আজ রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ফেনীতে ১৮ বছর পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ১৮ অক্টোবর ২০২২ ০১:৫৭:০০ অপরাহ্ন | দেশ প্রান্তর

ফেনীর সোনাগাজীতে ২০০৩ সালে মাকে বেঁধে তার সামনে মেয়েকে গণধর্ষণ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি লাতু মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-৩)। লাতু মিয়া ১৮ বছর ধরে আত্মগোপনে ছিলেন।

 

সোমবার (১৭ অক্টোবর) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। র‍্যাব জানায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য বিভিন্ন অপকর্ম করতেন লাতু। ভিকটিমের বাবা মারা যাওয়ায় তার মাকে এবং তাকে বিভিন্ন সময় কুপ্রস্তাব দিয়েছিল। তারা কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় লাতু দলবল নিয়ে ২০০৩ সালের ১৩ মে ভিকটিমের বাড়িতে গিয়ে হামলা করে। ঘরের দরজা ভেঙে বিধবা মাকে অস্ত্রের মুখে বেঁধে ভিকিটমকে গণধর্ষণ করে তারা। মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

 

আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ১৮ বছর ধরে পলাতক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি লাতু মিয়াকে রাজধানীর বাড্ডা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-৩। ২০০৩ সালের ১৩ মে গভীর রাতে সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের একটি বাড়িতে ঘরের দরজা ভেঙে প্রবেশ করে লাতু মিয়া, ফারুক, জাহাঙ্গীর আলম ও আবুল কাশেম। পরে তারা বিধবা মাকে অস্ত্রের মুখে বেঁধে তার সামনে ১৩ বছরের মেয়েকে গণধর্ষণ করে। এ ঘটনায় ভিকটমের মা ১৩ মে সোনাগাজী থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।

 

তিনি বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে ওই বছরের ১৩ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে মামলার বিচার কাজ শেষে ২০২২ সালের ১৪ জুলাই জাহাঙ্গীর আলম, আবুল কাশেম ও মো. লাতু মিয়ার অপরাধ মাণিত হওয়ায় মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। একইসঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করেন এবং মো. ফারুকের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস দেন।

 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে লাতু র‍্যাবকে জানায়, ঘটনার সময়ে সোনাগাজী এলাকায় মো. ফারুকের নেতৃত্বে আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন অপকর্ম করতো। এছাড়া বিভিন্ন সময় নারীদের উত্যক্ত করতো।

 

আরও জানা যায়, ঘটনার পর লাতু ও তার সহযোগীরা একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছিল। পরে জামিনে বের হয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। এছাড়া জামিনে বের হওয়ার পর মামলা তুলে নেওয়ার জন্য তারা ভিকটিম ও ভিকটিমের মাকে ভয় ভীতি প্রদর্শন করে।

 

লাতুর পলাতক জীবন

 

র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, ২০০৩ সালে গণধর্ষণের ঘটনার পর তার পলাতক জীবন শুরু হয়। এই ঘটনার পর সে চট্টগ্রামে গিয়ে রিকশাচালক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ শুরু করে। কিন্তু কোনো কায়িক পরিশ্রম তার ভালো লাগতো না। তারপর সে চুরি ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়ে। একটি ডাকাতির ঘটনায় সে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়ে জেল খাটে। জামিনে বের হয়ে সে গোপনে তার বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের বাসায় অতিথি হিসেবে জীবন যাপন করতো।

 

সে মাঝে মাঝে তার নিজ বাড়িতে এসে গোপনে তার স্ত্রী সন্তানের সঙ্গে দেখা করত এবং তাদের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়ে যেত। তারপর সে কিছুদিন সিলেটে মাজার এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। একপর্যায়ে সে ঢাকায় এসে হকার হিসেবে ফুটপাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বিক্রি করতো। ওই পেশায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে পড়ার আশংকা থেকে সে দারোয়ানের চাকরি নেয়। পলাতক সময়ে সে নিজেকে অলি নবী হিসেবে পরিচয় দিতো। মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হওয়ার পর সে ঢাকায় একটি মাজারে আত্মগোপন করে।

 

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বা যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত এমন পলাতক আসামির সংখ্যা কত, এমন কোনো তালিকা র‍্যাবের কাছে আছে কি না জানতে চাইলে লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, ২৫ থেকে ৩০ বছর আগের মামলায় আসামিদের নথি পাওয়া যায় না। তথ্য সংগ্রহ করা অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়।

 

চলতি বছর ২৬৪ জন বিভিন্ন মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৩। বর্তমানে আমাদের হাতে বেশ পুরোনো ২০ থেকে ২৫টি মামলা রয়েছে। আমরা কাজ করছি। আশা করছি এসব মামলায় পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে। 

 

পলাতক আসামিদের ধরতে না পারার পেছনে ব্যর্থতার কারণ কি? প্রশ্নে তিনি বলেন, পুরোনো মামলাগুলোর ক্ষেত্রে আসামিদের তথ্য পাওয়া কঠিন। আসামিদের সিডিআর অনেক সময় থানা থেকে পাওয়া যায় না। তারপরও আমরা নানাভাবে চেষ্টা করি তথ্য সংগ্রহ করে আসামিদের গ্রেপ্তার করতে।