আজ শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কেমন আছে থানচির পর্যটন সংশ্লিষ্টরা

রেমবো ত্রিপুরা, থানচি (বান্দরবান) : | প্রকাশের সময় : সোমবার ২২ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:৪৭:০০ অপরাহ্ন | পার্বত্য চট্টগ্রাম

চলমান কুকি-চিং ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) অস্থিরতা বান্দরবানের থানচিতে পর্যটন খাতে পুরোপুরি ভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। পর্যটনের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টরা এখন বেকার সময় পার করছেন। 

 

বিশেষ করে গেলবারের ইস্টার সানডে, ঈদুল ফিতর ও বাংলা নববর্ষের ছুটিতে পর্যটকদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও নিরাপত্তা জনিত কারণে কোন পর্যটক আসছে না। পুরো উপজেলায় পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে এই পর্যটন মৌসুমে। দেশের পর্যটকদের প্রিয় পর্যটন তালিকা থেকে  তাদের ভ্রমণের সিডিউল থানচি পরিবর্তে অন্যদিকে একরকম মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে পর্যটকরা। 

 

পর্যটক গাইড সমিতি সাধারণ সম্পাদক মোঃ মামুনুর রশিদ  বলেন, প্রতিবছর থানচিতে বেড়াতে আসা পর্যটকের সংখ্যা বেড়েই চলছিল। কিন্তু চলমান কেএনএফ ব্যাংক ডাকাতির ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারনে পর্যটকের আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন আমরা দুঃসময় কাটাচ্ছি। থানচিতে নিবন্ধীত গাইডদের সংখ্যা দু'শতাধিক। পর্যটক না আসায় গাইডরা এখন দিন মঞ্জুর করে চলেছে। 

 

এই জন্য থানচিতে পর্যটন খাতের সঙ্গে জড়িত গাড়ি ড্রাইভার, মোটর গাড়ি মালিক সমিতি, ইঞ্জিন চালিত নৌকা ড্রাইভার, হোটেল-রিসোর্ট ও পর্যটক গাইডদের বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। 

 

হোটেল রিসোর্স মালিক ও কবি উমং সিং মারমা বলেন, ছোট বড় প্রায় শতাধিক হোটেল রিসোর্ট রয়েছে এই উপজেলায়। ইস্টার সানডে, ঈদুল ফিতর ও বাংলা নববর্ষের টানা লম্বা ছুটির এই পর্যটন মৌসুমেও আমাদের রিসোর্ট গুলোতে রয়েছে পর্যটক শূন্য। এতে হোটেল রিসোর্ট মালিকরা বিরাট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, পাশাপাশি পর্যটনের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন বিপাকে।

 

কথা হয় ইঞ্জিন চালিত নৌকার মালিক ও ড্রাইভার হ্লাচিংমং মারমা সাথে তিনি বলেন, পর্যটক না আসায় ইঞ্জিন চালিত নৌকা ড্রাইভাররা এখন বাড়িতে বেকার সময় কাটাচ্ছে। নৌকা চালাতে না পারায় সংসার চালাতে পারছে না । এই অবস্থা চলতে থাকলে সামনে দিনগুলো আরো কঠিন সময় পার করতে হতে পারে আমাদের।

 

বৈশ্বিক মহামারী কোভিড ১৯ এর পর পর্যটন খাতের উল্লেখযোগ্য সফলতার জন্য একটা ভালো সময় আশা করা হয়েছিল এই উপজেলায়। কিন্তু  অভ্যন্তরীণ কুকি চিং ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে অস্থিরতা ও ব্যাংক ডাকাতির মতো কর্মকাণ্ড এর পথরুদ্ধ করে দিয়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্টদের। 

 

বান্দরবান থানচি সড়কে পর্যটক বহনকারী মাহেন্দ্র গাড়ি চালক সঞ্জয়  কুমার দাশ বলেন, সম্প্রতিক রুমা ও থানচিতে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় সৃষ্ট পরিস্থিতির কারনে সড়কে পর্যটক না আসায় এখন নিয়মিত ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। ভাড়াটিয়া গাড়ি চালানোর কারণে মালিকের ভাড়া পর্যন্ত দিতে পারছেনা। 

 

পর্যটনে সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টদের দ্বারা এর  আগে এলাকার উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রেখেছিল বিভিন্ন ভাবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে কেএনএফ অস্থিরতা পর্যটন উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে। মূলত এ ধরনের প্রভাব দেশের অর্থনীতি উপর বিরাট নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এলাকার সচেতন মহল অনেকেই মনে করছেন, এটা পর্যটন সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি জুম চাষি, ফলের বাগান মালিক ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের উপরও অর্থনীতিতে ক্ষতিসাধন করে দিতে পারে। এই অবস্থা থেকে কখন নাগাদ বের হয়ে আসতে পারবে এটাই এখন দেখার বিষয়।

 

এই নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ মানুন বলেন, এই উপজেলায় পর্যটকদের ভ্রমনের সুনির্দিষ্ট কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে সম্প্রতি কুকি চিং ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) কর্মকাণ্ড কারনে সাময়িক ভাবে পর্যটকদের ভ্রমনের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে, তবে সাময়িক। বর্তমান পরিস্থিতি মেনে নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।