আজ শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১

প্রশান্তি বিষয়ে কোরআনের আয়াত

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ২৮ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:২৫:০০ পূর্বাহ্ন | ধর্ম

মাঝেমধ্যে আমাদের মনে অশান্তি লাগে। মনে হয় বিপদাপদ আর কষ্ট-ক্লেশ আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। কোরআনে কারিমে আল্লাহ তাআলা সাকিনা বা প্রশান্তির কথা বলেছেন। সাকিনা অর্থ প্রশান্তি, ধীরতা, স্থিরতা আর সান্ত্বনা। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন জায়গায় মোট ছয়বার এই সাকিনার বর্ণনা করেছেন। ইবনে তাইমিয়া (রহ.) যখনই অস্বস্তি অনুভব করতেন তখনই এই আয়াতগুলো তিলাওয়াত করতেন।

তিনি একবার মারাত্মক এক ব্যাধিতে আক্রান্ত হন। যার কারণে দেহ-শরীর-মন সব কিছুই যেন নিস্তেজ হয়ে আসছে। যখন প্রচণ্ড রূপ ধারণ করল, তখন তিনি তাঁর নিকটাত্মীয় এবং যারা আশপাশে ছিল তাদের বলল যে তোমরা আমার কাছে সাকিনার আয়াতগুলো তিলাওয়াত করো। এর পরই তাঁর অবস্থা পরিবর্তন হলো। এমন হলো যে তাঁর কোনো অসুস্থতাই ছিল না। ইবনুল কাইয়ুম (রহ.) বলেন, আমিও এই আয়াতগুলো পড়ে অভিজ্ঞতা লাভ করেছি, যখনই আমার অন্তরে কোনো পীড়া অনুভব করেছি তখন এই আয়াতগুলো পড়ে ফলাফল পেয়েছি। (মাদারিজুস সালেকিন : ২/৩৭৬)


আয়াতগুলো হলো,

 

১.  ‘তাদেরকে তাদের নবী আরো বলল, তালুতের বাদশাহির আলামত এই যে তোমাদের কাছে সেই সিন্দুক (ফিরে) আসবে, যার ভেতর তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে প্রশান্তির উপকরণ এবং মুসা ও হারুন যা কিছু রেখে গেছে তার কিছু অবশেষ আছে। ফেরেশতারা সেটি বয়ে আনবে। তোমরা মুমিন হয়ে থাকলে তার মধ্যে তোমাদের জন্য অনেক বড় নিদর্শন আছে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৪৮)

২.  ‘অতঃপর আল্লাহ নিজের পক্ষ থেকে তাঁর রাসুল ও মুমিনদের প্রতি প্রশান্তি নাজিল করলেন এবং এমন এক বাহিনী অবতীর্ণ করলেন, যা তোমরা দেখতে পাওনি। আর যারা কুফর অবলম্বন করেছিল, আল্লাহ তাদের শাস্তি দিলেন। আর এটাই কাফিরদের কর্মফল।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ২৬)


৩.  ‘তোমরা যদি তার (অর্থাৎ নবী (সা.)-এর সাহায্য না করো, তবে (তাতে তাঁর কোনো ক্ষতি নেই। কেননা) আল্লাহ তো সেই সময়ও তার সাহায্য করেছিলেন, যখন কাফেররা তাকে (মক্কা থেকে) বের করে দিয়েছিল এবং তখন সে ছিল দুজনের দ্বিতীয়জন, যখন তারা উভয়ে গুহার মধ্যে ছিল, তখন সে তার সঙ্গীকে বলেছিল, চিন্তা করো না, আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন। সুতরাং আল্লাহ তার প্রতি নিজের পক্ষ থেকে প্রশান্তি বর্ষণ করলেন এবং এমন বাহিনী দ্বারা তার সাহায্য করলেন, যা তোমরা দেখোনি এবং কাফেরদের কথাকে হেয় করে দিলেন। বস্তুত আল্লাহর কথাই সমুচ্চ। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৪০)

৪.  ‘তিনিই সেই সত্তা, যিনি ঈমানদারদের অন্তরে প্রশান্তি অবতীর্ণ করেছেন, যাতে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পায় তাদের (পূর্ব) ঈমানের সঙ্গে। আর আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সকল বাহিনী আল্লাহরই এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাবান।’ (সুরা : ফাতহ, আয়াত : ৪)

৫.  ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের প্রতি খুশি হয়েছেন, যখন তারা গাছের নিচে তোমার কাছে বায়আত গ্রহণ করছিল। তাদের অন্তরে যা কিছু ছিল সে সম্পর্কেও তিনি অবগত ছিলেন। তাই তিনি তাদের ওপর অবতীর্ণ করলেন প্রশান্তি এবং পুরস্কারস্বরূপ তাদের দান করলেন আসন্ন বিজয়।’ (সুরা : ফাতহ, আয়াত : ১৮)

৬.  ‘কাফেররা যখন তাদের অন্তরে অহমিকাকে স্থান দিল যা ছিল জাহেলি যুগের অহমিকা, তখন আল্লাহ তাঁর রাসুল ও মুসলিমদের ওপর নিজ প্রশান্তি বর্ষণ করলেন এবং তাদের তাকওয়ার বিষয়ে স্থিত করে রাখলেন আর তারা তো এরই বেশি হকদার ও এর উপযুক্ত ছিল। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।’ (সুরা : ফাতহ, আয়াত : ২৬)

আল্লাহ তাআলা মুসলমানের দুঃখ-কষ্ট আর পেরেশানির সময় এসব আয়াত নাজিল করেছেন। সেই দুঃসময়ের কথা স্মরণ করিয়েছেন। হিজরত প্রাক্কালের কথা, হুদাইবিয়া ও হুনাইনের যুদ্ধের কথা ইত্যাদি বর্ণনা করেছেন এসব আয়াতে। কেউ যদি এসব আয়াত বারবার তিলাওয়াত করে, আশা করা যায়, আল্লাহ তাআলা কোরআনের বরকতে তার অন্তরকে প্রশান্ত করবেন, ইনশাআল্লাহ।