ফটিকছড়িতে ১৩ দিনের ব্যবধানে লোকালয় থেকে বিলুপ্ত প্রজাতির আরো ১টি লজ্জাবতী বানর উদ্ধার হয়েছে। ১৯ জুন (বুধবার) সন্ধ্যায় উপজেলার দাঁতমারা পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন নাছির নার্সারি থেকে বানরটি উদ্ধার করে পুলিশ ও বন বিভাগের কর্মকর্তারা। বানরটি উদ্ধারের পর বন বিভাগের সহায়তায় রাত ১০ টায় হাজারিখিল বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে অবমুক্ত করা হয়। অবমুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন নারায়ণহাট রেঞ্জ কর্মকর্তা ইলিছুর রহমান।
লজ্জাবতী বানর উদ্ধারের বিষয়ে দাঁতমারা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নাজের হোসাইন বলেন, 'পুলিশ ফাঁড়ির সংলগ্ন নাছির নার্সারি নামক স্থানে বিলুপ্ত প্রজাতির লজ্জাবতী বানরটি একটি জালে আটকে ছিল। স্থানীয়রা বিষয়টি জানালে নারায়ণহাট রেঞ্জ কর্মকর্তার সহায়তায় বানরটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করলে তারা রাতেই হাজারীখিল বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে প্রাণীটিকে অবমুক্ত করে।'
এছাড়া, গত ৭ জুন ঘূর্ণিঝড় রিমালের সময় পথ হারিয়ে উপজেলার কাঞ্চননগরের লোকালয় চলে আসে অপর একটি বিলুপ্ত প্রজাতির লজ্জাবতী বানর। স্থানীয়রা বিপন্ন প্রাণীটিকে ধরে খাঁচায় বন্দি করে রাখে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে প্রাণীটি উদ্ধার করে। ইউএনও'র নির্দেশনায় সেদিন রাতেই হাজারিখিল বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে অবমুক্ত করেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা।
এর আগেও, ফটিকছড়িতে বেশ কয়েকটি লজ্জাবতী বানর উদ্ধার হয়। জানা গেছে, লজ্জাবতী বানর একটি নিশাচর প্রাণী। এরা দিনের বেলা হাত ও পা দিয়ে মুখ ঢেকে বলের মতো গোল হয়ে গাছে লুকিয়ে থাকে, যাতে আলো না লাগে। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও লাউস পর্যন্ত এদের বিচরণ। লজ্জাবতী বানরের ইংরেজি নাম বেঙ্গল স্লো লরিস। বাংলাদেশের সিলেট ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন বনে মাঝেমধ্যে বানরটিকে দেখতে পাওয়া যায়। প্রকৃতি ও প্রাণী সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক সংস্থা-আইইউসিএন লজ্জাবতী বানরকে সংকটাপন্ন প্রাণী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনের তফসিল-১ অনুসারে সংরক্ষিত প্রাণী লজ্জাবতী বানর।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) লজ্জাবতী বানরকে সংকটাপন্ন প্রাণী হিসেবে লাল তালিকাভুক্ত করেছে। পরিবেশকর্মীরা বলছেন, বনজঙ্গল ও গাছপালা উজাড় হওয়ায় প্রায় সময় খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে বেরিয়ে এসে স্থানীয়দের হাতে লজ্জাবতী বানর ধরা পড়ে প্রাণ হারাচ্ছে। এসব বন্যপ্রাণীকে রক্ষা করতে হলে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি স্থানীয়দেরও সচেতন করতে হবে।