অবাক করার মত ব্যাপার হলেও ঘটনা বাস্তব।কলা সংগ্রহ করার পর ফেলে দেয়া কলাগাছ এবং পাহাড়ে অপ্রয়োজনীয় বনজ গলাগাছ(আগাছা) এখন মুল্যবান সম্পদে পরিনত হয়েছে। বাংলাদেশে প্রথম বান্দরবানে এসব কলাগাছের সুতা থেকে তৈরী করা হচ্ছে জামদানী ডিজাইনের ১৩ হাত লম্বা আর্কষনীয় শাড়ী। প্রথম পর্যায়ে এক কেজী সুতা দিয়ে তিনজন সহকর্মী নিয়ে মাত্র ১৫ দিনে একটি শাড়ী বুননের কাজ সমাপ্ত করেছে সিলেটের মণিপুরী নারী রাধাদেবী। শাড়ীর নাম দেয়া হয়েছে "কলাবতী শাড়ী"। বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি পরিকল্পনা ছিল কি ভাবে বান্দরবানে পিছিয়ে পড়া বেকার নারীদের কর্মসংস্থনের ব্যবস্থা করা যায়। তিনি ২০২১ সালে পরিত্যক্ত কলাগাছের সুতা দিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে জুতা,ফ্লোরমেট,মাদুর,কলমদানী,হ্যান্ড ব্যাগ,অফিস ব্যাগসহ নানান আকর্ষনীয় ও সুন্দর সুন্দর ডিজানের হস্ত পন্য তৈরী করে সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করেন। এর পর এসব পন্য বানিজ্যিক ভাবে উৎপাদন করতে দক্ষ জনশক্তি তৈরী করতে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বেকার নারীদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা হয়। এসব হস্ত শিল্প উৎপাদনে প্রাথমিক পর্যায়ে সফলতা অর্জনের পর জেলা প্রশাসক চিন্তা করেন নতুন কি পন্য তৈরী করা যায়। এবার স্বপ্ন কলাগাছের সুতা দিয়ে কি ভাবে শাড়ী তৈরী করা যায়। স্বপ্ন বাস্তবায়নে সিলেটের মণিপুর থেকে ডেকে আনা হয়েছে রাধাদেবী নামে এক হস্ত শিল্পীকে। তিনি প্রথম পর্যায়ে এক কেজী সুতা দিয়ে তিনজন সহকর্মী নিয়ে মাত্র ১৫ দিনে একটি শাড়ী বুননের কাজ সমাপ্ত করেন। শাড়ী বুনন শিল্প রাধাদেবী জানান,অনেক ভয়ে ভয়ে জেলা প্রশাসকের ডাকে সাঁড়া দিয়ে প্রথম বারের মত কলাগাছের সুতা দিয়ে শাড়ী বুননের কাজে হাত দিয়েছি। খুব ভয় পেয়েছিলাম সফল হবো কিনা। জেলা প্রশাসকের অক্লান্ত পরিশ্রমে ও পরার্মশে শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছি। বাংলাদেশে এই প্রথম কলাগাছের সুতা দিয়ে শাড়ী তৈরী করতে পেরে তার খুব ভাল লাগছে। উদ্যোক্তা বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি জানান,পাহাড়ে অনগ্রসর ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্টির বেকার নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে এই উদ্যোগ। বান্দরবান একটি মডেল পর্যটন নগরী হিসাবে সুনাম রয়েছে। কলাগাছের সুতোঁয় শাড়ী তৈরী করে পর্যটন শিল্পের সাথে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। কলাগাছের সুতা দিয়ে শাড়ী তৈরী বাংলাদেশে এই প্রথম হিসাবে দাবী করে তিনি বলেন,কলাগাছের সুতা দিয়ে ভারতে শাড়ী তৈরী করা হলেও বাংলাদেশে এই প্রথম। শাড়ীর মান জামদামীর মতই। প্রাথমিক ভাবে শাড়ীর মুল্য পাঁচ হাজার টাকা নির্ধারন করা হয়েছে। এই শাড়ী বান্দরবানকে বিশ্বের দরবারে ব্যান্ডিং করবে বলেও তিনি জানান। এছাড়াও কলাগাছের সুতায় তৈর শাড়ী দেশে ও বিদেশে জনপ্রিয়তা বাড়লে কাঁচা মাল যোগান দিতে পাহাড়ে প্রচুর পরিমাণে জন্মানো কলাগাছকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে। যা এতোদিন ফল সংগ্রহের পর কেটে ফেলে দেয়া হতো। এর ফলে পাহাড়ী জনপদে নতুন কর্মসংস্থান হবে। অসচ্ছল পরিবার গুলো হবে স্বাবলম্বী ।