কক্সবাজার জেলার ঝুঁকিপূর্ণ একটি দ্বীপের নাম কুতুবদিয়া। শিক্ষায় এগিয়ে থাকা এই দ্বীপে দেড় লক্ষাধিক মানুষের বসতি। কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নয়ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে তারা। বন্যা তাড়িতদের কপাল যেন আজীবন পোড়া। স্বাধীনতার বায়ান্নটি বছর পার হয়ে গেল। এখনো চালু হয়নি ফেরি। বিপদসংকুল পরিস্থিতিতেও ভাঙাচোরা নৌকা, ট্রলারে করে নদী পার হতে হয় দ্বীপবাসীকে। যে কারণে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদের। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও জ্বালানি পরিবহনে দেবদাসীর কষ্টের কথা বর্ণনা দিয়ে শেষ করা যাবে না। দ্বীপে সাবমেরিন ক্যাবলে বিদ্যুৎ সংযোগ ও বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করেছে সরকার। এ উপজেলায় মৎস্য, লবণ, কৃষি ও পর্যটনে রাজস্ব খাত ভূমিকা রাখলেও ৫০০-৬০০ বছর ধরে ঝুঁকি নিয়ে ঘাট পার হতে হচ্ছে তাদের। দেশের বিভিন্ন উপকুলীয় জেলায় স্রোত সহনীয় ফেরি চালু রয়েছে। দৌলতদিয়া, পাটুরিয়া, শিমুলিয়া, আরিচা, বাংলাবাজার, গোয়ালন্দ, মাওয়া ঘাটে ফেরি সংযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন চলাচলে অনেক গতি এনে দিয়েছে। কেবল কক্সবাজারের কুতুবদিয়া রয়ে গেল এখনো ফেরি বঞ্চিত একটি জনপদ। এলাকাবাসী মনে করছে, দুর্বল ও অযোগ্য নেতৃত্বের খেসারত দিচ্ছে দ্বীপের দেড় লক্ষাধিক জনগণ। যুগের পর যুগ ফেরির দাবি উঠে আসলেও কথার কোন মূল্যায়ন নেই। কুতুবদিয়া দ্বীপবাসীর যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম চকরিয়া মগনামা ঘাট। ফেরিহীন এই ঘাট দিয়ে মালামাল পরিবহন যেমন কষ্টের, তেমন বাড়ে খরচ। প্রতিটি পণ্যে বাড়তি খরচের বোঝা বহন করতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। অনেক সময় মুমূর্ষ রোগীর উন্নত চিকিৎসার জন্য নদী পার হতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। নদীপথে প্রসব হয়ে যায় সন্তান। ছোটখাটো ট্রলার ডুবির ঘটনা তো আছেই। সবমিলিয়ে স্বাধীনতার অর্ধশত বছরেও দুঃখ ঘোচেনি কুতুবদিয়াবাসীর। দ্বীপের আলী আকবর ডেইলের বাসিন্দা আব্দুল করিম জানিয়েছেন, দ্বীপের নেতাদের কোন যোগ্যতা নাই। ফেরি সার্ভিস চালুর বিষয়ে কোনো নেতাকে মাথা ঘামাতে দেখা যায়নি। চারদিকে সমুদ্রে ঘেরা এ উপজেলার উৎপাদিত পণ্য দ্রুত পরিবহনের অভাবে প্রতিবছর আর্থিকসহ বিবিধ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে কৃষকরা। চট্টগ্রাম, চকরিয়া ও কক্সবাজার থেকে পণ্য পরিবহনের জন্য বড়ঘোপ - মগনামা নৌ রুটের নদীতে ফেরি সার্ভিস চালুর দাবি এলাকার বিভিন্ন পেশার মানুষের। কুতুবদিয়া উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি সাংবাদিক হুমায়ুন সিকদার বলেন, প্রায় ৬০০ বছরের বসতি কুতুবদিয়ায়। ফেরির অভাবে দ্বীপবাসি অবর্ণনীয় ভোগান্তিতে রয়েছে। তিনি বলেন, ফেরি সার্ভিস চালু অনেক দিনের দাবি। ফেরি চালু হলে নিত্যপণ্য আনা-নেওয়ার চাহিদা পূরণ হবে। পড়বেনা বাড়তি খরচ। কিন্তু কার কথা কে শোনে? স্থানীয় বাসিন্দাদের ধারণা, চিহ্নিত সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি দ্বীপবাসী। ঘাট ইজারাদারদের কালো ইশারায় ফেরি সার্ভিস চালু করা হচ্ছে না। ফেরি চলাচল শুরু হলে ভারী যানবাহন অতিসহজে কুতুবদিয়ার গ্রামেগঞ্জে ঢুকতে পারবে। দ্বীপাঞ্চল সম্পাদক আকবর খান জানান, ফেরি সার্ভিস চালু হলে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে অতি সহজেই দ্বীপাঞ্চলের আসা সম্ভব হবে। এতে করে এলাকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও বাড়বে। কুতুবদিয়ার বাসিন্দা ও সাবেক সচিব আমম নাসির উদ্দিনের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ২০০৮ সালে সী ট্রাক চালু হয়। কয়েকমাস পর তা অদৃশ্য কারণে বন্ধ হয়ে যায়। এতে স্থানীয় কিছু কুচক্রী মহল ও ঘাট ইজারাদারদের হাত রয়েছে মনে করে দ্বীপবাসী। যত দ্রুত সম্ভব ফেরি সার্ভিস চালুর দাবি কুতুবদিয়ার দেড় লক্ষাধিক মানুষের।