আজ মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩রা বৈশাখ ১৪৩১
দীর্ঘ আড়াই বছর পর

মিয়ানমারে বিজিবি-বিজিপি সীমান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত

আমান উল্লাহ কবির, টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : বুধবার ১ জুন ২০২২ ০৯:৫১:০০ অপরাহ্ন | কক্সবাজার প্রতিদিন

মিয়ানমারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও  বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) এর দীর্ঘ আড়াই বছর পর রিজিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

১ জুন বুধবার সকাল ১০ টায় মিয়ানমারের মংডুতে উক্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষ করে সন্ধা সাতটার দিকে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে ফিরে সাংবাদিকদের কক্সবাজার রিজিয়ন সদর দপ্তরের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজম - উস - সাকিব , এএফডব্লিউসি , পিএসসি জানান, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ও বর্তমান সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে অত্যন্ত সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। এতে মিয়ানমার হতে অবৈধভাবে ইয়াবা, ক্রিস্টাল মেথ ( আইস ) সহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য বাংলাদেশে পাচারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ, মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিপি'কে তাদের সীমান্ত সুরক্ষার বিষয়টি জোরদার ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানানো হয়। এবিষয়ে মিয়ানমার প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলকে আশ্বস্থ করেন । এছাড়াও কোন মিয়ানমার নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ যেন করতে না পারে সে জন্য সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ , আন্তঃ সীমান্ত সন্ত্রাস দমন ও দুষ্কৃতিকারীদের প্রতিহতকরণ , মিয়ানমার কর্তৃক সীমান্তে ইম্প্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস ( আইইডি ) স্থাপন , মিয়ানমারের কাঁটাতারের বেড়ায় বৈদ্যুতিক সংযোগ স্থাপন , বাংলাদেশ - মায়ানমার সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও সহযোগিতা চুক্তি -১৯৮০ অনুযায়ী অসর্তকতা অথবা ঝড়ের কবলে পড়ে আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে ধৃত বাংলাদেশী নাগরিকদের দ্রুত ফেরত প্রদানের বিষয়টি ত্বরান্বিত ও সহজীকরণ , সীমান্তে নানাবিধ সমস্যা নিরসনকল্পে উভয় দেশের বর্ডার লিয়াজো অফিস ( বিএলও ) এর কার্যক্রম পূর্ণরূপে সক্রিয়করণ , উভয় বাহিনীর মধ্যে ত্বরিত যোগাযোগ স্থাপনে জরুরী ব্যবস্থা কার্যকরীভাবে মোকাবেলায় পদক্ষেপ গ্রহণ , বাংলাদেশ - মিয়ানমার সীমান্তে যৌথ সমন্বিত টহল পরিচালনা ও পিলার পরিদর্শনসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত ও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে ।

অপরদিকে মিয়ানমার কর্তৃক উত্থাপিত বিষয়ের মধ্যে সীমান্ত এলাকায় দুষ্কৃতিকারী- সন্ত্রাসীদের ক্যাম্প, আস্তানা অপসারণ,  মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সাথে সন্ত্রাসী-দুষ্কৃতিকারীদের সংঘর্ষ এবং বাংলাদেশ পার্শ্বে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য - উপাত্ত বিনিময় করেন । এছাড়াও সভায় নাফ নদীতে উভয় দেশের পার্শ্বে ড্রেজার মেশিন দ্বারা বালি উত্তোলনের বিষয়ে আলোচনা করা হয়। সম্মেলনে সীমান্তবর্তী জনসাধারণের নিরাপত্তা, শান্তি - শৃঙ্খলা বজায় রেখে উভয় ' হেড অব ডেলিগেশন ’ একসাথে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ।

 

পরে উভয় দেশের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সমঝোতা স্বাক্ষর করা হয় বলে জানা গেছে।

সম্মেলনে মিয়ানমারে কারাভোগ শেষে চারজন বাংলাদেশীকে হস্তান্তর করা হয়।

 

এসময় স্বরাষ্ট্র এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ বিজিবির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সকালে কক্সবাজার রিজিয়ন সদর দপ্তরের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজম - উস - সাকিব , এএফডব্লিউসি , পিএসসি এর নেতৃত্বে বাংলাদেশের পক্ষে স্বরাষ্ট্র এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ মোট ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল টেকনাফ জেটিঘাট হতে নাফ নদ হয়ে জলযানযোগে মিয়ানমারের মংন্ডুর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন । অপরদিকে মিয়ানমারের পক্ষে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন

মংডুর বর্ডার গার্ড পুলিশ কমান্ডিং অফিসের কামান্ডার Police Brigadier General Htet Lwin।

বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল মণ্ডুতে পৌঁছালে মিয়ানমার প্রতিনিধি দল উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান এবং বিজিবি প্রতিনিধি দলের প্রধানকে বিজিপি কর্তৃক “ গার্ড অব অনার ” প্রদান করেন।

উল্লেখ্য, সর্বশেষ সীমান্ত সম্মেলন ২০১৯ সালের ১৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কোভিড -১৯ মহামারী জনিত স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে বিগত ২ বৎসর ৬ মাস পর পুনরায় এই সীমান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ।