আজ শুক্রবার ৩ মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১

বান্দরবানে‘বিষবৃক্ষ’তামাকের দখলে আবাদী জমি সহ নদীর দু'পাড়

বেলাল আহমদ,লামা : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ ০১:৪৩:০০ অপরাহ্ন | পার্বত্য চট্টগ্রাম

বান্দরবানের লামা উপজেলার প্রায় ৯০ ভাগ আবাদী জমি দখল করে নিয়েছে ‘বিষবৃক্ষ’ তামাক। আবাদী জমি সহ নদীর দু’পাড়, বসতবাড়ির আঙ্গিনা, সমতল ভূমি, পাহাড়ি ঢালু জমি ও সর্বত্র এখন তামাক চাষের দখলে। তামাক চাষে কোম্পানি কর্তৃক প্রণোদনার ব্যবস্থা থাকায় দিনে দিনে বাড়ছে মরণ চাষ তামাকের চাষাবাদ।

 

জানা যায়, ১৯৮৪ সাল থেকে বহুজাতিক তামাক কোম্পানি বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি বাংলাদেশ এর হাত ধরে লামা উপজেলায় তামাক চাষ শুরু হয়। তারপরে একে একে আলফা টোব্যাকো, রাঙ্গুনিয়া টোব্যাকো, ঢাকা টোব্যাকো (বর্তমানে ইউনাইটেড ঢাকা টোব্যাকো), আবুল খায়ের, নিউ. এজ টোব্যাকো তামাক চাষ শুরু করে। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, তামাক বিক্রয়ের নিশ্চয়তা থাকায় ও অল্প সময়ে লাভবান হতে অন্যান্য ফসলের চাষাবাদ ছেড়ে তামাক চাষে ঝুঁকে পড়ছেন এ অঞ্চলের অধিকাংশ চাষীরা।

 

   অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, দুই যুগ ধরে তামাক চাষে জড়িত। কোন বছর লাভ হলে পরের বছর আবার লোকসান। এক বছর তামাকের দাম ভালো থাকলে পরের বছর নানা অজুহাতে তামাকের বাজারে ধস নামে। তামাকে লোকসানে পড়ে অনেক চাষী ঋণে জর্জরিত হয়ে এলাকা ছেড়েছে। যত লাভের স্বপ্ন দেখে আমরা তামাক চাষে এসেছি বাস্তবতা তত সুখময় নয়। শুধুমাত্র বিক্রয়ের নিশ্চয়তা থাকায় মানুষ তামাক চাষে ঝুঁকছে। ধান সহ অন্যান্য ফসলে বিক্রয়ের নিশ্চয়তা ও রক্ষনাবেক্ষনের ব্যাবস্থা থাকলে আমরা তামাক ছেড়ে ফসল চাষাবাদে ঝুঁকতাম।

 

সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, লামা উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নে ৯০ শতাংশ জমি তামাক চাষের দখলে।নদী,খাল,ঝিরি,জলাশয়ের ৫০মিটারের মধ্যে তামাক চাষের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মানছে কেউ নদীর দু' পাড় ‘বিষবৃক্ষ’তামাকের দখলে।এবিষয়ে নেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ।

 

উৎপাদিত তামাক প্রক্রিয়াজাত করতে সমগ্র উপজেলায় নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় ৯ সহস্রাধিক তামাক পুড়ানো চুল্লী। এসব চুল্লিতে জ্বালানি হিসেবে পোড়ানো হচ্ছে সংরক্ষিত ও প্রাকৃতিক বনের কাঠ। ফলে দিন দিন গাছশূন্য হয়ে পড়ছে এখানকার পাহাড়গুলো। বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে পরিবেশ।

লামা উপজেলা পরিবেশ রক্ষা পরিষদের সভাপতি ও মানবাধিকার কর্মী এম রুহুল আমিন জানায়, এক সময় ফসল ও সবজি চাষের জন্য সুনাম ছিল এ উপজেলায়। কিন্তু মাঠের পর মাঠ এখন চোখে পড়ে শুধু তামাকের ক্ষেত। যত দিন যাচ্ছে, ততই বাড়ছে তামাক চাষ। কৃষিবিভাগ তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করলেও তামাক কোম্পানীদের লোভনীয় আশ্বাসে তামাক চাষের দিকেই ঝুঁকে পড়ছেন। এছাড়া তামাক পরিচর্যা করার সময় পাতার বিষাক্ত গ্যাসে তামাক চাষে জড়িত নারী, পুরুষ ও শিশুরা বমি বমি ভাব হয়, মাথা ঘুরানো, শ্বাস কষ্ট সহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগতে দেখা দেয়।

 

লামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সানজিদা বিনতে সালাম বলেন, গোটা বিশ্ব যখন জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সরব, তখন সবুজ বনায়নের পরিবর্তে তামাক চাষের প্রসার নিয়ে উদ্বিগ্ন উপজেলা প্রশাসন ও সচেতন মহল। এখনিই পরিবেশ বিধ্বংসী তামাক চাষ বন্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা না হলে আবাদি জমির উর্বরতা হ্রাস পেয়ে অচিরেই উপজেলায় খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে।

 

সরকারী, বে-সরকারী ও স্থানীয় চাষীদের দেয়া তথ্য মতে লামা উপজেলায় বর্তমান মৌসুমে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। তবে কৃষি অধিদপ্তর এ তথ্য মানতে নারাজ। সচেতন কিছু কৃষক বলেন, সরকার যদি কোম্পানীর মতো সহজ শর্তে ঋণসহ ফসল কেনার নিশ্চয়তা দেয় তাহলে তারা তামাক চাষ ছেড়ে দিয়ে অন্যান্য ফসল চাষ করবেন। স্থানীয়রা তামাক চাষকে তাদের ভাগ্য বদলের চাবিকাঠি মনে করে বিধায় তাদের স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিশুরা স্কুল বাদ দিয়ে তামাক ক্ষেতে কাজ করতে দেখা যায়।

 

লামা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও প:প:কর্মকর্তা মহিউদ্দিন মাজেদ চৌধুরী  বলেন, তামাক শোধনের সময় নির্গত নিকোটিনের কারণে এলাকার লোকজন হাঁপানি, কাশি এবং ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।

 

নদী,খাল,ঝিরি,জলাশয়ের ৫০মিটারের মধ্যে তামাক চাষের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মানছে কেউ নদীর দু' পাড় ‘বিষবৃক্ষ’তামাকের দখলে এবিষয়ে জানতে চাইলে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মোস্তফা জাবেদ কায়সার বলেন,আমরা তামাক কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলেছি নদী, ঝিরির পাশে সাইন বোর্ড লাগানো হয়েছে যারা নির্দেশনা মানবেনা তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।