আজ বৃহস্পতিবার ৯ মে ২০২৪, ২৫শে বৈশাখ ১৪৩১
নাইক্ষ্যংছড়ির পাহাড়ি প্রকৃতিতে ফিরে এসেছে প্রশান্তির ছোঁয়া

দূর দূরান্ত থেকে অবলোকন করতে ছুটে আসছে মানুষ

মোঃ ইফসান খান ইমন, নাইক্ষ‍্যংছড়ি: | প্রকাশের সময় : সোমবার ২ অক্টোবর ২০২৩ ০৫:২৪:০০ অপরাহ্ন | কৃষি ও প্রকৃতি

শরতে প্রাণ ফিরেছে নাইক্ষ‍্যংছড়ির পাহাড়ের প্রকৃতিতে এতে প্রশান্তির ছোঁয়া লেগেছে সর্বত্র।পাহাড়ি নেতারা জানান,পার্বত্যাঞ্চলে বর্তমানে দুর্বৃত্তায়ন চালাচ্ছে বনখেকো-বনদস্যূরা। এ কারণে প্রায় সারা বছর সব কিছু শুকিয়ে চৌচির হয়ে যায়। তখন ওষ্টগত হয় প্রাণী জগত। পাহাড়ে অধিবাসীদের মধ্যে নানা সংকট দেখা দেয় তখন।

পাহাড়িদের নেতা সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য চামড়া  মার্ম বলেন,গ্রীষ্মকাল,হেমন্ত,শীত ও বসন্ত কালে থাকে পাহাড়ে উষ্ণতা।পাহাড়-ঝর্ণা,

খাল-বিল সবই থাকে শুকনো। প্রকৃতিতে ভেসে আসে কান্নার আমোঘ আওয়াজ।

পানি থাকে না,পানির সব উৎস শুকিয়ে যায়। মানুষের কষ্টের সীমা থাকে না।

কিন্ত এখন শুরু হয়েছে শরত। 

তিনি বলেন,এ শরতে মানুষ স্বস্তি ফিরে পেয়েছে পানির পর্যাপ্ততায়। 

বর্ষা ও শরতের বৃষ্টির পানিতে সেই মরা নদীতে প্রাণ ফিরে আসে। হেমন্তে কিছুটা স্বস্তি থাকে। বাকী ৬ মাস থাকে হাহাকার।

বর্তমানে চলছে শরতকাল।

আর তারই ধারাবাহিকতায় পুরো নাইক্ষ্যংছড়ির পাহাড় যেন প্রকৃতির অপরূপ সুন্দরের ডানা মেলা বসেছে। 

প্রশান্তির ছোঁয়া সর্বত্র হাতছানি দিচ্ছে। পাহাড়ি এই অপরুপ দৃশ্য  দেখতে প্রতিদিন বাইরের এলাকা থেকে শত শত নারী পুরুষ আসছে অবলোকন করতে।

সূত্র মতে, ৩৩৫.৭৯ বর্গ কিলোমিটার বনভূমিসহ নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার আয়তন ৪৬৩.৬১ বর্গ কিলোমিটার। উপজেলার ১৭ টি মৌজায় পাড়া-গ্রাম  রয়েছে ২২৬ টি। উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার।

বর্তমানে এ উপজেলায় প্রচুর  উন্নয়ন হয়েছে।

অপরাপর সূত্র গুলো জানান,পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দুর্গম জনপদে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের বসবাস। তাদের জীবনযাত্রা চলে পাহাড়ে জুম ধানের উপর। তাছাড়া সেসব জনগোষ্ঠিদের একমাত্র প্রধান সমস্যা পানি সংকট। গ্রীষ্মকাল আসলে কয়েকমাস পানির সংকটে ভুগতে হয় তাদের। বান্দরবানের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কাটা, গাছ নিধন, বালু ও পাথর উত্তোলনের কারণে এমন দুর্ভোগ যেন সারা বছরের চিত্র। ফলে দিনদিন নদী-নালা, ঝিরি-ঝর্ণা ও শাখা প্রশাখা নদীর ঝিড়িগুলো শুকিয়ে দেখা দেয় বিশুদ্ধ পানির সংকট। এতে পানির হাহাকারে থাকতে হয় পাহাড়ের দুর্গম বসবাসরত মানুষদের। কিন্তু শরতে এসে পালটে গেছে পাহাড়ের প্রকৃতির চিত্র। শুকনো মৌসুমে যেসব মরা ছিল তা এখন ঝিরি-ঝর্ণায় পানি ঝড়ছে অবিরাম। সহজেই বিশুদ্ধ পানি পাওয়াই দুর্গম জনপদের মানুষ এখন আছে বেশ স্বস্তিতে।

দুর্গম পাহাড়ি জনগোষ্ঠিরা জানান, নাইক্ষ্যংছড়িতে বছরে অন্তত চারমাস পানি সঙ্কটে পড়তে হয় প্রকট আকারে । সেই ৬ মাস তীব্র গরমে ঝিরিতে পানি শুকিয়ে যায়। বিশুদ্ধ পানি খুজতে মাইলে পর মাইল হাটঁতে হয়। তবুও বিশুদ্ধ পানি পাওয়া খুবই কঠিন। কিন্তু এখন বর্ষাকালে এসে বিশুদ্ধ পানি পাওয়াতে খুশি সেসব দুর্গম জনপদের মানুষ। যেসব ঝিরি মরা ছিল সেসব ঝিরিতে ঝড়ছে অঝোরে পানি । এখন এসব পানি সংরক্ষণ করার সময়। এই পানি সরক্ষণ করা গেলে বছরে অনান্য সময়েও সঙ্কট কাটানো সম্ভব। তাছাড়া নিজদের মধ্যে সচেতনতা আনা জরুরি বলে মনে করছেন দুর্গম পাহাড়ের জনগোষ্ঠিরা।

জানা গেছে, পাহাড়ি অঞ্চলে ঝিরি ও নদীর পানি সঞ্চয়ের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে পাহাড়ি বন ও পাথর। প্রাকৃতিকভাবে তৈরিকৃত এই পাথরগুলো প্রাকৃতিক উপায়ে পানি সংরক্ষণ ও সঞ্চয় করে থাকে। আর এই সঞ্চয়কৃত পানি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীরা দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করে। কিন্তু বর্তমানে অবাধে পাথর উত্তোলনের কারণে পানি সঞ্চয়ের এ প্রাকৃতিক মাধ্যমগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলস্বরূপ নদী ও ঝিরিগুলো মরে যাওয়ার মত অবস্থা । বান্দরবানের কয়েকটি উপজেলার গভীর জঙ্গলের ঝিড়ি থেকে প্রতিদিন পাথর তোলা হচ্ছে। এর ফলে ইতোমধ্যে কয়েকশ ঝিরিরে পানির উৎস কমে যায়। কিন্তু শরতে এসে সেসব ঝিরি এখন প্রাণ ফিরে পেয়েছে ।বর্তমানে পাহাড়ের আঁকা বাঁকা ঝিরিগুলোতে শুধু পানির তৈতুং শব্দের অবিরাম। এখন পানি সংরক্ষণের পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে সচেনতা না থাকলে শুকনো মৌসুমে পড়তে হবে পানির তীব্র সঙ্কটে ।

নাইক্ষ্যংছড়ির প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেশিরভাগই বসবাস করেন ম্রো, বম, ত্রিপুরা, খুমী, চাকমা,তচঙ্গ্যা। বছরের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত অন্তত এই চার মাস পানি সঙ্কটে থাকতে হয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠিদের। তীব্র গরমে পানি স্তর নিছে নেমে যাওয়ার ফলে পানির জন্য হাহাকারে পড়েন হাজার হাজার পাহাড়ে বসবাসকারীরা পেলেও সেটি আবার বিশুদ্ধ নয়। কিন্তু এখন পানি পাওয়া যাচ্ছে প্রত্যেক ঝিড়ি ও জঙ্গলে,বর্তমানের পানি গুলো সরক্ষণ করা গেলে বছরে ঐ চার মাস পানি সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব । তাছাড়া প্রত্যেক গ্রামে পানি উৎসের স্থানে জুম চাষ ও সেগুন গাছ লাগানো যাবে না। বরং পানির উৎস আরো বাড়াতে হলে ঝিরির পাশে কলা গাছ লাগানো প্রয়োজন। আর নিজেদের মধ্যে ব‍্যাপক সচেতনতা দরকার।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান মংহ্লা ওয়াই মার্মা জানান,বছরে ৬ মাস পাহাড়ের প্রকৃতি থাকে শুষ্ক। সর্বত্র হাহাকার করে। 

আর এ শরতে নেমে আসে  স্বস্তি।

তবে তার দাবী,নাইক্ষ্যংছড়িতে পাহাড় কাটা,বননিধন ও মাটিকাটা বন্ধ করা খুবই জরুরী। নচেৎ  পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনবে।