বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তিন পাহাড়ের মাঝখানে উত্তরে আলীকদম উপজেলা দক্ষিণ পূর্বে মায়ানমারের সীমান্ত মাঝখানে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দৌছড়ি ইউনিয়ের ২নং ওয়ার্ডের ৩৪টি ম্রো পরিবার বসবাস। উভয় দিক থেকে খুবই দুর্গম রেংয় ম্রো পাড়া স্বাধীনতার ৫০ বছর পর আশার আলো দেখছেন, ম্রো -সম্প্রদায়ের অবহেলিত শিশুরা একজন জার্মান প্রবাসী ও সাংবাদিক হোসেন সোহেলসহ ২১ জন স্বেচ্ছাসেবী মিলে তিন পাহাড়ের মাঝখানে স্কুলটি নির্মাণ করে নাম দেওয়া হয়েছে ‘রেংয়পাড়া আশা-হফনুং বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’। জার্মান শব্দ ‘হফনুং’ এর বাংলা অর্থ ‘আশা স্কুলটি পেয়ে মহা খুশি ৩৪ ম্রো পরিবারের লোকজন।
বেশ উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে গত ১লা জুন ২০২৩ এই বিদ্যালয় উদ্বোধন করা হয়।
স্কুলের জন্য রেংয় ম্রো পাড়ার কারবারি (পাড়াপ্রধান) ক্রাতলাই ম্রো পাঁচ একর জমি দান করেছেন। বাঁশ, কাঠ ও টিন দিয়ে তৈরি স্কুলটি মোট চারটি কক্ষ। শিশু শ্রেণি দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্র ছাত্রী ভর্তি করানো হয়েছে ছাত্র ছাত্রী সংখ্যা ৪৫ জন।
১১ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে ২ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
প্রধান শিক্ষক দয়ে রনজন চাকমা বলেন এই দুর্গম পাহাড়ে শিশুরা নতুন বই নতুন ড্রেস এবং স্কুল ব্যাগ পেয়ে মহা খুশি কোমলতি শিক্ষার্থীরা তারা কখনো স্কুল দেখেনি তাদের ছোট থেকে শিক্ষা দেওয়া হত জুম চাষের আজকে স্কুলে এসে পড়তে পেরে তারা খুবই আনন্দিত।
স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি মেননিক ম্রো বলেন এই পাড়ার সংথক ম্রো তার ছেলেকে লেখাপড়া শেখাতে পাঠিয়েছিলেন দূরের এক মফস্বল শহরে। কিন্তু কয়েকবছর পরে সেই ছেলে আর মায়ের কাছে ফিরে তো আসেনি; বরং পরিচয় পাল্টে তাকে ‘ম্রো’ থেকে ‘বড়ুয়া’ করা হয়েছে।এই স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় খুবই গর্ববোধ করছেন তিনি।
সহকারী শিক্ষক ওয়েদিং মুরুং বলেন স্কুলের জন্য একটি টিউবওয়েল,আসবাবপত্র ও শিক্ষা সামগ্রী পেলে শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক উপকার হত।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা শিক্ষা অফিসার ত্রিরতন চাকমা বলেন দুর্গম পাহাড়ে একটি বেসরকারি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শুনে আমি খুবই আনন্দিত হয়েছি এবং তাদের চাহিদা মত নতুন বই শিক্ষার্থীদের জন্য প্রদান করেছি।আগামীতে এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
রেংয় ম্রো পাড়ার কারবারি (পাড়াপ্রধান) ক্রাতলাই ম্রো বলেন, একটি জনবিচ্ছিন্ন আমাদের পাড়ায় হঠাৎ করে স্কুল হবে কল্পনাও করিনি। সাংবাদিক হোসেন সোহেল দায়িত্ব নিয়ে যেভাবে অর্থ সংগ্রহ করে স্কুল তৈরি করে দিয়েছে আমরা সারাজীবন মনে রাখব। এভাবে সহযোগিতা না করলে কোমলতি শিশুরা পড়ালেখা থেকে বঞ্চিত হত তিনি আরও বলেন আশপাশের পাড়াবাসীদেরও এই স্কুলের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করে আগামী দিনগুলোতে সুন্দরভাবে পরিচালনা করা হবে। এবং শিশুদের কথা ভেবে যারা স্কুল করে দিয়েছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা করেন।
দৌছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ইমরান বলেন রেংয় ম্রো পাড়া থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদরের দূরত্ব প্রায় ১৩৫ কিঃমিঃ কোন গাড়ির তেমন যোগাযোগ নেই রেংয় পাড়ার আশপাশে আরও চারটি পাড়া আছে। কিন্তু কোথাও কোনো সরকারি-বেসরকারি; এমনকি ‘পাড়াকেন্দ্র পর্যন্ত নেই। ফলে এসব পাড়ার শিশুদের পড়তে হলে অনেকটা দূরের পাহাড়ি পথ পাড়ি দিতে হয়। আর এসব কারণেই যুগ যুগ ধরে শিশুদের স্কুলে পাঠানোর চেয়ে পরিবার জুম চাষে নিয়ে যেতেই বেশি আগ্রহ তাদের।
আজ একটি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তিনি নিজেকে গর্ববোধ করছেন।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোমেন শর্মা বলেন বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ সরকারের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নতি করেছে। এবং সরকার নিজেদের শিক্ষা বান্ধব সরকার হিসেবে ইতিমধ্যে প্রমাণ করেছেন তাই দূর্গম পাহাড়ে ও শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন তিনি এই স্কুলের জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবেন বলে জানান।