জেলার রামগড়ে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারি খাস খতিয়ানের প্রায় ২৬ একর ভূমি ছয়টি ভুয়া হোল্ডিং সৃজন করে ভূমি অধিগ্রহণে সুবিধা নেয়ার অভিযোগে ৩৬ ব্যক্তির বিরুদ্ধে থানায় ভূমি জালিয়াতির ছয়টি মামলা রুজু করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসকের নির্দেশে রামগড় উপজেলা ভূমি অফিসের অফিস সহকারী কবির আহম্মদ বাদী হয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর বুধবার রাতে এসব মামলা দায়ের করেন।
জেলা প্রশাসকের তদন্তে জালজালিয়াতির প্রমান পাওয়ায় গত ২০ সেপ্টেম্বর ওই ছয়টি ভুয়া বন্দোবস্তি মামলা বাতিল করেন জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ছয়টি ভুয়া বন্দোবস্ত হওয়া ৩৬ জন কথিত ভূমির মালিক, ক্রেতা ও বিক্রেতার বিরুদ্ধে রামগড় থানায় পৃথক পৃথকভাবে ছয়টি মামলা রুজু করা হয়। বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ধারা ৪৬৫, ৪৬৮, ৪৭১, ১০৯ ও ৩৪ পেনাল কোডে এই ছয়টি মামলা রুজু করা হয়।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বারৈয়ারহাট-হেঁয়াকো-রামগড় সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণে সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের জন্য একটি ভূমি জালিয়াত চক্র ভূমি বিভাগের উপজেলা ও জেলা অফিসের অসাধু কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে ছয়টি ভুয়া হোল্ডিংয়ে ২৫ দশমিক ৯১ একর ভূমির ভুয়া বন্দোবস্ত নেয়। রামগড় পৌরসভার ২২৯ নং রামগড় মৌজার অধীনে বারৈয়ারহাট-হেঁয়াকো-রামগড় সড়কের সোনাইপুল থেকে রামগড় বাজার পর্যন্ত এলাকায় রাস্তার দুইপাশের ১ নং সরকারি খাস খতিয়ানভূক্ত ২৫ দশমিক ৯১ একর ভূমি দুর্নীতি ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ছয়টি ভুয়া হোল্ডিং সৃজন করে। জালিয়াত চক্রটি ২০২১ সালের জুন থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে রামগড় উপজেলা ভূমি অফিস ও ২২৯ নং রামগড় মৌজার হেডম্যানের কার্যালয়ের জমাবন্দিতে কাটাকাটি, ঘঁষামাজা ও ওভাররাইটিং করে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ভুয়া বন্দোবস্ত মামলা উল্লেখ করে ভুয়া হোলিংয়ে বিভিন্ন পরিমাণে ২৫ দশমিক ৯১ একর ভূমি বন্দোবস্তের ভুয়া নোটিং করা হয় এবং মালিকানা স্বত্বের প্রতিবেদনে ওই ভূমি সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পে অধিগ্রহণভূক্ত করা হয়।
আরও বলা হয়, ভূমি জালিয়াতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যক্তির লিখিত অভিযোগ, সংবাদপত্র ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের খবরের পরিপ্রেক্ষিতে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসকের গঠিত কমিটির তদন্তে এসব জাল-জালিয়াতির ঘটনার সত্যতা প্রমাণ হয়। ওই তদন্তে উপজেলা ভূমি অফিস বা জেলা প্রশাসকের মহাফেজখানা শাখায় উল্লেখিত ছয়টি বন্দোবস্ত মামলার মূল নথি, কবুলিয়তসহ অপরাপর রেকর্ডপত্রের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
মামলায় রামগড় পৌরসভার মেয়র পৌর আওয়ামিলীগের সভাপতি রফিকুল আলম কামাল ও তার তিন ভাই, সাবেক মেয়র মো. শাহজাহান কাজী রিপন সহ তার ৭ভাই বোন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাফেজ আহাম্মদ ভূঁইয়া সহ তার ভাই ভাতিজা, খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও খাগড়াছড়ি স্থানীয় সরকার পরিষদের সাবেক সদস্য ভুবন মোহন ত্রিপুরা সহ সংশ্লিষ্ট ১০ জন ছাড়াও নুরুল ইসলাম, মোস্তফা ভুইয়া, নুরের নবী চৌধুরী, দীলিপ চন্দ্র রক্ষিত, কামিনী রঞ্জন ত্রিপুরাসহ অন্যান্যদের আসামী করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) মঞ্জুরুল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।তিনি বলেন, জাল জালিয়াতির সাথে জড়িত থাকায় রামগড় ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মো. জাহাঙ্গীর আলম, জেলা কানুনগো দেলোয়ার হোসেন ও রামগড় ভূমি অফিসের চেইনম্যান নুরুল আফসারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ২২৯ নং রামগড় মৌজার হেডম্যান মংসাপ্রু চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সার্কেল চিফকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
রামগড় থানার ওসি (তদন্ত) মো. শফিকুল ইসলাম ছয়টি মামলা রুজুর বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, তিনজন আইও এসব মামলার তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।