পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান এই ঘোষণা দেন।
এ ঘোষণার পর মালিকপক্ষ বলেছে, ‘ভালো বেতন বাড়ানো হয়েছে’। তবে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা; তারা ঘোষিত মজুরি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম সবুজ মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বলেন, আমরা এটা সন্তোষজনক মনে করি না। এই ঘোষণাকে আমরা মনে করি, মজুরিবোর্ড মালিকদের পক্ষেই। মালিকরা যেটা প্রস্তাব করেছে, মজুরি বোর্ড মেনে নিয়ে সেটা তারা প্রস্তাব করেছে। শ্রমিকদের কথা তারা বিবেচনা করেনি।
তিনি বলেন, শ্রমিক প্রতিনিধি তো ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা দাবি করেছে। সেটার ধারে-কাছেও যায়নি। আমরা শ্রমিক সংগঠনগুলো কেউ ২৩ হাজার, ২৫ হাজার দাবি করেছি; তার ধারে কাছেই যায়নি। আমরা মনে করছি এটা মালিকদের পক্ষে। মালিকদের বাঁচানোর জন্যই।
শহীদুল ইসলাম আরও বলেন, আমরা এই মজুরি প্রত্যাখ্যান করছি। অবিলম্বে মজুরি পুনর্বিবেচনার জন্য আমরা সরকারের প্রতি, মজুরি বোর্ডের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। অন্যথায়, আমরা আন্দোলনে থাকব। আগামী শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে আমরা প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করব মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে।
নিম্নতম মজুরি সাড়ে বারো হাজার টাকা নির্ধারণ করা নিয়ে নেপালের কাঠমান্ডু থেকে বাংলানিউজের কাছে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক। তিনি বলেন, আমাদের সর্বশেষ প্রত্যাশা ছিল মজুরির সর্বনিম্ন ১৩ হাজার টাকা পর্যন্ত থাকবে। এর নিচে নামবে না। পাশাপাশি বেসিকের ক্ষেত্রে আমাদের দাবি ছিল ৬৫ শতাংশ। কিন্তু সর্বশেষ বেসিকের বিষয়ে আমাদের প্রত্যাশা এসে দাঁড়িয়েছিল ৬০ শতাংশের কাছাকাছি।
মজুরি নির্ধারণ নিয়ে এই মুহূর্তে এক কথায় কোনো প্রতিক্রিয়া দিতে চাচ্ছি না। তবে, প্রথমত আমাদের প্রত্যাশার কিছুটা ঘাটতি রয়ে গেছে। দ্বিতীয়ত, আমরা মনে করছি প্রধানমন্ত্রী নিজে গার্মেন্টস শ্রমিকদের প্রতি খুবই সহানুভূতিশীল। হয়তো উনি এই মজুরির বিষয়ে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এটাকে সংশোধন করে আমাদের আশাপূরণ করবেন।
শ্রমিক নেতারা যা-ই বলুক গার্মেন্টস মালিকপক্ষ মজুরির ঘোষণায় খুশি। তারা বলছেন, বর্তমান বাজার বিবেচনায় ‘উন্নত’ মজুরি কাঠামোই নির্ধারণ হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, আমাদের যেটা প্রস্তাবনা ছিল (১০ হাজার ২০০ টাকা) তার থেকে আমরা বাড়িয়ে এমনভাবে দিয়েছি, যেন সব সংগঠন সন্তুষ্ট থাকে। শ্রমিক সংগঠন ও প্রতিনিধি যারা ছিলেন ওখানে, তারা সবাই একমত হয়েছেন।
তিনি বলেন, সবচেয়ে বড়ো বিষয় সক্ষমতা। অর্থনৈতিক অবস্থা সারাবিশ্বে ভালো না। আমাদের ক্রয়াদেশও কমে এসেছে। দেশেরও অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো না। এ সময়ে এটা একটা ভালো মজুরিই দিয়েছি আমরা শ্রমিকদের। তাদের জন্য চিন্তা করেই, যে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে।
ফারুক হাসান আরও বলেন, আমি বলব ভালো বেতন বাড়ানো হয়েছে এই পরিস্থিতিতে। ৬৬ দশমিক ২৫ শতাংশ ন্যূনতম হয়েছে। তার ওপরে তো অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা আছেই। শ্রমিকদের থেকে যেটা প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছিল, ৭টি গ্রেড থেকে কমিয়ে ৫টি গ্রেডে আনা, সেটাও আমরা রাজী হয়েছি।
মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সভাকক্ষে এ সংক্রান্ত আলোচনা শুরু হয়। সেখানে মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সম্মতিতে শ্রমিকদের জন্য ১২ হাজার ৫০০ টাকা মজুরি নির্ধারণ করা হয়।
সভায় শ্রমিক প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম রনি শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকার প্রস্তাব করেন। অপরদিকে মজুরি বোর্ডে পোশাক কারখানার মালিকদের প্রতিনিধি সিদ্দিকুর রহমান ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেন। এ সময় উভয়পক্ষ প্রস্তাবনায় তাদের যৌক্তিকতা তুলে ধরে।
পরে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান বলেন, মজুরি বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী মালিক ও শ্রমিকপক্ষ মিলে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজকের যে ঘোষণা সেটা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই করা হচ্ছে। ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ন্যূনতম মজুরি আট হাজার থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা করা হয়েছে।