আজ শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪, ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ওয়ার্ড নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ

দোহাজারী পৌরসভা নির্বাচনে বাধা নেই

মোঃ আয়ুব মিয়াজী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ : | প্রকাশের সময় : সোমবার ১২ ডিসেম্বর ২০২২ ০১:০৫:০০ অপরাহ্ন | দক্ষিণ চট্টগ্রাম

 

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলাধীন দোহাজারী পৌরসভা ওয়ার্ডের সীমানা নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। গত রবিবার (৪ ডিসেম্বর) স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপ-সচিব ফারজানা মান্নান এ গেজেট প্রকাশ করেন। এতে দোহাজারী পৌরসভার ৯টি সাধারণ ও ৩টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড নির্ধারণ করা হয়েছে। সাধারণ ওয়ার্ড নির্ধারণে বিলুপ্ত দোহাজারী ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ড ঠিক রেখে সাতবাড়িয়ার ২টি ওয়ার্ড-এ সংযোজন করা হয়েছে। ফলে দোহাজারী পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আর কোনো বাধা থাকল না। এর আগে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় বিভাগ ২০১৫ সালের ২৪ আগস্ট দোহাজরী পৌরসভা গঠনের লক্ষ্যে দোহাজারী ইউনিয়ন ও সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের হাছনদন্ডী মৌজার ২টি ওয়ার্ড নিয়ে শহর এলাকা ঘোষণার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন এবং এরপর ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর উল্লেখিত এলাকাসমূহকে শহর এলাকা ঘোষণা করে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সহকারী সচিব এ.কেএম আনিছুজ্জামান প্রজ্ঞাপন জারি করেন। উক্ত বিষয়ে পৌরসভায় উন্নীত করনের সিদ্ধান্ত ২০১৭ সালের ৯ জানুয়ারী জাতীয় প্রশাসনিক সংস্কার কমিটি (নিকার)’র সভায় অনুমোদন হয়েছিল। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এর স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে পরিপত্র জারির মাধ্যমে ২০১৭ সালের ১১ মে পৌরসভা বাস্তবায়নের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছিল। এরপর তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে পৌর প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করে অদ্যাবধি পৌর কার্যক্রম চলে আসছে। পৌরসভার ওয়ার্ড বিভক্তির কাজ সম্পন্ন না হওয়া এবং মামলা থাকায় নির্বাচন করা যাচ্ছিল না। বিভিন্ন প্রকল্পের জনবল না থাকা ও প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করতে না পারায় পৌর এলাকার উন্নয়ন বাধা গ্রস্থ হচ্ছিল। কিন্তু দোহাজারী পৌরসভা গঠনের পর বছরের পর বছর পার হয়ে গেলেও নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনেকদিন কোনো উদ্যোগ ছিল না। এই সময়ের মধ্যে পৌর প্রশাসক ও পৌর কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, আর্থিক অনিয়ম ও বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ উঠলে মন্ত্রণালয় তদন্ত করে দ্রুত সীমানা নির্ধারণ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। প্রশাসককে দ্রুত সময়ে পৌরসভার সীমানা নির্ধারণ এবং ওয়ার্ড বিভক্তির কাজ সম্পন্ন করে নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্য মন্ত্রণালয়কে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা আসে এবং এরই সূত্র ধরে মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য চিঠি দেয়। উল্লেখ্য জনগণের অধিকারের দলিল দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশ গ্রহণ নিশ্চিত হবে এবং ৫৯ অনুচ্ছেদের ১ দফা অনুসারে আইনানুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠান সমূহের উপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক একাংশের স্থানীয় শাসনের ভার প্রদান করা হওয়ার কথা আছে। স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন-২০০৯ এর ৬ ধারায় বলা আছে পৌরসভায় মেয়র, নির্ধারিত সংখ্যক ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত নির্ধারিত সংখ্যক কাউন্সিলর প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটে নির্বাচিত হবেন। ২০ ধারা অনুসারে পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলরের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, পৌরসভা প্রথমবার গঠনের ক্ষেত্রে ১৮০ দিনের মধ্যে। নির্বাচিত প্রতিনিধির সমন্বয়ে পৌরসভা গঠনের জন্য সংবিধানিক ও মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগে দায়েরী কুদরত-ই-ইলাহি পনির ও আহসান উল্লাহ বনাম বাংলাদেশ সরকার মামলার (নম্বর- ৩ ও ৪/১৯৯২ এবং ১১৮/১৯৯২ প্রকাশিত ৪৪ ডিএলআর (এডি) ১৯৯২) রায় এর নির্দেশ এবং পৌরসভা গঠনের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আইনী বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘ ৫ বছরের বেশী সময় অতিক্রম হলেও দোহাজারী পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন-২০০৯ এর ৪২ (১) ধারায় উল্লেখ আছে কোন শহর এলাকাকে পৌর এলাকা ঘোষণার পর পৌরসভার কার্যবলী সম্পাদনের জন্য সরকার একজন উপযুক্ত কর্মকর্তাকে প্রশাসক নিয়োগ করবে। ৪ উপধারা অনুসারে এই আইনে যা কিছু থাকুক না কেন, উপধারা (১) এর অধীন নিযুক্ত পৌর প্রশাসক কোন ক্রমেই একের অধিক বার বা ১৮০ দিনের অধিক সময় কাল দায়িত্বে থাকতে পারবে না। পৌরসভায় ১৮০ দিনের অধিক কাল দায়িত্ব পালন অবৈধ হওয়া সত্ত্বেও এতদিন দোহাজারী পৌরসভায় পৌর প্রশাসক বে-আইনীভাবে অদ্য পর্যন্ত কর্মকান্ড চালিয়ে আসছেন মনে করতেছে ভুক্তভোগী সাধারণ জনগণ। নির্বাচিত প্রতিনিধি না থাকায় অবৈধ প্রশাসকের হাতে এলাকার নাগরিকগণ চরম হয়রানী ও ভোগান্তির শিকার হয়ে নানানভাবে বিক্ষোভ ও অভিযোগ প্রদান শুরু করেন। পৌরবাসী মোঃ আলাউদ্দিন নামক একজন বলেন- কোন সরকারি কর্মকর্তা টাকা খরচ করে রাজনীতি নির্ভর নির্বাচন করলে পৌর মেয়র নির্বাচিত হওয়া আকাশ কুসুম কল্পনার মত। তাই সরকারি কর্মকর্তারা নিজ দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত থাকেন। পৌরবাসীর সেবার দিক বিবেচনা করা তার কর্তব্য নয়। বৈধ ব্যবসা ও সৎ আয়ের উপর নির্ভরশীল নির্বাচিত স্থানীয় জন প্রতিনিধি আসলে এলাকার উন্নয়ন ও সেবা বৃদ্ধি পাবে আশা করি। তিনি আরোও বলেন আমাদের সাংসদ আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম চৌধুরীর প্রশাসনিক তদারকি ও সার্বিক সহযোগিতায় নির্বাচন সংক্রান্ত সকল বাধা অতিক্রম করে খুব দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে স্থানীয় জন প্রনিতিধি পাওয়ার প্রার্থনা করি। এই ব্যাপারে জানতে চাইলে জনাব মিনহাজুল ইসলাম চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাচন অফিসার জানান- গেজেট প্রকাশের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা আছে এবং এই কাজটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছি। সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর হোসনেকে এই ব্যাপারে জানার ফোন করলে- তিনি ইসিতে মিটিং-এ আছেন বলে ফোন কেটে দেন।