৭ দিনের রিপোর্ট ১ বছরেও মিলেনা
ময়না তদন্ত মেডিকেল রিপোর্টে দীর্ঘসূত্রিতায়
গত সাত মাস আগে বোয়ালখালীতে এক প্রবাসীর স্ত্রী গণধর্ষণের শিকার হন। পৌরসভার মিরপাড়া এক ভাড়া বাসায় এ লোমহর্ষক ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় প্রবাসীর স্ত্রী বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করলে পুলিশ নারীসহ দুই অভিযুক্ত ধর্ষণকারীকে গ্রেপ্তার করেন।
ঘটনাটি সাজানো ও গ্রেপ্তারকৃতদের পূর্ব শত্রæতার জেরে ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবী করেন গ্রেপ্তারকৃতরা। দীর্ঘ সাত মাসেও ধর্ষিতার মেডিকেল রিপোর্ট না পাওয়ায় এ মামলার কোন কুল কিনারা করতে পারছে না পুলিশ। ভোগান্তিতে বাদী বিবাদী। চট্টগ্রাম মেডিকেলে ২০ বারের অধিক বার গিয়েও রিপোর্ট না পেয়ে ফিরে আসতে হচ্ছে পুলিশকে। এর আগের এ রকম আরো একাধিক ধষর্ণ মামলা এক বছর ধরে মেডিকেল রির্পোটের জন্য আটকে আছে। অথচ এসব রিপোর্ট সাত দিনের মধ্যে দেয়ার নিয়ম থাকলেও মাসের পর মাস গেলেও পাওয়া যাচ্ছে না। হাসপাতালে গিয়ে পদে পদে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে হয়রাণীর শিকার হতে হয়। মেডিকেল রিপোর্টের জন্য খুন,ধর্ষণসহ প্রায় অর্ধশত মামলার তদন্ত কার্যক্রম মুলতবি হয়ে আছে বলে বোয়ালখালী থানা সূত্র জানিয়েছে।
এবছরের ২৬ফেব্রæয়ারি ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে নিহত হন চরণদ্বীপের কিশোর মো. বেলাল হোসেন (১৫)। এনিয়ে ২৮ফেব্রæয়ারি থানায় নিয়মিত হত্যা মামলা দায়ের হয়। একইভাবে ১৯এপ্রিল জমি বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন চরখিজিরপুরের ইছমত আলী (৫৫)। ওইদিনই দায়ের হয় থানায় মামলা। উভয় মামলার প্রধান আসামী গ্রেপ্তারও হয়। তবে গতকাল বুধবার পর্যন্ত এ মামলা দুইটির ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পাইনি পুলিশ। যে কারণে বাদী বিবাদী কেউ যথাযথ আইনি সুবিধা না পেয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন এমন অভিযোগ বাদী বিবাদী উভয়েরই।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, বোয়ালখালীতে গত ৮মাসে শুধুমাত্র হত্যা কিংবা অপমৃত্যু মামলার ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি এমন মামলার সংখ্যা ৭টি। মেডিকেল রিপোর্ট পাওয়া যায়নি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন মামলায় ৮টি, অন্যান্য মামলাসহ প্রায় অর্ধশতের। এসব মামলার ভূক্তভোগীরা কোনো কুল কিনারা না পেয়ে থানা কোর্টের দুয়ারে চক্কর কাটেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিশোর বেলালের এক আত্মীয় জানান, পোস্ট মর্টেম রিপোর্টের জন্য একাধিকবার মেডিকেল হাসপাতালে গিয়েছেন। ওখানের বিভিন্ন কর্মচারীকে প্রতিবার টাকাও দিয়েছেন। আজ পর্যন্ত কোনো কাজ হয়নি। তাদের দুর্ভোগ শোনার যেন কেউ নাই?
এবিষয়ে জানতে চাইলে বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবদুল করিম বলেন, হাসপাতালগুলোতে মেডিকেল রিপোর্ট, এমসি ও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেতে দীর্ঘ সময় লেগে গেলে বিলম্বিত হয় মামলার তদন্ত প্রক্রিয়াও। এতে বিচার পেতে অপেক্ষার প্রহর গুণতে হয় ভুক্তভোগীদের। এক একটি মামলার রির্পোটের জন্য ২০-৩০বার গিয়েও কাজ হয়না। শুধু বোয়ালখালী থানা না চট্টগ্রামের ৩২টি থানাই একই অবস্থা। বিভিন্ন রিপোর্টের জন্য হাসপাতালে তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের লাইন। হাসপাতালের হয়রাণী বন্ধ হলে থানার মামলা জট কমে আসবে বলে তিনি জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রামে একমাত্র চমেক হাসপাতালেই লাশের ময়নাতদন্ত হয়। রিপোর্ট পেতে কেন দীর্ঘ সময় লাগে সে বিষয়ে যৌক্তিক কোনো উত্তর নেই হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। নিয়মানুযায়ী একটি লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হতে এক থেকে দেড় সপ্তাহ সময় লাগার কথা। অন্যান্য মামলায় ৫-৭দিনের বেশি না। কিন্তু মাসের পর মাস এনিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই।
তবে বিষয়টি মানতে নারাজ বোয়ালখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, লাশের পিএম রিপোর্টের বিষয়ে আমি জানি না। আমার কাছে যত এমসি’র দরখাস্ত আসে, আমি চেষ্টা করি ২-১দিনের মধ্যে দিয়ে দেয়ার। তিনি বলেন, ডাক্তারের বদলীর কারণে বিলম্বিত হলে এটা অস্বাভাবিকভাবে নেয়া যাবে না। তিনি বলেন, নানা তদবিরের কারণে এমসি’র আবেদন পার্টির কাছে চলে গেলে, আমাদের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। এখানে অনাকাংখিত কারণে দেরী হয়।
একটি লাশের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেতে কেন এত সময় লাগবে? এমন প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সুমন মুর্শেদী বলেন, তারা তাদের কাজ নিয়মিত করছেন। পুলিশ পুলিশের কাজ করছে। কোথাও জট হলে পুলিশ সরাসরি এব্যাপারে কথা বলতে পারে। ভিসেরা প্রতিবেদন, হিস্টোপ্যাথলজি প্রতিবেদেন পেতে দেরি হলেও এমনটি হতে পারে।