আজ মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১লা আশ্বিন ১৪৩১

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সঙ্গে এগিয়ে যাবে দেশও

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২২ ১১:১৫:০০ পূর্বাহ্ন | জাতীয়

বহুল প্রত্যাশিত বাংলাদেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা ৬ লেনের দৃষ্টি নন্দন হাইওয়ে চালুর ফলে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার মানুষের ভাগ্য ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার ৬ লেন এক্সপ্রেস সড়কটি চালুর ফলে কম সময়ে যাতায়াত, ব্যবসা-বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানের ব্যাপক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে গড়ে উঠছে শিল্প-কলকারখানা।

এ বছর জুন মাসে পদ্মা সেতু ও রেলপথ চালুর হওয়ার কথা রয়েছে। বর্তমানে হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থান, বেকার সমস্যা হ্রাস, দারিদ্র বিমোচন, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার ব্যাপক উন্নতি হচ্ছে।  

পদ্মা সেতু চালু হলে বড় বড় মেগা প্রকল্পের কাজ অত্র এলাকায় শুরু হবে। বর্তমানে শিল্প, কল-কারখানার মালিকসহ অনেক ব্যবসায়ী জায়গা কেনার ফলে এলাকার জায়গা-জমির দাম দিন দিন বেড়েই চলছে। ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল ৩ বিভাগের ২১ জেলার মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই সহজ হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবসায়ীরা ঢাকা থেকে মালামাল ক্রয় করে দক্ষিণবঙ্গের মানুষ গন্তব্য স্থানে পৌঁছাতে পারছে। পদ্মা সেতু ও রেল সড়ক চালু হলে ঢাকা থেকে পায়রা বন্দর, বেনাপোল বন্দর, খুলনা পোর্ট ও ভোলা বন্দরের সঙ্গে মালামাল নেওয়া-আনা খুবই সহজ ও সময় সাশ্রয় হবে। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক দৃষ্টি নন্দন ৬ লেনের হাইওয়ে এক্সপ্রেস দেখতে ভিড় করছে। পর্যটন কেন্দ্রে সাগরকন্যা কুয়াকাটা যাতায়াত ব্যবস্থা খুব সহজ ও কম সময়ে পৌঁছাতে পারবে। প্রতিটি সেক্টরে এখনই ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে।  

ভাঙ্গা বাজার টাইলস ব্যবসায়ী জিকরিয়া বলেন, আমরা ঢাকা ও গাজীপুর থেকে টাইলস কিনলে কয়েকদিন সময় লাগতো, সঠিক সময়ে ক্রেতাদের মালামাল দিতে পারতাম না। পদ্মা সেতু চালু হলে ব্যবসায়ীদের সময় বাঁচবে এবং অনেক সুবিধাই হবে।

গাড়ি চালক সহিদ জানান, আগে রাস্তা অনেক খারাপ ছিল, বর্তমানে খুব সুন্দর রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাত্রীসহ আমরা আরাম পাচ্ছি। দ্রুত ও কম সময়ে মধ্যে গন্তব্যস্থানে পৌঁছাতে পারি। মালিক শ্রমিক সবাই এখন লাভবান হচ্ছি।

চৌকিঘাটা গ্রামের কৃষক মো. আলকাচ ব্যাপারী বলেন, পদ্মা সেতু আর বড় রাস্তা হওয়ার কারণে জমির দাম অনেক বেড়েছে। সেই টাকায় এখন প্রায় বাড়িতে বিল্ডিং নির্মাণ করেছে। রাস্তা হওয়ার কারণে এলাকার শত শত মানুষ হয়েছে কোটিপতি।

স্কুলছাত্র আব্দুর রহমানবলেন, আমাদের পড়াশোনার জন্য ঢাকা যেতে হয়। কিন্ত পদ্মা সেতু চালু হলে ভাঙ্গায় সরকারি-বেসরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হবে। এতে বিশ্ব দরবারের বাংলাদেশ ভাবমূর্তি উজ্জল হবে।

ভাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন মাতুব্বর বলেন, দক্ষিণবঙ্গের ২১টি জেলার প্রবেশদ্বার ভাঙ্গা। তাইতো পদ্মা সেতু খুলে দিলে ফরিদপুরের ভাঙ্গা হবে সিটি শহর কিংবা মহানগর।

ঘারুয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. শফিউদ্দিন মোল্লা জানান, যানযটমুক্ত এক্সপ্রেস চালুর ফলে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার সকল শ্রেণির মানুষের ভাগ্যের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। পদ্মাসেতু ও রেল-যোগাযোগ চালুর সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবকিছুর উন্নতি হচ্ছে। এখনই সব সেক্টরেই উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে।

ভাঙ্গা হাসপাতালের কর্মকর্তা মহসিন উদ্দিন বলেন, অনেক মুমূর্ষু রোগীকে ঢাকায় পাঠাতে হয়। অনেক রোগী ও মরদেহ নিয়ে যানযট ও ফেরির কারণে ফেরিঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। পদ্মা সেতু চালু হলে সময় বাঁচবে এবং দ্রুত হাসপাতালে রোগী নিয়ে পৌঁছাতে পারবে। এতে অনেক রোগীর জীবন বাঁচবে। এর আগে, অনেক রোগী ঢাকা পৌঁছানোর আগে ফেরি ঘাটে মারা গেছেন। এরকম ঘটনা হয়তো আর তেমন ঘটবে না।

ভাঙ্গার স্থানীয় আতাদী গ্রামের বাসিন্দা ও ফরিদপুরের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খালেদ বলেন, আমাদের ঢাকা যেতে এখন কমপক্ষে ২ ঘণ্টা লাগে। আর পদ্মা সেতু চালু হলে ঢাকা যেতে সময়ে লাগবে মাত্র ১ ঘণ্টা। দক্ষিণবঙ্গের অনেক লোক এখন ঢাকা বাসা ভাড়া করে না থেকে, গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় অফিস করতে পারবে। তাছাড়া এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।  

ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা বিপ্লব জানান, ভাঙ্গা থেকে সুর্যনগর ও মুনসুরাবাদ পর্যন্ত মহাসড়কে পুলিশের রাত্রিকালীন ডিউটি পালন করতে হয়। আগে রাস্তা খারাপ ছিল, তখন মাঝে মধ্যে মহাসড়কে চুরি-ডাকাতি হতো। এখন ৬ লেনের দৃষ্টি নন্দন হাইওয়ে এক্সপ্রেস চালুর ফলে পরিবহনগুলো দ্রুত চালানোর ফলে মহাসড়কে এখন চুরি-ডাকাতি হয় না।   

ভাঙ্গা পৌর মেয়র আবু ফয়েজ মো. রেজা জানান, প্রধানমন্ত্রী ভাঙ্গা পৌর এলাকা ব্যাপক উন্নয়ন করছেন। এখন আর ভাঙ্গা ভাঙ্গা নয়, ভাঙ্গার চেহারা পাল্টে এখন হয়েছে সিঙ্গাপুর সিটি। জননেত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের পদ্মা সেতু ও ৬ লেনের রাস্তা নির্মাণ করায় আমরা ভাঙ্গাবাসীসহ দক্ষিণবঙ্গের মানুষ খুবই আনন্দিত। আমাদের অত্র এলাকার মানুষের ভাগ্যেরও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে।                                                                                                                            ভাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম হাবিবুর রহমান জানান, স্বপ্নের পদ্মা সেতু ও ৬ লেনের রাস্তা নির্মাণ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ। পদ্মা সেতু, রেল সড়ক ও ৬ লেনের রাস্তা নির্মাণ অর্থনৈতিকভাবে ফরিদপুর জেলাসহ দক্ষিণ বঙ্গের ২১ জেলায় ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। অত্র এলাকাসহ এই বঙ্গের কোনো বেকার যুবক থাকবে না। এখনই উন্নয়নের ছোঁয়া পাচ্ছি। ঢাকা থেকে মাত্র ৫৫ কিলোমিটার রাস্তা হওয়ায় বর্তমানে শিল্প মালিক ও ব্যবসায়ীরা জায়গা কিনছে। ৬ লেনের রাস্তার কারণে এলাকার জায়গা-জমির দাম অনেক বেড়ে গেছে।

ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আজিমউদ্দিন জানান, প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত হাইওয়ে এক্সপ্রেস বা ৬ লাইনের রাস্তা হওয়ার কারণে দুর্ঘটনা কমে যাওয়ায় মানুষের জান-মালের ক্ষতি কমে গেছে। এখন ঢাকা যেতে ২ ঘণ্টা সময়ে লাগে, পদ্মা সেতু চালু হলে মাত্র ১ ঘণ্টায় ঢাকা পৌঁছানো যাবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য উন্নত হবে। এছাড়া এখানে শিল্পকারখানা গড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক যে সম্ভাবনা; তার দ্বার উন্মোচিত হবে।

 ইউএনও বলেন, বঙ্গবন্ধু মানমন্দিরের কাজ শুরু হয়েছে। তখন অত্র এলাকা পর্যটন কেন্দ্রে গড়ে উঠবে। এতে বিশ্ব দরবারের বাংলাদেশ তথা ফরিদপুরের ভাঙ্গার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, পদ্মা সেতুর বদৌলতে এ অঞ্চলের জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তন হবে। বড় বড় শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা এখনে শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে আগ্রহ প্রকাশ করবে। ফলে ফরিদপুরের বহু শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। ভাঙ্গায় একটি ট্রাফিক জোন করার ব্যাপারে আলোচনা চলছে। এছাড়া শিল্পকারখানা গড়ে উঠলে সেখানে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের ব্যাপারে সুপারিশ করা যেতে পারে।                                                               ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, একটা জায়গার উন্নয়নের প্রধান স্তম্ভ হলো যোগাযোগ ব্যবস্থা। সেদিক থেকে পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে ভাঙ্গায় অনেক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এখানে ক্রীড়া কমপ্লেক্স, ইকোনমিক জোন, মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রসহ একটি বিমানবন্দর করতে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হওয়াতে অনেক ব্যবসায়ীক উদ্যোক্তা শিল্পকারখানা এখানে গড়ে তুলতে আগ্রহ প্রকাশ করবে।