ফটিকছড়ি উপজেলার ভূজপুর থানাধীন পশ্চিম খৈয়া এলাকায় হযরত শাহ সুন্দর সাহেব আউলিয়া (রঃ) ১ম তম বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলের নামে মাজার সৃষ্টির পায়তারা করছে পশ্চিম খৈয়া ও জঙ্গল খৈয়া যৌথ সমাজ যুব কল্যান পরিষদের নাম ভাঙ্গিয়ে একটি স্বার্থন্বেষী মহল।
আগামী ৭ জানুয়ারি (শুক্রবার) পশ্চিম খৈয়া এলাকায় দরগার ভিটা নামক স্থানে সারাদিন ব্যাপী ওয়াজ মাহফিলের প্রচার প্রচারণা করে আসছে তারা। স্থানীয় বদিউল আলম নামের এক ব্যক্তি ও তার বেশ কয়েকজন সহযোগী ওয়াজ মাহফিলের নাম দিয়ে বিভিন্ন জন থেকে চাঁদা উত্তোলন ও দাওয়াতি কার্যক্রমও পরিচালনা করেছেন। তারা লিফলেট, ব্যানার, মাইকিং ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার প্রচারণার কার্যক্রমও সেরেছেন। মাহফিলে ভূজপুর ইউপির চেয়ারম্যান ইব্রাহিম তালুকদার, স্থানীয় মাদ্রাসার পরিচালক মুফতি তাওহিদুল ইসলাম, ইউপি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বেলাল উদ্দিনসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তির নাম লিফলেট ও ব্যানারে ব্যবহার করেছেন এই মহলটি।
এদিকে মাহফিলের নাম ভাঙ্গিয়ে মাজার সৃষ্টির পায়তারা বুঝতে পেরে এক পক্ষ ভূজপুর থানায় মৌখিক অভিযোগ করলে ৫ ডিসেম্বর দুপুরে এস আই রাশেদ ও সঙ্গীয় ফোর্স গিয়ে মাহফিলটি বন্ধ করে দেন। এসময় এস আই রাশেদ বলেন, এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বিগ্ন ঘটার আশংকায় মাহফিল বন্ধ করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফিল করার অনুমতি দিলে তবেই তা করা সম্ভব।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পশ্চিম খৈয়া এলাকায় সুন্দর শাহ (রঃ) নামের কোন মাজার নেই। ব্যানারে দরগাহ ভিটা উল্লেখ করলেও সেখানে ধানি জমির পাশে উঁচু স্থানে একটি গাছ বাগান দেখা যায়। স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি গাছ বাগানটি মালিকানাধিন ভিটা বলে জানান। বাগানে কোন ধরনের মাজার বা কবরের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়নি।
এ ব্যাপারে মাহফিল কমিটির প্রধান বদিউল আলম দৈনিক সাঙ্গু'কে বলেন, হযরত সুন্দর শাহ (রঃ) আউলিয়া এর ইছালে সওয়াবের জন্য এই মাহফিলের আয়োজন করেছি। আমরা চেয়েছি সবাই আমাদের সহযোগীতা করে মাহফিলকে সফল করবে। কিন্ত তারা একটি মাজারের ছবি ফেইসবুকে দিয়ে মাহফিলকে ভিন্নভাবে প্রবাবিত করেছে। পুলিশ দিয়ে মাহফিল বন্ধ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে এই মাহফিল সফল করা হবে।
বদিউল আলম দাবি করেন, দরগাহ ভিটায় হযরত সুন্দর শাহ (রঃ) এসে বসেছিলেন। তিনি এখানে নিয়মিত আসতেন বলে জেনে এসেছি। প্রতিবছর ছোট করে তার ফাতেহা শরীফ উদযাপন করি। এবার চেয়েছি বড় করে করতে। আকিদাগত ভিন্নতার কারণে তারা মাহফিলের বিরোধিতা করছে।
মাহফিলের অতিথি ও স্থানীয় দ্বীনি প্রতিষ্ঠান সুলতানিয়া আজিজুল উলুম খৈয়া মাদ্রাসার পরিচালক মুফতি তাওহিদুল ইসলাম বলেন, একটা মাজার সৃষ্টির উদ্দেশ্য দেয়া মাহফিলে যে আমাকে অতিথি করে ব্যানার ও লিফলেট বানানো হয়েছে তা আমি জানিনা। এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট করতে ও শিরক বেদাত সৃষ্টির জন্য মাহফিলের আয়োজন করেছে তারা। আমরা অলি আউলিয়া, ওয়াজ মাহফিলের বিরোধী নই। শিরক বেদাত করতে মাজার সৃষ্টি করা হলে এটি মেনে নেয়া যায়না।
বেলাল উদ্দিন নামের মাহফিলের এক অতিথি বলেন, মাহফিলে আমাকে দাওয়াত করেছেন। তবে সুন্দর শাহ (রঃ) এর ফাতেহার বিষয়টি অবগত করেননি। ভূজপুরে বিভিন্ন আকিদার লোক আছে তবে দন্ধ নেই। হালদা নদীর পাড়ে সুন্দর শাহ এর একটি সিলা (বৈঠক খানা) আছে। আরেকটি সিলার( বৈঠক খানা) প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা। তারা বিষয়টি অবগত করলে অন্তত একটা পরামর্শ দেয়া যেত।
ভূজপুর ওলামা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাওলানা নিজাম উদ্দিন বলেন, ভূজপুরে সুন্দর শাহ নামের কোন আউলিয়া নেই। যারা এই মাহফিল আয়োজন করেছে তা সম্পূর্ণ ব্যবসার মনমানসিকতায় করেছে। শিরক বেদাত সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে যারা এই মাহফিল আয়োজন করেছে বা করেছেন ভূজপুর ওলামায়ে কেরামের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও ঘৃনা জানাচ্ছি। তিনি বলেন, মাহফিলের নাম ভাঙ্গিয়ে মাজার সৃষ্টির যে পায়তারা করছে তার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা চেয়ারম্যান ও এমপি মহোদয়ের সুদৃষ্টি কামণা করছি এবং ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করছি।
ভূজপুর ইউপির চেয়ারম্যান ইব্রাহিম তালুকদার দৈনিক সাঙ্গু'কে বলেন, এটি মাহফিলের নাম দিয়ে মাজার সৃষ্টির চেষ্টা মাত্র। আমাকে অতিথি করেছে মাহফিলের কথা বলে। তারা যে ব্যানার করেছে তা আমি অবগত নই। তাদের ডেকে আজ(৫ ডিসেম্বর) নিষেধ করে দিয়েছি।