শুক্রবার ২১ জানুয়ারী কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন লামা সেন্টারের চিকিৎসা কেন্দ্র শাফিয়ানে সেবাগ্রহীতা মা-শিশু ও তাদের পরিবারের সদস্যসহ মোট ৯ শতাধিক অংশগ্রহণকারী নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় বাৎসরিক অনুষ্ঠান ‘মাতৃমঙ্গল একাত্মায়ন’।
সুস্থ সন্তান ও নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে এবং সুস্থ ও প্রাণবন্ত ভবিষ্যত প্রজন্ম উপহার দেয়ার মানসে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের ভিন্নধর্মী উদ্যোগ মাতৃমঙ্গল কার্যক্রম। এই কার্যক্রমে দুস্থ গর্ভবতী মায়েদের সম্পূর্ণ বিনা খরচে পুষ্টি, চিকিৎসা ও নিরাপদ ডেলিভারি সেবা প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ফাতেমা পারুল। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘ত্যাগের মাধ্যমেই প্রকৃত সুখ লুকিয়ে থাকে। আজকের এই আয়োজন দেখে তা বোঝা যাচ্ছে। কারণ মায়েদের বিপদে-আপদে যে-কোনো সেবা কোয়ান্টাম দিয়ে যাচ্ছে নিরলসভাবে এবং বিনা পয়সায়। আমি এই কার্যক্রমের জন্যে তাদের ধন্যবাদ জানাই।’ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ৫ নং সরই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইদ্রিস। আরো উপস্থিত ছিলেন ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার অংজারুং ত্রিপুরা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম সেন্টারের অর্গানিয়ার কো-অর্ডিনেশন এস এম সাজ্জাদ হোসেন।
মায়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয় বিষয়ে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মোহরার মাতৃসদন হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. ওয়াহিদা বেগম রোজি।
আগত মা-শিশু ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অধিকাংশই ছিলেন স্থানীয় অধিবাসী। তাদের একজন খোদেজা বেগম তার অনুভুতি প্রকাশ করেন। তিনি তার স্বামী মনির হোসেন ও দুই সন্তানকে নিয়ে অনুষ্ঠানে আসেন। খোদেজা বেগম বলেন, ‘আমার ছোট সন্তানের বয়স এখন সাত মাস। আমার বাচ্চা যখন পেটে ছিল তখন থেকেই আমি কোয়ান্টামের সেবা নিয়ে যাচ্ছি এবং পুষ্টিকর খাবার আমি এখান থেকে পেয়েছি। আল্লাহর রহমতে আমার বাচ্চা সুস্থ স্বাভাবিক জন্ম নিয়েছে।’ এছাড়া আরো অনুভুতি ব্যক্ত করেন ফুটফুটে শিশু কোলে নিয়ে আসা টঙ্গঝিরি পাড়ার পুস্পিতা ত্রিপুরা।
অনুষ্ঠান শেষে সকল মায়েদের উপহার হিসেবে শীতের কম্বল দেয়া হয়। আলাদাভাবে শিশুদের জন্যে ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয় এই অনুষ্ঠানে। দুপুরে আপ্যায়ন গ্রহণের মধ্য দিয়ে এবারের আনন্দ আয়োজনের সমাপ্তি ঘটে।
উল্লেখ্য, কোয়ান্টামের এ মাতৃমঙ্গল কার্যক্রম ২০০৫ সালে চট্টগ্রামে শুরু হয়। এই কার্যক্রমের আওতায় অসচ্ছল সুবিধাবঞ্চিত গর্ভবতী মায়েদের গর্ভধারণের ৩ মাস থেকে শুরু করে ডেলিভারির সময় ও সন্তান জন্মের পর ৪০ দিন পর্যন্ত একজন মায়ের সম্পূর্ণ চিকিৎসা, ওষুধ ও পুষ্টিসেবা দেয়া হয়। জন্মের ৪০ দিন পর্যন্ত যাবতীয় চিকিৎসা ব্যয়ও প্রদান করে কোয়ান্টাম। দুস্থ, বস্তিবাসী, গৃহকর্মী, নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ এবং অবহেলিত পাহাড়ি জনগোষ্ঠী মুরং, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যাসহ পাহাড়ি বাঙালি প্রতিটি ধর্মের মায়েরা এ সেবার অন্তর্ভুক্ত। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রাজবিলা ও লামায় মাতৃমঙ্গল কার্যক্রমের আওতায় এ পর্যন্ত ২৫ হাজার ৫১৩ জন প্রসূতি এই সেবা গ্রহণ করেছেন।