আজ মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১লা আশ্বিন ১৪৩১

মিয়ানমার বাহিনীর মর্টারশেল হামলার নিন্দা জানিয়ে শুন্য রেখায় আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রতিবাদ ও মানববন্ধন

এইচ এম সম্রাট,বান্দরবান | প্রকাশের সময় : বুধবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১২:০০:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

গত এক মাসেরো বেশী সময় ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার সেনা বাহিনী যুদ্ধ বিমান ও হেলিকপ্টার থেকে মর্টারশেল সহ ভারী গোলা বর্ষন অব্যাহত রেখেছে। মিয়ানমার বাহিনীর ছোঁড়া মর্টারশেল,গোলা ও পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরনে এক রোহিঙ্গা নিহত ও এক বাংলাদেশীসহ অন্তত ৭জন রোহিঙ্গা আহত হয়েছে। বাংলাদেশের একাধিকবার কড়া প্রতিবাদ উপেক্ষা করে বিনা উস্কানীতে মিয়ানমার বাহিনীর অব্যাহত গোলা বর্ষনে আতংকিত হয়ে জীবন বাঁচাতে তুমব্রু,ঘুমধুম,জলপাইতলী এলাকায় সীমান্ত পাড়ের বাসিন্দারা ঘর বাড়ি সহ সহায় সম্পদ ফেলে অন্যত্রে নিরাপদ আশ্রয় নিচ্ছে।

অপর দিকে গত শুক্রবার তুমব্রু সীমান্তের শুন্য রেখায় আশ্রয় নেয়া অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমার বাহিনীর মর্টারশেলের হামলায় একজন নিহত ও পাঁচজন আহতের ঘটনায় সীমান্ত পাড়ে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মাঝে নতুন করে আতংক দেখা দিয়েছে।

সীমান্তের তুমব্রু শুন্য রেখায় অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দারা মর্টার শেল হামলার নিন্দা জানিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন রোহিঙ্গারা। সোমবার (১৯ সেপ্টম্বর)বিকালে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে  ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে মর্টার শেল হামলায় রোহিঙ্গা কিশোর ইকবাল হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেছে রোহিঙ্গারা। একই সাথে

 ঘুমধুম সীমান্তের বাসিন্দারা নিরাপত্তা চেয়ে জাতিসংঘ চিঠি পাঠিয়েছে রোহিঙ্গারা।

 বুধবার (২১সেপ্টেম্বর) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্প ব্যবস্থাপনা কমিটির সর্দার (হেড মাঝি) দিল মোহাম্মদ। তিনি জানান,

তুমব্রু নো-ম্যান্সল্যান্ডে আশ্রিত রোহিঙ্গারা এখন অনিরাপদ মনে করছেন মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর উগ্র আচরণে। বার বার গোলাবর্ষণ ও হুমকি-ধমকিতে দমাতে না পেরে শেষ পর্যন্ত শুক্রবার রাতে সীমান্তে ঘুমন্ত সেই আশ্রিত রোহিঙ্গা শিবিরে মর্টারশেল নিক্ষেপ করে হতাহতের ঘটনা ঘটিয়েছে। এঘটনায় বর্তমানে শোকে কাতর সীমান্ত পাড়ে আশ্রিত সাড়ে ৪ হাজার  নারী,শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ। 

এমন পরিস্থিতিতে জরুরী সভা ডাকেছে শিবির নেতা মাস্টার দিল মোহাম্মদ ও মৌঃ আরিফ মোহাম্মদ। 

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রুর শূন্যরেখায় বসবাসকারী রোহিঙ্গারা জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জাতিসংঘের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। তিনি আরো জানান,সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) তার স্বাক্ষরিত চিঠিটি মেইলে জাতিসংঘ সদর দফতরে পাঠানো হয়েছে। তুমব্রু শুন্য রেখায় অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্যবস্থাপনা কমিটির সর্দার মাস্টার দিল মোহাম্মদ, জাতিসংঘে কাছে নিরাপত্তা চেয়ে পাঠানো চিঠির কথা স্বীকার করে বলেন,২০১৭ সালে জন্মভূমি থেকে নির্যাতিত হয়ে বিতাড়িত হওয়ার কথা উল্লেখ করে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা এখনো হত্যার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে দাবি করেন। এর জন্য ইচ্ছে করেই শূন্যরেখায় মর্টার শেল ও গোলাবর্ষণ করে রোহিঙ্গা গনহত্যা চালাচ্ছে মিয়ানমার সেনা বাহিনী। এতে একজনের মৃত্যু  ও পাঁচজন আহত হওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে।

অপর দিকে (২১ সেপ্টেম্বর বুধবার) শুন্যরেখা লক্ষ্য করে মিয়ানমার বাহিনীর অব্যাহত ভারী গোলা বর্ষনে কাঁপছে সীমান্ত এলাকা।

সকাল থেকে গুলাগুলি আওয়াজে কাঁপছে সীমান্ত ঘেষা হেড়ম্যান পাড়া সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বাড়িতে কেউ নেই ঘরের দরজা বন্ধ।  পাড়ার হেডম্যান থাইনচাপু তংচংগা জানান, রাত হলেই তাদের ঘুম নেই তাই নারী শিশু বৃদ্ধরা পাড়া ছেড়ে চলে যায় নিরাপদ স্থানে চলে গেছে। গোলা গুলির আতংকে ক্ষেত খামারে যাওয়া যাচ্ছেনা। তাই বাড়ির দরজা বন্ধ জুমের ধান এবং সমস্ত ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। 

তমব্রু সীমান্তে শূন্যরেখার খুব কাছে মাঝেরপাড়ায় বসবাস করেন নুর ছালাম। পরিবারের সদস্য সংখ্যা ১৪ রাতদিন মিয়ানমারের বেপরোয়া গোলা বর্ষনের বিকট শব্দে ঘুম নেই তাদের চোখে। এরই মধ্যে পরিবারের অনেক সদস্য ভয়ে ঘর ছেড়ে রাতে আশ্রয় নেন অন্য জায়গায়।

শুধু নুর ছালাম নন, কাঁটা তাঁরের বেড়া ঘেঁষা সীমান্ত এলাকায় বাস করা প্রতিটি পরিবারের এখন একই অবস্থা। আতঙ্কে আর নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তারা। 

এদিকে সীমান্তে উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এরই মধ্যে প্রায় ৩০০ পরিবারের তালিকা তৈরি করেছে জেলা প্রশাসন ও বিজিবি। জরুরি মুহূর্তে প্রশাসন তাদের সরিয়ে নেয়ার পাশাপাশি খাদ্য এবং আশ্রয় কেন্দ্রেরও ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান বান্দরবান নাইক্ষ্যংছড়ি ৩ নম্বর ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ।