আজ রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

নাইক্ষ‍্যংছড়িতে অবৈধ ইট ভাটার ছড়াছড়ি: ক্ষমতার প্রভাব বিস্তারে চলচে কার্যক্রম

মোঃ ইফসান খান ইমন, নাইক্ষ‍্যংছড়ি: | প্রকাশের সময় : রবিবার ২১ জানুয়ারী ২০২৪ ০৬:৩০:০০ অপরাহ্ন | পার্বত্য চট্টগ্রাম

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন ঘুমধুম। সবুজ পাহাড়বেষ্টিত এই ইউনিয়নের আজুখাইয়া ফকিরপাড়া,রেজু গর্জনবনিয়া, রেজু আমতলী ও আজুখাইয়া এলাকায় পরিবেশ ও বায়ু দূষণ করে চলছে অবৈধ পাঁচ ইটভাটা গুলো।

গত তিন মাস ধরে প্রকাশ্যে পাহাড় ও ফসলি জমি কাটা এবং জ্বালানি হিসেবে বনের কাঠ পুড়ানো হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন রয়েছে নির্বিকার।

ক্ষুব্ধ সচেতন মহল বলছেন, ইটভাটায় পরিবেশ বিধ্বংসী কাজ চালিয়ে নেওয়ার জন্য কোনো নির্দেশনা নেই। কিন্তু পরিবেশ ও বায়ু দুষণের বিরুদ্ধে প্রশাসন কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না? পাল্টাপাল্টি এমন অভিযোগে প্রশাসন বলছে দুর্গম ও দূরত্বের কথা।

সরেজমিনে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘুমধুম ইউনিয়নের কাছাকাছি এলাকায় অন্তত পাঁচটি অবৈধ ইটভাটা গড়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগ নেতা খালেদ সরওয়ারের  মালিকানাধীন কেআরই, সাজু বড়ুয়ার মালিকানাধীন ডিএসবি, ফরিদ আহমদের মালিকানাধীন বিবিএম, জয়নাল আবেদীনের মালিকানাধীন জেএসবি ও আবুল কালামের মালিকানাধীন কেআরএস নামে এসব ইটভাটার মালিক নিজেদের স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতা পরিচয় দিয়ে পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছেন।

জানতে চাইলে সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যানিং মারমা বলেন, অবৈধ ইটভাটায় প্রতিদিন প্রকাশ্যে পুড়ানো হচ্ছে বনের কাঠ। ফসলি জমি ও পাহাড় কেটে তৈরি করা হচ্ছে ইট।

স্থানীয়রা জানান, গত তিন মাস ধরে জনবসতি এলাকায় পরিবেশ বিধ্বংসী এ কর্মযজ্ঞ চললেও পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কার্যত কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস শুনতে শুনতে ইটভাটা মৌসুম শেষ হয়ে হয়?

 

মাঝেমধ্যে  অভিযান চালালেও পরদিন পুনরায় কাজ শুরু করেন মালিকপক্ষ। স্থানীয়দের মতে, ক্ষমতার প্রভাবে ইটভাটার মালিকদের কাছে ‘প্রশাসন নির্বিকার’! প্রশাসনের এক কর্মকর্তা অফ রেকর্ডে (ক্যামরার বাইরে) তাদের অসহায়ত্বের কথা এই প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করেন।

ইটভাটাগুলোর মালিকরা উচ্চ আদালতের রিট, জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের দোহাই দিয়ে চললেও বৈধ কাগজপত্রের প্রশ্নে অনেক ইটভাটা মালিক এড়িয়ে যান।

এই বিষয়ে জানতে সংশ্লিষ্ট একাধিক ইটভাটা মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে মোবাইলের সংযোগ কেটে দেন। তবে সাংবাদিক পরিচয় গোপন রেখে বিবিএম ইটভাটা মালিক ফরিদ আহমদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উচ্চ আদালতে রিট করার কাগজপত্র এই মুহূর্তে তার হাতে নেই।

সরেজমিনে গেলে খাতা দেখে তিনি জানাতে পারবেন। এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তর অবৈধ ইটভাটা গড়ে উঠার কথা স্বীকার করলেও কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ফখরউদ্দিন চৌধুরী বলেন, দূরত্বের কারণে এলাকাগুলোতে তাদের অভিযান চালাতে একটু কষ্ট হচ্ছে।

ইটভাটাগুলোর জন্য নিয়মিত মামলা রয়েছে। শিগগিরই অভিযান চালানো হবে। অন্যদিকে কোনো অবৈধ ইটভাটা মালিকদের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছেনা বলে  উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ জাকারিয়া জানান, প্রশাসন কোনো অবৈধ ইটভাটা মালিককে সুযোগ-সুবিধা দেয়নি। গত বৃহস্পতিবার ১৮ জানুয়ারি ইটভাটাই অভিযান চালানো হয়েছে।প্রশাসনের এই অভিযান সামনেও অব্যাহত থাকবে।

পরিবেশবাদীদের মতে, উচ্চ আদালত কোনো ইটভাটা মালিককে পাহাড় কাটা, জমি কাটা এবং জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ানোর জন্য অনুমতি দেয়নি। জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করায় ইটভাটা মালিকরা পরিবেশ ধ্বংসের এই সুযোগ নিচ্ছেন।