আজ শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মাঠে দোল খাচ্ছে সাদা ফুলের 'কালো সোনা'

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ১৭ মার্চ ২০২২ ১২:২২:০০ অপরাহ্ন | দেশ প্রান্তর
মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে সাদা সাদা ফুল। আর ওই সাদা ফুলে ভেতরে লুকিয়ে আছে কালে বর্ণের পেঁয়াজবীজের দানা। এসব বীজের বাজার দর চড়া হওয়ায় চাষীরা এ বীজকে 'কালো ‌সোনা' বলেও আখ্যায়িত করেন।

জানা যায়,  বেশ কয়েক বছর ধরে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নে বাণিজ্যিক ভাবে এসব পেঁয়াজবীজ উৎপাদনহচ্ছে। অর্থনৈতিক ভাবে লাভজনক হওয়ায় দিন দিন পেঁয়াজবীজ উৎপাদনে কৃষকদের মাঝে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। তবে কিন্তু উপজেলাটিতে মৌমাছি সংকটের কারণে পেঁয়াজ ফুলে পরাগায়ন না ঘটায় উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বেশির ভাগ কৃষক তাদের পরিবারের লোকজনকে সাথে নিয়ে হাতের স্পর্শে কৃত্রিমভাবে পরাগায়ন ঘটানোর চেষ্টা করছেন।
 
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল, পাড়িয়া, ও ধনতলা ইউনিয়নের সাবাজপুর, রায়মহল, পাতিলভাষা, মরিচপাড়া, খোচাবাড়ী, বাঙ্গাটুলি গ্রাম ঘুরে এমন দৃশ্য লক্ষ্য করা গেছে। পেঁয়াজবীজ নিয়ে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বালিয়ডাঙ্গী উপজেলার চাষিরা।

চাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জমিতে পেঁয়াজবীজ বপনের সময় নভেম্বরে। বীজ পরিপক্ব হতে সময় লাগে চার মাস ১০ দিন। পেঁয়াজ ফুলে পরাগায়ন না হলে পরিপক্বতা আসে না। আর এসব ফুলে পরাগায়নের প্রধান মাধ্যম হলো মৌমাছি। পোকার আক্রমণ থেকে ফসল বাঁচাতে কৃষকেরা খেতে কীটনাশক ছিটান। কিন্তু সেই কীটনাশকে মারা পড়ছে উপকারী পোকা ও মৌমাছি। এ কারণে পেঁয়াজবীজের খেতে দিন দিন মৌমাছির আনাগোনা কমে যাচ্ছে। তাই হাতের স্পর্শে কৃত্রিমভাবে পরাগায়নের চেষ্টা করছেন তাঁরা।

বেসরকারি একটি কোম্পানীর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে চলতি মৌসুমে চাড়োল গ্রামের আতাউর রহমান ১ একর জমিতে পেঁয়াজবীজ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, পেঁয়াজবীজ কোম্পানী দেয় কোম্পানী থেকে, উৎপাদন করতে হয় নিজ খরচে। পুরো জমিতে পেঁয়াজবীজ উৎপাদন করতে ব্যয় হয়েছে দেড় লাখ টাকা। উৎপাদন শেষে তারাই কিনবেন ১ হাজার দুইশত টাকা কেজি দরে। খেত প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার না হলে ৬০০-৭০০ কেজি পেঁয়াজবীজ হবে বলে আশা করছেন তিনি। যার মূল্য প্রায় ৭ লাখ টাকা।

পাশের খেতে হায়দার আলী চার বিঘা জমিতে পেঁয়াজবীজ চাষ করেছেন। তিনি জানান, বাজারে দর থাকায় তাঁর কাছে পেঁয়াজবীজ সোনা চাষের মতো। গেল বছর প্রতি বিঘা জমিতে দেড় লাখ টাকা করে লাভ করেছেন। এছাড়াও খেতের পেঁয়াজ উপহার হিসেবে বিলিয়েছেন পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের মাঝে। চলতি বছর খেতের দেড়গুন ফলন ও লাভের আশা করছেন তিনি।

পেঁয়াজবীজ চাষী আতাউর রহমানের ছেলে দিনাজপুর জেলার কাহারোলে চাকরি করেন একটি বেসরকারি এনজিওতে। পেঁয়াজবীজ উৎপাদনের লাভ দেখে চাকরি ছেড়ে আসতে চান তিনি।

উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, চলতি বছর উপজেলায় বেসরকারি বীজ উৎপাদনকারী কোম্পানীগুলোর আওতায় পেয়াজের বীজ উৎপাদন হয়েছে ২৬ হেক্টর জমিতে। গত বছর কৃষি অফিসের নিজস্ব প্রদর্শনী থাকলেও এবার নেই।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবোধ চন্দ্র রায় বলেন, অফিস থেকে বিভিন্ন পোকা-মাকড় দমনে চাষীদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। বালিয়াডাঙ্গীর পেঁয়াজচাষীরা মানসম্মত বীজ উৎপাদনে সক্ষম। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব পেঁয়াজবীজ বিভিন্ন জেলায় এসব বীজের বেশ কদর রয়েছে।