আজ মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সম্মাননা পেলেন কক্সবাজারের কায়সার

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার: | প্রকাশের সময় : সোমবার ৫ ডিসেম্বর ২০২২ ০৫:৪৩:০০ অপরাহ্ন | পার্বত্য চট্টগ্রাম

 

কোভিড পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রমে সহযোগিতা এবং পারস্পরিক নির্ভরতায় স্বেচ্ছাসেবী কর্মসূচীতে অসামান্য অবদান রাখাই আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী দিবস ২০২২ সম্মাননা পেলেন কক্সবাজারের কৃতি সন্তান কায়সার হামিদ। কায়সার কক্সবাজারের অন্যতম স্বেচ্ছাসেবী ও যুব সংগঠন ইয়াসিদ'র নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সোমবার (৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর এলজিডি ভবনে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী দিবস উপলক্ষে ইউএনভি বাংলাদেশ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, ইউএনএফপিএ বাংলাদেশ, গুড নেবারস বাংলাদেশ, ওয়াটারএইড বাংলাদেশ এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত "আন্তর্জাতিক সেচ্ছাসেবী দিবস সম্মাননা "অনুষ্ঠানে এ সম্মাননা লাভ করেন তিনি। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন, ইউএনভি'র কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর মোঃ আকতার উদ্দিন, গুড নেবারস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মাইনুদ্দিন মইনুল, কইসা'র কান্ট্রি ডিরেক্টর ডু ইয়ং অহ, ডিপুটি রেসিডেন্ট রিপ্রেজেনটেটিভ ভ্যান লিগুয়েন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এডিশনাল সেক্রেটারী মিসেস শিকা সরকার, এলজিইডি'র চীফ ইন্জিনিয়ার এসকে মোঃ মহসিন, স্থানীয় সরকার বিভাগের সেক্রেটারি মোঃ ইবরাহিম প্রমুখ। প্রতি বছর তরুণ ও যুব স্বেচ্ছাসেবীদের বিশেষ অবদানের জন্য এই সম্মাননা ও স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এই বছর যে সকল ইয়ুথ কোভিড পরবর্তী কার্যক্রমে সহযোগিতা এবং পারস্পরিক নির্ভরতায় সেচ্ছাসেবী কর্মসূচীতে অসামান্য অবদান রেখেছে তাদের বাছাই করে সেরা ২০ জনকে এ সম্মাননা প্রদান করে। যার মধ্যে কায়সার হামিদ একজন। সম্মাননা পাওয়ার পর কায়সার হামিদ বলেন, "এই প্রাপ্তি আমার জন্য অনেক আনন্দের ও আবেগের। এটা আমার দীর্ঘ ১২ বছরের সেচ্ছাসেবী কাজের প্রাপ্তি। কৃতজ্ঞতা জানায় ইউএনভি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে।" কায়সার হামিদ কক্সবাজারের তরুণ স্বেচ্ছাসেবকদের আইডল। বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগে যে সকল যুব সংগঠন সমাজিক উন্নয়নে কাজ করছে তার মধ্যে তার হাতে গড়া সংগঠন ইয়াসিদ অন্যতম। তরুণ বয়স থেকে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের দ্বারা মানব সেবার মাধ্যমে নিজেকে অনন্য পর্যায়ে নিয়ে এসেছে সমুদ্র নগরীর এই যুবক। হাজারো তরুণের অনুপ্রেরণার প্রতীক এই যুবক কক্সবাজার সদর উপজেলার অন্তর্গত পিএম খালী ইউনিয়নের মাছুয়াখালি গ্রামের কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছোট বেলা থেকে মানুষের পাশে দাঁড়ানো, মানুষকে সহযোগিতা করা ছিল তার নেশা। ২০১০ সালে এসএসসি পরিক্ষার পর তিনি একটি আন্তর্জাতিক সেচ্ছাসেবী সংগঠনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে হাতেখড়ি তার। এর পরবর্তীতে বিভিন্ন জাতীয়, স্থানীয় সংগঠনে সেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ শুরু করেন কায়ছার। স্বেচ্ছাসেবী কাজের মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা উন্নয়ন, যোগাযোগে দক্ষতা উন্নয়ন, ইংরেজি ভাষাগত দক্ষতা উন্নয়ন সহ নানা বিষয়ে নিজেকে দক্ষ মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেন। সেই দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি পড়াশোনা অবস্থায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে ও গণমাধ্যমে কাজ করার সুযোগ পান। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী বাবা অসুস্থ হয়ে গেলে তিনি পারিবারের হাল ধরেন। ১০ বছর সেচ্ছাসেবী কাজ করার পর তিনি উপলব্ধি করেন, আমার মত কৃষক পরিবারের সন্তান যদি সেচ্ছাসেবী সংগঠনে কাজ করে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে নিজের পায়ে দাড়াতে পারে, মানুষের কল্যানে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারে, তাহলে বাকিরা কেন পারবেনা। তারই পরিপেক্ষীতে তরুণদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়ন ও সমাজিক সমস্যা সমাধানে তরুণদের সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে ২০২০ সালে ইয়াসিদ প্রতিষ্ঠা করেন। ইয়াসিদ প্রতিষ্টার ১ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, বান্দরবান, টেকনাফ, পিএম খালি, চৌফলদন্ডী সহ আরো বিভিন্ন জায়গায় ইয়াসিদের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে ইয়াসিদে সেচ্ছাসেবকের সংখ্যা ২০০ জন। যারা সমাজিক সমস্যা সমাধানে ও মানুষের কল্যাণে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইয়াসিদ করোনাকালীন সময় থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার মানুষকে সরাসরি সহায়তা প্রদান করেছে এবং ইয়াসিদের মাধ্যমে প্রায় তিনশ তরুণ তরুণী দক্ষতা উন্নয়নমূল প্রশিক্ষণ পেয়ে সনামধন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করে পরিবারকে আর্থিক ভাবে সহযোগিতা করছে। ইয়াসিদ বর্তমানে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে সংগীতের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা, তরুণদের দক্ষতা উন্নয়ন, অসহায় ছাত্র-ছাত্রীকে শিক্ষা সহায়তা ও প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি ইয়াসিদ স্থানীয় ও জাতীয় দূর্যোগে এগিয়ে আসে। যারই অংশ হিসেবে কোভিডের সময়,কক্সবাজার ও সিলেটের ভয়াবহ বন্যায় ইয়াসিদ মানুষের পাশে দাড়িয়েছে। তার মধ্যে ইয়াসিদের কোভিডের পরবর্তী সময়ে মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে ভুমিকা উল্লেখযোগ্য।