আজ রবিবার ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১

শিবির সন্দেহে শিক্ষার্থীকে ধরে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১২:১৬:০০ অপরাহ্ন | চট্টমেট্টো

শিবির সন্দেহে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক শিক্ষার্থীকে তুলে এনে তার পরিবারের কাছ থেকে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রুপ সিক্সটি নাইনের অনুসারীদের বিরুদ্ধে।  

 

পরে ওই শিক্ষার্থীকে মারধরের পর পুলিশের হাতে তুলে দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়ের করা আগের একটি ভাঙচুর মামলায় আসামি করে আদালতে পাঠানো হয়।

 

বুধবার (১৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় আদালতে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাটহাজারী থানার ওসি মনিরুজ্জামান।

 

জানা গেছে, গত সোমবার (১১ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলগেইট এলাকার একটি কটেজ থেকে মনিরুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থীকে শিবির সন্দেহে তুলে আনে চবি ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক উপগ্রুপ সিক্সটি নাইনের বেশ কয়েকজন অনুসারী।

 

 

সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা গেছে, বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী আকিব জাভেদ, সমাজতত্ব বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী ইবনুল জাররাহ, অর্থনীতি বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী আবু সাইদ শাকিল দুইজন শিক্ষার্থীকে শিবির সন্দেহে প্রথমে তুলে আনেন। এছাড়া ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের মাহমুদুল হাসান ইলিয়াস ও ইতিহাস বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের অনুপ সরকার আকাশ ঘটনাস্থলে ছিলেন বলে জানা গেছে। এ সময় সঙ্গে থাকা আরেকজন শিক্ষার্থীর মোবাইল চেক করে কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় তাকে ছেড়ে দেন ছাত্রলীগের অনুসারীরা।  

 

এদিকে চাঁদা আদায়ের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আকিব জাভেদের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

 

ঘটনাস্থলে থাকা ছাত্রলীগকর্মী আবু সাইদ শাকিল বলেন, সে শিবিরের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে। পরবর্তীতে আমরা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিই। মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওকে ধরার পর কয়েকজন চড়থাপ্পড় দিয়েছিল। তবে চাঁদা আদায়ের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।  

 

ছাত্রলীগকর্মী মাহমুদুল হাসান ইলিয়াস বলেন, আমি ফজর নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় পুলিশবক্সে হট্টগোল দেখে সেখানে গিয়ে দেখলাম একজনকে আটক করা হয়েছে। এর বেশি কিছু জানি না।  

 

ছাত্রলীগকর্মী অনুপ সরকার আকাশ বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।

 

শিবির সন্দেহে আটক মনিরুল ইসলামের পরিবার ও সহপাঠীরা জানান, মনিরুল রেলক্রসিং এলাকায় অবস্থিত আলতাব কটেজে থাকতেন। সেখান থেকে ছাত্রলীগের অনুসারীরা গত ১১ ডিসেম্বর রাত ১টার দিকে তাকে তুলে নিয়ে যান। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের পেছনে নিয়ে কয়েকদফায় মারধর করেন। মারধরের একপর্যায়ে তার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। মনিরুল তার পরিবারকে বিষয়টি জানালে তারা এত টাকা দিতে পারবে না বলে জানান। পরবর্তীতে ছাত্রলীগকর্মীরা ১৫ হাজার টাকা দাবি করেন। অন্যথায় শিবির পরিচয়ে পুলিশে তুলে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এসময় মনিরুলের পরিবার ৩ দফায় সর্বমোট ১৩ হাজার ৫০০ টাকা একটি বিকাশ নম্বরে (01606746041) পাঠায়। টাকা পাওয়ার পর মনিরুলকে আরেক দফায় মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন তার পরিবার।

 

এদিকে মারধর ও টাকা আদায়ের পর ওই শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশবক্সে আনা হলে ঘটনাস্থলে আসেন শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপ-প্রচার সম্পাদক ও সিক্সটি নাইনের অনুসারী শফিকুল ইসলাম শাওন। তিনি বলেন, গত পরশু রাতে শিবির সন্দেহে এক শিক্ষার্থীকে আটক করে আমাদের জুনিয়ররা। পরে তার শিবিরের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণও পেয়েছি আমরা। প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হলেও প্রক্টরিয়াল বডির কেউ আসেনি। পরবর্তীতে পুলিশের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়। কোনো মামলা দেওয়া হয়েছে কি-না জানিনা। চাঁদা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর সঙ্গে কারা জড়িত আমার জানা নেই। মারধরের বিষয়টিও আমি জানি না।  

 

হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে  বলেন, শিবির সন্দেহে আটককৃত শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের বাসভবন ও পরিবহন ভাংচুর মামলার তদন্তপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে আদালতে পাঠানো হয়েছে। ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া গেছে কি-না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আদালত যদি আমাদের কাছে জানতে চায়, তখন আমরা জবাব দেবো।

 

এর আগে চলতি বছরের ৭ আগস্ট রাতে চবির শাটল ট্রেনে দুর্ঘটনার জেরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। সেসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে শাখা ছাত্রলীগের সিএফসি, সিক্সটি নাইন, ভিএক্স ও বিজয় গ্রুপসহ বিভিন্ন উপ-গ্রুপের নেতাকর্মীরা ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। সে রাতে ছাত্রলীগ কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৫টি যানবাহনসহ উপাচার্যের বাসভবন, শিক্ষক ক্লাব ও পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় সেসময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৭ জন করে ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত এক হাজার জনের নামে দুটি মামলা দায়ের করে।  



সবচেয়ে জনপ্রিয়