বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত 'ড্রাগন কিং' তোয়া ম্রো ৪ ঠা নভেম্বর শনিবার রাতে পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং,এমপি'র সাথে বান্দরবানস্থ বাসভবনে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। জাতীয় পদক পেয়ে তোয়া ম্রো অনেক অনেক খুশি। কৃষি ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে মন্ত্রী তোয়া ম্রো কে ব্যক্তিগত ভাবে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দিলেন। সফল একজন বাগান চাষী হিসেবে তোয়া ম্রো অনেকের কাছে অনুকরণীয় এক নাম। বান্দরবানের ' ড্রাগন কিং' তোয়া ম্রো সেরা কৃষকের জাতীয় পুরস্কার পেলেন । তিনি প্রতিবছর ড্রাগনসহ নানা দেশী বিদেশী ফল চাষ করে দারুণ সাফল্য পেয়েছেন। ১৩ ই অক্টোবর বৃহস্পতিবার সূত্রে জানা যায় মোঃ মোফিজুল ইসলাম মামুন ( জি,এম, ল্ববুনী লিঃ) তোয়া মুরংকে ড্রাগন চাষের কথা । কয়েক মাসে আগে হঠাৎ করেই একটা গ্রামে তার সাথে পরিচয়। তার সম্পর্কে কয়েক বছর আগেই সফল ড্রাগন চাষি হিসাবে জানতাম। এদিন তার সাথে ছবি তোলার লোভ সামলাতে পারিনি। মাত্র ৫ ম শ্রেনী পাশ করা বসন্ত পাড়ার এ চাষী ওয়ার্ল্ড ভিশনের পরামর্শে ফলের বাগান করা শুরু করেন ২০১৫ সালে। প্রায় ২০একর পাহাড়ী জমিতে তিনি ২০১৮ সালে ড্রাগন চাষ করা শুরু করেন। প্রতি বছর ১২/১৫ লাখ টাকার ড্রাগন বিক্রি করেন। এছাড়া অন্যান্য ফলমুল বিক্রি করেন ১৫/২০ লাখ টাকার। সাদাসিদে এ মানুষটি হতে পারে দেশের ফলচাষীদের আইকন। আর বান্দরবানের সফল কৃষকের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। অভিনন্দন আবারো তোয়া মুরংকে। পাহড়ে ড্রাগন চাষিদে মুখে হাসি। ড্রাগন ফল পুষ্টিকর এই ফলের চাষ দিন দিন বাড়ছে। এক দশক আগেও দেশে ড্রাগন ফলের উৎপাদন তেমন ছিল না। বছর ছয়েক আগে বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হওয়া এই ফলের উৎপাদন ছাড়িয়েছে লক্ষ টাকা বেশি কেজি ২০০/৩০০ করে যার বাজারমূল্য কয়েক লাখ টাকা। ড্রাগন ফলের মোট উৎপাদনের প্রায় অর্ধেক হচ্ছে তিন পর্বত্য জেলায়। কৃষকের জন্য সর্বোচ্চ মুনাফা প্রদানকারী ফলের অন্যতম ড্রাগনের চাষ এখন সারা দেশে সম্প্রসারিত হচ্ছে। পার্বত্য জেলায় ড্রাগন ফলের বাণিজ্যিক আবাদ শুরু হয় ২০১৪ সালের পর। অর্ধযুগের ব্যবধানেই ড্রাগন ফল আবাদে শীর্ষে উঠে এসেছে তিন পার্বত্যজেলা । এখন দেশের মোট উৎপাদনের ৩৯ শতাংশ বা প্রায় ৩৩ লাখ ৫৩ হাজার কেজি উৎপাদন হচ্ছে এই ৩ জেলায়। ড্রাগন ফল আবাদের মাধ্যমে এই অঞ্চলের কৃষকরা যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, তেমনি পুষ্টি নিরাপত্তায়ও ভূমিকা রাখছেন। পাশাপাশি শস্য আবাদে বৈচিত্র্য আসছে জেলায়, বিশেষ করে এ অঞ্চলের কৃষকরা এখন প্রথাগত ধানের আবাদের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ফলের আবাদে ঝুঁকছেন। ড্রাগন ফল উৎপাদনে এর পরই তিন জেলায় অবস্থান। জেলায় ৯ লাখ ৬৫ হাজার কেজি ড্রাগন ফল উৎপাদন হয়েছে গত অর্থবছরে। এ ছাড়া ৩ জেলায় ছয় লাখ ৪০ হাজার কেজি, তিন লাখ ৯৫ হাজার এবং তিন লাখ ২৫ হাজার কেজি ড্রাগন ফল উৎপাদন হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্যমতে, ২০১৪--১৫ অর্থবছরে দেশে ড্রাগন ফলের উৎপাদন ছিল মাত্র ৬৬ হাজার কেজি। ২০২০--২১ অর্থবছরে তা উন্নীত হয়েছে প্রায় ৮৬ লাখ ৫৯ হাজার কেজিতে। সদ্যঃসমাপ্ত ২০২১--২৩ অর্থবছরে উৎপাদন প্রায় লক্ষ কেজি হয়েছে বলে মাঠ পর্যায় থেকে প্রাথমিক তথ্যে উঠে এসেছে। ড্রাগন চাষি মংথুই বম জানান, তিন বছর ধরে তিনি ৪০ শতাংশ জমিতে ড্রাগন চাষ করছেন। বছরে এক লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করে তিনি প্রতিবছর চার লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করেন। তবে শুরুতে বাগান তৈরির সময় ৪০ শতাংশ জমিতে চারা ও আনুষঙ্গিকসহ পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়েছিল। বর্তমানে সার, ওষুধ ছাড়া আর কোনো খরচ নেই। কৃষকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সাধারণত ফলের মৌসুম শেষ হয় জুন ও জুলাই মাসে। পরই ড্রাগন ফলটি বাজারে আসতে শুরু করে। মৌসুমের শুরুতে কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি ড্রাগন ফলের দাম ২০০ টাকার বেশি থাকে। আগস্ট মাসে যা প্রতি কেজিতে আড়াই শ টাকা পর্যন্ত পান কৃষকরা। রাজধানীর বাজারে ড্রাগন ফল প্রতি কেজি ২৮০থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়। ভোক্তা পর্যায়ে গড়ে ৩০০ টাকা কেজি ধরলে ফলটির বর্তমান বাজার প্রায় ২০০ কোটি টাকার। বান্দরবান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ উমর ফারুক বলেন, উপজেলায় ১২ জন চাষি ৩০ বিঘা জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ করেছেন। ভালো ফল পেয়ে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন।