বাকি লভ্যাংসর টাকা দিয়েই চলে নিজের এবং পরিবারের খরচ। গেলো দুই বছর করোনাকালে মায়ের সাথে অসংখ্য মোড়া বানিয়ে বিক্রি করে অর্থ পেয়েছে।এই টাকা নিজের হাতে না রেখে মা-বাবাকে দিয়ে দেয়। এতেকরে টানাটানির সংসারে অর্থ সংকট কমেছে। যা দিয়ে পরিবার চলেছে আগের ছেয়ে একটু ভালোভাবে। আফরিন সোলতানার বাবা পেশায় একজন ফার্নিচার দোকাদেও কাঠ মিস্ত্রী। করোনার আগাতে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হতাস হয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু সেই হতাসার সময়টাতে মেয়ে মোড়া বানিয়ে অর্থ উপার্জন করে সহযোগিতা করেছেন পরিবারকে। শিক্ষার্থী আফরিন সোলতানা বলেন, করোনার সময়ে কলেজ বন্ধ থাকায় আমি আমার বান্ধবীদের সাথে সময় না কাটিয়ে মোড়া বানানোতে সময় দিয়েছি। এতে আমি যে অর্থ উপার্জন করতে পেরেছি তা আমার পরিবারে দিতে পারছি। এতেকরে আমাদের অভাবের সংসারে অনেক কস্ট লাগব হয়েছে। শিক্ষার্থী জানান, ছোট থেকেই দেখেছি অবসর সময়ে আমার মা-চাচীরা এই কাজ করে আসছে। তাদের কাছ থেকে দেখেই আমি শিখেছি। আমি এখন খুব অল্প সময়ের মধ্যে মোড়া বানাতে পারি। প্রতি মাসে ১০/১৫ টি মোড়া বানিয়ে বিক্রি করছি। আর্থের সংকটের কারণে পুঁজি দিতে পারছিনা। যদি কোথাও থেকে ঋণ নেওয়ার ব্যবস্থা হয় তাহলে আরো বেশি পরিমান মানানো সম্ভব হবে। তার মা আকলিমা আক্তার বলেন, করোনায় কলেজ বন্ধ হওয়ার পর থেকে অন্য মেয়েরা বিভিন্ন দিকে ঘুরে সময় পার করলেও আমার মেয়ে বাসায় বসে না থেকে আমার সাথে সময় দিয়ে মোড়া বানিয়ে বিক্রি করছে। এতে যে টাকা আয় হয়েছে তা দিয়ে তার পড়ালেখার খরচ চালিয়ে বাকী সব টাকা বাসায় দিয়েছে। যা দিয়ে পরিবারের বিভিন্ন কাজে লাগানো হয়েছে। এটা আমাদের মা-বাবার জন্য অনেক বড় পাওয়া। তার বাবা মোঃ আরিফ হোসেন জানান, দেশে মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকেই আমার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এতে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে আমার পরিবার নিয়ে। সংসার চালানোর পর মেয়ের পড়ালেখার খরচ চালানো অসম্ভব। এই সময়টাতে আমার মেয়ে তার মায়ের সাথে সময় দিয়ে মোড়া বানিয়ে বিক্রি করছে। তাদের মা-মেয়ের আয় দিয়েই সংসার চলছে। এইকাজ না করল হয়তো পরিবার চালান সম্ভব হতো না। গ্রামের মহিলাদের কাছ থেকে মোড়া কিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা দিল মোহাম্মদ রিফন জানান, আমি গ্রামের মহিলাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সাইজের মোড়া কিনে কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী পাইকারি বিক্রি করে থাকি। এতে আমার যে লাভ হয় তা দিয়ে পরিবার চলে। এই গ্রামের মানুষ গরীব হওয়ার কারনে বেশি পরিমাণ পূঁজি দিয়ে মোড়া বানাতে পারেনা। যদি এই মহিলাদের জন্য ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায় তাহলে এই মোড়ার উৎপাদন অনেক বেশি পরিমান বেড়ে যাবে। খাগড়াছড়ি মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোঃ মহিউদ্দিন বলেন, মহিলাদের জন্য আমাদের এখানে অনেক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। সে চাইলে আমাদের এখানে অন্য কাজগুলো শিখতে পারে। এতে আরো নতুন কিছুতে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে। এছাড়া নারী উদ্যেক্তাদের জন্য আমাদের এখান থেকে সামান্য ঋণ নেওয়ার সুযোগ আছে। যদি সে নিয়ম অনুসারে আবেদন করে তাহলে সেই ঋণ নিয়ে কাজের অগ্রগতি বাড়াতে পারবে।